Loading...

পথের পাঁচালী (হার্ডকভার)

সম্পাদক: নীহাররঞ্জন রায়

স্টক:

২৫০.০০ ১৮৭.৫০

পথের পাঁচালী বিভুতিভুষণের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। লেখকের অসম্ভব বর্ণনাশৈলী আমাকে উপন্যাসের আরো গভীরে নিয়ে গেছে। অপুদের ভাঙ্গা-চোরা ভিটের পাশে বাঁশবনে অপু-দুর্গার জীবনের প্রথম চড়ুইভাতি, কাশবনে ঘুড়ে বেরানো, আহা! মনে হয় যেন নিজের চোখে ভাসতেসে জ্বলজ্বল করে। কী গরিব,অসহায় তারা। দামী কোনো খাবার খেতে পারে না, বনের উচ্ছিষ্ট ফল বড় তৃপ্তি সহকারে খায়। মা সর্বজয়ার খুব কষ্ট হয় কিন্তু কি করবে এই এক ভিটে ছাড়া ঠায় যে নেই কোথাও। তারা যে খুব দরিদ্র এটা হারে হারে বুঝিয়ে দেয় তাদের প্রতিবেশিরা।হরিহর কাশি যায়, সর্বজয়ার মনে হয় এইবার উনি আসলেই একটা সুখের বার্তা নিয়ে আসবে। বলবে, অবস্থা ফিরিলো বলিয়া। কিন্তু হায়! দিন যায় মাস যায়, বছর চলে যায় সুখের দিন আর আসে না। দারিদ্র্য যে হতদরিদ্রকে আরো কাবু করে ফেলে সেটা পথের পাঁচালী তে খুব সুন্দর করে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। পড়তে পড়তে কখনো মনে হয়েছে মানুষের জীবন এমনও হয়? জীবন যুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকতেছে। গভীর মমতায় তাদের জন্য বুক ভরে ওঠে।
পথের পাঁচালী একটি সামাজিক উপন্যাস। উপন্যাসের নাটকীয়তা শুরু হয় হরিহরের বাসায় ইন্দির ঠাকুরনের আগমনের ফলে। ইন্দির ঠাকুরন বিধবা, অনাথ এক মহিলা। যার দেখার কেউ ছিলো না। ইন্দির ঠাকুরনকে অল্প বয়সে এমনই এক লোকের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়, যে যৌতুকের লোভে অনত্র চলে যায় আর কখনো ফিরে আসে না। তখন আশ্রয় হয় পিতার বাড়িতে এবং তার ভাইয়ের মৃত্যুর পর দূর সম্পর্কের আত্নীয় হরিহরের বাসায় ঠায় মিলে। সর্বজয়ার সাথে ইন্দির ঠাকুরনের সম্পর্ক মানবিক ছিলো না। উঠতে বসতে মনে করিয়ে দিতো সে যে একজন আশ্রিতা। ঝগড়া বিবাদ করে পুটুলি হাতে নিয়ে সে প্রায়ই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেত, দিনশেষে তার পথ শেষ হয়ে আসতো হরিহরের বাড়িতেই। সামান্য কারণে তাকে কুঁড়ে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়। ঠায় হয় চালের গুদামে। অসহায় বৃদ্ধা তার মৃত্যু-মুহুর্তে আশ্রয়ের জন্য অনুরোধ করে তবুও সর্বজয়ার মন গলে না হৃদয়হীনভাবে না করে দেয়। শেষমেশ চালের গুদামেই সে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে। ইন্দির ঠাকুরনের সাথে সর্বজয়ার যে ব্যবহার মাঝে মাঝে মনে হয়েছে একটু বেশিই হয়ে গেছে। থাক না বেচারী একটুই তো ঠায় চায়, সঙ্গ চায় তাদের। বৃদ্ধারও তো যে কেউ নেই। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হয় তারা খুব গরীব। তাদের নিজেদেরই খাবারের পয়সা থাকে না, আরেকজনের বাগানে, বাঁশবনে যেয়ে কিছু উচ্ছিষ্ট খাবার সংগ্রহ করে খায়। তার উপর মানুষের দেওয়া কষ্টে জীবন বিপন্ন হয়ে গেছে, নিজেদেরই চলতে কষ্ট তার উপর আরেকজন আসলে বলতে হয় মরার উপর খরার ঘা।
