শ্রাবণের একটানা বর্ষণে খালবিল, মাঠঘাট অথৈ জলে টইটম্বুর। কদিন ঘরের বাহির হবার জো নেই। ঘন কালাে মেঘ জমাট বেঁধে কুণ্ডলী পাকিয়ে বিগবিদিগ ছুটোছুটি করছে। দমকা বাতাসের সঙ্গে মাঝে মাঝে যন্ত্রপাত; শিলাবৃষ্টির ফাঁকে ভেসে আসছে গরুর হাম্বা হাম্বা রব, ছাগলের একটানা বা-বা শব্দ। ভেক দলের অবিশ্রান্ত কলরবে নির্জন পরিবেশ অনেকটা সরগরম। ভােরের আবছা আলােয় পূর্বাকাশ ক্রমশ ফর্সা হয়ে ওঠে। | কেদারখালীর খেয়াঘাটে নসরউদ্দীন মাঝির নৌকা বাঁধা। গত রাতে ছােট ছেলে মনরউদ্দীনকে সাথে নিয়ে ভিজতে ভিজতে ঘাটে আসে। মনে আশা—যদি দু'চার জনকে পারাপার করতে পারে তবে টু-পাইস হাতে আসবে। ঘরে এক মুঠো চাল নেই। তিন দিন হলাে ভাতের সাথে দেখা নেই। গত রাতেও কচু সেদ্ধ, খেসারি ভাজা খেয়ে ঘাটে এসেছিল। ছােট ছেলে মনরউদ্দীন-মইন্যাটা ক্ষুধায় ছটফট করছে। সারাদিন বউ-বাচ্চার ঘ্যানর-ঘ্যানর ভাল্লাগেনা। নসর কী করবে! কামাইয়ের লােক একা সে। সংসারে সদস্য সংখ্যা সর্বসাকুল্যে নয় জন। চার ছেলে জামালউদ্দীন, কলিমউদ্দীন, রহিমউদ্দীন, মনরউদ্দীন আর একমাত্র মেয়ে শােভা। মা মনিরা বেগম, বাবা আসিরউদ্দীন মাতবর। বয়স হলেও তারা বেশ শক্ত-সামর্থ্য। ব্রিটিশ রাজত্বে বাবা ব্যবসায় করতেন। বড় বড় সাম্পান নৌকা ভর্তি করে বাবা আসির মাঝি চাটগা-খুলনা-কলিকাতামাদ্রাজ বন্দরে কালাই, সরিষা, মসুর, তৈল, টিন, কাঠ আনা-নেওয়া করতেন। নিজেদের কয়েকটা সাম্পান ছিল। নসরউদ্দীন নিজে বাবার সঙ্গে কতবার পদ্মা-মেঘনা পাড়ি দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। পদ্মায় সাম্পান নােঙর করে ভাজা ও সরিষাবাটা ইলিশ, আহা কি আয়েশেই না (সংক্ষিপ্ত……)