“কবি" বইটির প্রথম অংশের কিছু কথাঃ
এক
শুধু দস্তুরমত একটা বিস্ময়কর ঘটনাই নয়, রীতিমত এক সংঘটন। চোর ডাকাত বংশের ছেলে হঠাৎ কবি হইয়া গেল।
নজির অবশ্য আছে বটে,—দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ। কিন্তু সেটা ভগবৎ-লীলার অঙ্গ। মককে যিনি বাচালে পরিণত করেন, পঙ্গ যাহার ইচ্ছায় গিরি লঙ্ঘন করিতে পারে, সেই পরমানন্দ মাধবের ইচ্ছায় দৈত্যকুলে প্রহ্লাদের জন্ম সম্ভবপর হইয়াছিল; রামায়নের কবি বাল্মীকি ডাকাত ছিলেন বটে, তবে তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণের ছেলে। সেও ভগবৎ-লীলা। কিন্তু কুখ্যাত অপরাধপ্রবণ ডােমবংশজাত সন্তানের অকস্মাৎ কবিরূপে আত্মপ্রকাশকে ভগবৎ-লীলা বলা যায় কি না। সে বিষয়ে কোনাে শাস্ত্রীয় নজির নাই। বলিতে গেলে গা ছমছম করে। সুতরাং এটাকে লােকে একটা বিস্ময় বলিয়াই মানিয়া লইল। এবং বিস্মিতও হইল।
গ্রামের ভদ্রজনেরা সত্যই বলিল—এ একটা বিস্ময়! রীতিমত! অশিক্ষিত হরিজনরা বলিল—নেতাইচরণ তাক লাগিয়ে দিলে রে বাবা!
যে বংশে নিতাইচরণের জন্ম, সে বংশটি হিন্দু সমাজের প্রায় পতিততম স্তরের অন্তর্গত ডােমবংশ, তবে শহর অঞ্চলে ডােম বলিতে যে স্তরকে বুঝায় ইহারা সে স্তরের নয়। এ ডােমেরা বাংলার বিখ্যাত লাঠিয়াল—প্রাচীনকাল হইতেই বাহুবলের জন্য ইহারা ইতিহাসবিখ্যাত। ইহাদের উপাধি হইল বীরবংশী.।. নবাবী পল্টনে নাকি একদা বীরবংশীরা বীরত্বে বিখ্যাত ছিল। কোম্পানির আমলে নবাবী আশ্রয়চ্যুত হইয়া দুর্ধর্ষ যুদ্ধব্যবসায়ীর দল পরিণত হয় ডাকাতে।
পুলিশের ইতিহাস ডােমবংশের কীর্তিকলাপে পরিপূর্ণ। এই গ্রামের ডােম পরিবারগুলির প্রত্যেকের রক্তে রক্তে এখনও সেই ধারা প্রবাহিত। পুলিশ কঠিন বাঁধ দিয়াছে সে প্রবাহের মুখে—লােহা দিয়া বাঁধিয়াছে। হাতকড়ি, লােহার গরাদে দেওয়া ফটক, ডাণ্ডাবেড়ীর লােহা প্রত্যক্ষ; এ ছাড়া ফৌজদারী । দণ্ডবিধির আইনও লােহার আইন। কিন্তু তবু বাছিয়া বাছিয়া ছিদ্রপথে অথবা অন্তরদেশে ফল্গুধারার মত নিঃশব্দে অধীর গতিতে আজও সে ধারা বহিয়া চলিয়াছে।
নিতাইয়ের মামা গৌর বীরবংশী—অথবা গৌর ডােম এ অঞ্চলে বিখ্যাত ডাকাত। এই বৎসরখানেক পূর্বেই সে পাঁচ বৎসর কালাপানি’ অর্থাৎ আন্দোমানে থাকিয়া দণ্ড ভােগ করিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিয়াছে। নিতাইয়ের মাতামহ—গৌরের বাপ শম্ভু বীরবংশী আন্দামানেই দেহ রাখিয়াছে। নিতাইয়ের বাপ ছিল সিঁদেল চোর । পিতামহ ছিল ঠ্যাঙাড়ে। নিজের জামাইকেই নাকি সে রাতের অন্ধকারে পথিক হিসাবে হত্যা করিয়াছিল। জামাইবাড়ীর মাঠ এখান হইতে ক্রোশখানেক দূরে। ইহাদের ঊর্ধ্বতন পুরুষের ইতিহাস পুলিশ—রিপাের্টে আছে, সে এক ভীতিপ্রদ রক্তাক্ত ইতিহাস।
Kobi,Kobi in boiferry,Kobi buy online,Kobi by Tarashonkor Bondopadhai,কবি,কবি বইফেরীতে,কবি অনলাইনে কিনুন,তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর কবি,9847034305722,Kobi Ebook,Kobi Ebook in BD,Kobi Ebook in Dhaka,Kobi Ebook in Bangladesh,Kobi Ebook in boiferry,কবি ইবুক,কবি ইবুক বিডি,কবি ইবুক ঢাকায়,কবি ইবুক বাংলাদেশে
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর কবি এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 154.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Kobi by Tarashonkor Bondopadhaiis now available in boiferry for only 154.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন |
হার্ডকভার | ১৫৬ পাতা |
প্রথম প্রকাশ |
2015-02-01 |
প্রকাশনী |