দুর্গা ও অপু দুজনেই গ্রাম্য প্রকৃতি ভালোবাসে, রেলপথ তাদের কাছে এক রহস্যজগতের বার্তা পৌছে দেয়। নতুন নতুন অভিযানে দুর্গা হয় অপুর পথপ্রদর্শক। কিন্তু অপুর মধ্যে প্রকৃতির প্রতি যে মোহ, যে প্রেম, যে অনুভূতির প্রখরতা এবং ভাবুকতা তা দুর্গার মধ্যে ছিলো না। তবুও কেউ কারো থেকে কম না। এই উপন্যাসে অপুকে যদি প্রকৃতি-পুত্র বলতে হয় তাহলে দুর্গাকেও প্রকৃতি-কন্যা বলতে দ্বীধা নেই। দুর্গার মৃত্যু অপুর জীবনে বড় রকমের আঘাত আনে। দুর্গার উপর যে চুরির অভিযোগ ওঠে সেই চিহ্ন মুছে দেওয়ার জন্য অপু পুকুর পাড়ে গিয়ে স্বর্ণের লকেটটা জোরে একেবারে মাঝপুকুরে ফেলে দেয়, তৎক্ষণাৎ বুদবুদ করে দ্রব্যটি পানিতে তলিয়ে যায়। অপু নিশ্চিন্ত হয় যে আর কোনোদিন দিদির উপর ওপর কেউ চুরির প্রমাণটা কেউ খুঁজে পাবে না।
দুর্গার মৃত্যুর পর হরিহরের জীবনে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। জীবিকা নির্বাহের জন্য সংগ্রাম করে যেতে হয়। সেই সংগ্রামে যুক্ত হয় নিশ্চিন্দিপুর ছাড়ার। নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় অপুর মনে হয়েছে দুর্গা মারা গেলেও দুজনের খেলা করার পথে-ঘাটে, বাঁশবনে, আমতলায় তাদের যে স্মৃতি সেটা বয়ে নিয়েই বেঁচে থাকতে হবে আজীবন।নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ঘটে আরেকটি দুর্ঘটনা। তখন সর্বজয়ার চোখের অশ্রু মুছার জন্যও কেউ ছিলো না। সবাই তার কষ্টের সুযোগ নিতে চায়।কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায় না। একমাত্র ভরসা ছিলো অপু। সেই অপুকেও অপদস্তের শিকার হতে হয় দারিদ্রতার জন্য। সে কথা জানায় অপুকেও। এরপর? এরপর কি হবে? তারা কি যেতে পারবে নিশ্চিন্দিপুরে? নিজের ভিটেটায় যেয়ে তাদের আশ্রয় হবে? জানতে হলে পড়তে হবে "পথের পাঁচালী"র পরের অংশ "অপরাজিত" যা অপুর সংসার নামে বিবেচিত।
উপন্যাসের সমাপ্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় একজন নিরিহ নারী, একজন অসহায় কিশোরের কী রকম অনুভূতি হয় যখন সে ক্রমাগত নির্যাতিত, অবহেলিত, অপদস্ত, নিগৃহীত ও নিষ্পেষিত হয় ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কারণে, যার রেশ পাঠকের মনে বিরাজ করে আজীবন। এই দুটি চরিত্রের কারণেই বিভূতিভূষণ আজীবন বাংলা সাহিত্যে বেঁচে থাকবেন। আমার লেখাও শেষ করি দুর্গার মৃত্যুর আগের কথোপকথন দিয়ে :-
-এই অপু--শোন--একটা কথা শোন-
-কিরে দিদি? পরে সে দিদির মুখের আরো কাছে লইয়া যায় ভালো করে কথা শোনার জন্য।
- আমাকে একদিন রেলগাড়ি দেখাতে নিয়ে যাবি?
Pother Pacali,Pother Pacali in boiferry,Pother Pacali buy online,পথের পাঁচালী,পথের পাঁচালী বইফেরীতে,পথের পাঁচালী অনলাইনে কিনুন,বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর পথের পাঁচালী,Pother Pacali Ebook,Pother Pacali Ebook in BD,Pother Pacali Ebook in Dhaka,Pother Pacali Ebook in Bangladesh,Pother Pacali Ebook in boiferry,পথের পাঁচালী ইবুক,পথের পাঁচালী ইবুক বিডি,পথের পাঁচালী ইবুক ঢাকায়,পথের পাঁচালী ইবুক বাংলাদেশে,98470178098122,Pother Pacali by Bivutivushon Bondopadhai
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর পথের পাঁচালী এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 180.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Pother Pacali by Bivutivushon Bondopadhaiis now available in boiferry for only 180.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন হার্ডকভার | ২৩৮ পাতা
প্রথম প্রকাশ 2017-02-01
প্রকাশনী আরাফাত প্রকাশনী
ISBN: 98470178098122
ভাষা বাংলা

