বহু বছর আগে চৈত্র সংক্রান্তির এক রাতে কুরান মৃধা ছেলের হাতে লাঠি তুলে দিয়ে বলেছিল শক্ত আতে লাডি দর’ লাডি খেলা হিক্কা রাক, এইডার মাইরপ্যাচ বালা কইরা বুজতে হইবে। আর মনে রাইতে হইবে এইডা খালি খেলা , এই লাডি তােরে ভাত কাপুড় যােগাইবে হারা জীবন'। বাপের কথা গুলাে মন্ত্রশক্তির মতাে কাজ করেছিল ছেলে করিমের ওপর। অভিষেকের আয়ােজন ছিল বেশ জাঁকালাে। জোতদার আনু খা সে আয়ােজন করেছিল। হাজার বিঘা জোত জমির মালিক, তার দাপট শক্তির প্রদর্শনী না করলে চলে না। নিজের বাহিনী, আশে পাশের চরগুলাের নামকরা সব লাঠিয়ালকে দাওয়াত করে আনা হয়েছিল, আর তাদের গরু খাসি জবাই করে মেহমানদারি করেছিল আনু খা। ভয় পাইয়ে দেবার মতােই চেহারা ছিল কুরান মৃধার যেনবা বদরাগী যাড়! ভাটার মতাে দুটো চোখ থেকে আগুনের ফুলকি ঝরতাে। হাত দুটো ছিল শাবলের মতাে শক্ত। বড় মেজাজী ছিল মানুষটা, বাজখাই গলায় যাকে যে আদেশ করত, তাকে তা শুনতে হতাে। তবে মানুষটার ভেতরের খবর জানত খুব কম লােক। কুরান মৃধা চর দখলের উনচল্লিশটি লড়াইয়ে অংশ নেয়; আর তার ত্রিশটিতেই সে নিভে নেতত্ব দেয়। চল্লিশ পুরাে না হার দুঃখ তার জীবনের বড় দুঃখ ছিল। খুনের দায়ে সে তিনবার জেলে যায়, আর প্রতিবারই বের হয়ে আসে বিজয়ীর বেশে। শেষবার জেল থেকে ফিরে আর লাঠি ধরবে না বলে ঘােষণা দেয়, সে তখন অন্য মানুষ। সর্দারের রক্তে ভাটার টান ধরেছে এমন কিছুই ভেবেছিল লােকজন। ছেলে করিম শুধু জানত বাপের এই পরিবর্তনের কারণ। কুরান মৃধা শেষবার জেল থেকে ফিরে ছেলেকে সাথে নিয়ে মনিবের সাথে দেখা করতে যায়। সর্দারকে দেখে খুশি হয়েছিল আনু খাঁ। কুশলাদি বিনিময়ের পরে কুরান মৃধা জোর হাতে কিছু নিবেদন করার অনুমতি চায়। আনু খা অনুমতি দিলে সে মনিবের পায়ের কাছে লাঠি সপে দিয়ে জানায়, ‘আইজ তন মাের পােলায় আর লাড়ি ধইরবে না । আনু খ বিস্মিত আর বিরক্ত হয়েছিল। পর মুহুর্তে ক্ষেপে উঠেছিল; হারামজাদা, তােরে খাওয়াই, পরাই বাঁচায়া রাইখলাম হেইডার বদলে তুই এই