বিভাস |
ISBN: |
9847034305722 |
ভাষা |
বাংলা |
লেখকের জীবনী
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (Tarashonkor Bondopadhai)
তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় বিংশ শতাব্দীর একজন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ছিলেন। ১৮৯৮ সালের ২৪ জুলাই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় তাঁর জন্ম। তাঁর শৈশব কাটে এই বীরভূম জেলারই লাভপুর গ্রামে। ধর্মপরায়ণ ও আদর্শনিষ্ঠ বাবা-মায়ের কাছে তিনিও একই সততা ও আদর্শের শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠতে থাকেন। লাভপুরের যাদবলাল হাই স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। তবে নানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম শেষ করতে পারেননি। ভারতীয় স্বাধীনতা বিপ্লবের সময় রাজনৈতিক কারণে কারাভোগ করতে হয় তাঁর। মুক্তি পাওয়ার পর সাহিত্যে মনোনিবেশ করেন পুরোপুরি। তাঁর অনন্য প্রতিভায় জন্ম নিয়েছে একেকটি অসাধারণ পাঠকনন্দিত সাহিত্যকর্ম। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় রচনাবলী বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সমৃদ্ধ সম্পদ। তাঁর লেখা কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের জীবনকে এককভাবে উপস্থাপন করে না, ফুটিয়ে তোলে গ্রামীণ ও নাগরিক জীবনের সব বৈশিষ্ট্যকে। সাহিত্য সৃষ্টি করতে তিনি বাদ রাখেননি কোনো শাখা। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হলো ‘চৈতালি ঘূর্ণি (১৯৩২)’, ‘পাষাণপুরী (১৯৩৩)’, ’ধাত্রীদেবতা (১৯৩৯)’, ’কালিন্দী (১৯৪০)’, ’কবি (১৯৪৪)’, ’হাসুলী বাঁকের উপকথা (১৯৫১)’, ‘কালরাত্রি (১৯৭০)’ ইত্যাদি। তারাশঙ্করের উপন্যাস সমগ্র সংখ্যার হিসাবে প্রায় ৬৫টি। এর মধ্যে ‘কবি’ উপন্যাসটি তারাশঙ্করের কালজয়ী উপন্যাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামার মাঝে তিনি বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠী ও সাহিত্য সম্মেলন এর নেতৃত্ব দান ও সভাপতিত্ব করেন। পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার নির্বাচিত সদস্য হিসেবে তিনি আট বছর দায়িত্ব পালন করেন। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় কবিতা সমগ্র হল ‘ত্রিপত্র (১৯২৬)। এছাড়াও সাহিত্য রচনা করেছেন ছোটগল্প, নাটক, প্রহসন ও প্রবন্ধ আকারেও। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ের ছোটগল্প সংকলন হলো ‘ছলনাময়ী (১৯৩৭)’, ‘রসকলি (১৯৩৯)’, ‘হারানো সুর (১৯৪৫)’, ‘কালান্তর (১৯৫৬), ‘মিছিল (১৯৬৯)’, ‘উনিশশো একাত্তর (১৯৭১)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত অনেক উপন্যাস পেয়েছে চলচ্চিত্র রূপ, এদের মাঝে আছে ‘কালিন্দী’, ‘দুই পুরুষ’, ‘জলসাঘর’, ‘অভিযান’। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় উপন্যাস সমগ্র বাঙালি পাঠকের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘শরতস্মৃতি পুরস্কার (১৯৪৭)’, ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯৫৬)’, ‘রবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৫৫)’, ‘পদ্মশ্রী (১৯৬২)’, ‘পদ্মভূষণ (১৯৬৮)’ ইত্যাদি পুরস্কার ও উপাধি লাভ করেন। তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় এর বই সমূহ মানুষের হৃদয়ে চিরস্থায়ী স্থান করে নিয়েছে। পাঠকনন্দিত এই বাঙালি কথাসাহিত্যিক ১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পরলোকগমন করেন।