ক্রেতার পর্যালোচনা

5
1 reviews

1-3 থেকে 3 পর্যালোচনা

  • পর্যালোচনা লিখেছেন 'Mijun Uddin Masud'
    পথের পাঁচালী হলো প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত একটি বিখ্যাত উপন্যাস। বাংলার গ্রামে দুই ভাইবোন অপু আর দুর্গার বেড়ে ওঠা নিয়েই বিখ্যাত এই উপন্যাস। বিখ্যাত বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাসটি অবলম্বনে পথের পাঁচালী (চলচ্চিত্র) নির্মাণ করেন যা পৃথিবী-বিখ্যাত হয়।এটি ছিল লেখকের লেখা প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। পরে পথের পাঁচালী উপন্যাসটি তেলুগু ভাষায়,সিংহলী ভাষায়,মালয়ালম ভাষায়,ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশিত হয়। হরিহর রায়, খুব ভাল ব্রাহ্মণ নন, নিশিন্দিপুর গ্রামে থাকেন। ইন্দিরা ঠাকুর, একজন বৃদ্ধা বিধবা মহিলা, যার দেখাশোনা করার জন্য কেউ ছিল না। তিনি হরিহরের বাড়িতে আশ্রয় নেয়,কিন্তু হরিহরের স্ত্রী সর্বজয়া, একজন খারাপ মেজাজের মহিলা, তিনি বৃদ্ধাকে দেখতে পারেন না।কিছুদিন পর সর্বজয়ার একটি পুত্র হয়। সর্বজয়া, ইন্দিরা ঠাকুরকে হিংসা করতে থাকে,ঘটনা প্রবাহে বৃদ্ধাকে ঘর থেকে বের করে দেয় ও তার নির্মম মৃত্যু হয়।চার-পাঁচ বছর পর, ছেলে অপু প্রকৃতির সৌন্দর্য ও রহস্যের প্রতি অত্যন্ত কৌতূহলী এবং সংবেদনশীল হতে থাকে। সে এবং তার বোন দুর্গা সর্বদা নতুন কিছু দু:সাহসিক কাজের জন্য বাইরে ঘুরতে বের হতে থাকে, যেমন জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো, আদিবাসী খেলায় অংশগ্রহণ এবং গোপনে ফুল ও ফল পাড়া। গ্রাম্য উৎসব, মেলা, এবং যাত্রা ইত্যাদি গ্রাম্য জীবনের একচেটিয়া প্রবাহে বৈচিত্র্য এবং রোমাঞ্চ নিয়ে আসে। দুর্গা, অস্থির কিন্তু অতি নির্দোষ এক মেয়ে, হঠাৎ করে মারা যায়,যা পুরো পরিবারকে শোকে ডুবিয়ে দেয় এবং তার ছোট ভাইকে একা করে দেয়। হরিহর দীর্ঘ সময়ের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যায় ও জীবিকা অর্জনের জন্য মরিয়া হয়ে সংগ্রাম করতে থাকে। বাড়ি ফেরার পর হরিহর দূর্গার মৃত্যুর কথা জানতে পারলে নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
    June 30, 2022
  • পর্যালোচনা লিখেছেন 'Ashraful Sharif'
    ☆"পুণ্যিপুকুর পুষ্পমালা কে পুজে রে দুপুরবেলা? আমি সতী লীলাবতী ভায়ের বোন ভাগ্যবতী ৷" 🔹️প্রারম্ভিকা: আমাদের চারপাশের জীবনও জগৎ হলো গল্প ৷ আর ওই গল্পগুলো জীবনের সমষ্টি ৷ মোটকথা জীবন জুড়ে যেমন গল্প থাকে তেমনি গল্প জুড়ে মানুষের জীবন ৷ লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ে "পথের পাঁচালী" উপন্যাসটি জীবনের সমষ্টি ৷ বিভূতিভূষণ মানুষের জীবনের দৈনন্দিন দুঃখ-দৈন্য দশা, সুখ, শোকের বর্ণনা করেছেন ৷ প্রত্যেকটি চরিত্রের মাধ্যে বাংলার প্রত্যেক ঘরের মানুষের প্রতিদিনের জীবন তুলে ধরেছেন ৷ যা পাঠ করলে অবশ্যই পাঠক বুঝতে পারবেন ৷ 🔹️লেখক পরিচিতি: বাংলা ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি ১৮৯৪ সালের ১২ ই সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ৷ এবং ১৯৫০ সালের ১ নভেম্বর ঘাটশীলায় মারা যান ৷ "পথের পাঁচালী" লেখকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ৷ তিনি "ইছামতী" উপন্যাসের জন্য মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার পান ৷ লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের "পথের পাঁচালী" উপন্যাসটি ইংরেজি ও ফারসিসহ বহু ভাষায় অনুবাদ হয়েছে ৷ ■ পথের পাঁচালী বৃত্তান্ত: বিভূতিভূষণ যখন "পথের পাঁচালী" ছাপানোর জন্য যাচ্ছিলেন তখন উপন্যাসের প্রাণ দুর্গা চরিত্র ছিল না ৷ ট্রেনের অপেক্ষায় রেল স্টেশনে বসে থাকার সময় একটি ছোট মেয়েকে দেখে চরিত্রটি বিভূতিভূষণের মাথায় আসে ৷ লেখক সেখান থেকে বাড়ি ফিরে চারবছর সময় নিয়ে উপন্যাসটি রি-রাইট করেন ৷ উপন্যাসটির অন্যতম চরিত্র হয়ে উঠে দুর্গা ৷ পরবর্তীতে তার হাত ধরে অপু উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে আসে ৷ ☆উপন্যাসটি তিনটি খণ্ডে বিভক্ত: 🔸️১॰ বল্লালী-বালাই: এই খণ্ডটি ছয়টি পরিচ্ছেদে বিন্যস্থ ৷ প্রত্যেকটি পরিচ্ছেদ বেশ সক্রিয় ৷ পাঠক এই খণ্ডে অধিকাংশ চরিত্রের সাথে পরিচিত হবেন ৷ বল্লালী-বালাই খণ্ডে উপন্যাসের স্টাটিং ঘটে ৷ 🔸️২॰ আম-আঁটির ভেপু: খণ্ডটি ২৩টি পরিচ্ছেদে সাজানো হয়েছে ৷ এই অংশে উপন্যাসের প্রধান আকর্ষণীয়তা রয়েছে ৷ বলা যায়, উপন্যাসের মূল চড়াই-উতড়াই এই খণ্ডেই স্টাটিং হয়েছে ৷ 🔸️৩॰ আক্রুর সংবাদ: সর্বমোট ছয়টি পরিচ্ছেদে বিন্যাস্ত৷ যেখানে উপন্যাসের চরিত্রের পরিণতী ঘটেছে ৷ প্রত্যেকটি চরিত্রের শেষ পরিণতী এই খণ্ডেই করুণ রসের উদ্রেক করবে পাঠককে ৷ 🔹️পাঠপ্রতিক্রিয়া: আমার কাছে মনে হয় বিভূতিভূষণ মানে বাংলা সাহিত্য ৷ সাহিত্যের ঢাল-পালা বিস্তৃত করে তার সৃষ্টিশীল লেখা আমাকে সবসময় মূগ্ধ করে ৷ বড়, মমতা চড়ানো থাকে তার লেখার প্রত্যেকটা ভাঁজে ৷ উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ সব জায়গায় ৷ বিভূতিভূষণের লেখার ধারা বিবেচনায় "পথের পাঁচালী" উপন্যাসে এর ব্যতিক্রম ঘটেনি ৷ লেখক অসাধারণ পাণ্ডিত্য দেখিয়েছেন ৷ এতটা ভালো লাগা ভালোবাসা ছড়িয়ে উপন্যাসের প্রত্যেকটা অংশ সৃষ্টি করেছেন ৷ এর আগে আমি অন্য বইতে এতটা আবেগ, অনুভূতির ছোঁয়া পাইনি ৷ যা বিভূতিভূষণের "পথের পাঁচালী" দিয়েছে ৷ তাই বলা যায় বিভূতিভূষণের "পথের পাঁচালী" কালজয়ী উপন্যাস ৷ 🔹️কাহিনী সংক্ষেপ: নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের একটি পরিবারের কাহিনী হলো পথের পাঁচালী ৷ যে পরিবারে নানান জটিলতা থাকলেও জীবনের দণ্ডায়মান হিসেবে তাদের ভালোবাসায় কখন টানাপোড়েন হয়নি ৷ হরিহর রায়ের হিসেব নিকেষ মিশে যায় সর্বজয়ার সর্বশান্ত মনের কাছে ৷ সর্বজয়ার মন কাঁদে বাচ্চাদের মুখে একটু-আঁধটু ভালো মন্দ তুলে দেবার ৷ তবে ভাগ্যের চাওয়াটা অপূর্ণই থেকে যায় ৷ হরিহর এবং সর্বজয়ার দস্যি মেয়ে দুর্গা ৷ দুর্গার ছোট ভাই অপু ৷ দুর্গা সারাদিন দস্যিপনা করে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় আর ফল চুরি করে ৷ এনিয়ে সর্বজয়ার কাছে বিচার আসলে সে দুর্গাকে শাসন করে ৷ আবার সর্বজয়া আহত হয় নিজেদের দারিদ্রতার জন্য বাচ্চাদের ভালো খাওয়াতে পারেনা ৷ ছোট ভাই অপু দুর্গার ভক্ত ৷ দুর্গার সাথে বনে জঙ্গলে ঘুরে-ফিরে আবার দিদির সাথে ফল পাকোড়ে ভাগ বসায় ৷খানিক দূরের মাঠ পাড়ি দিয়ে রেলগাড়ি দেখতে যায় ৷ নিজেরা স্বপ্নবুনে একদিন রেলগাড়ি চড়বে ৷ অপু বয়সে ছোট ৷ তবুও পাঠশালায় যায় ৷ পড়া লেখায়ও বেশ ৷ একসময় বই পড়া তার নেশা হয় ৷ দিদির চড়ুই ভাতির সঙ্গী হয় ৷ এই ভালোবাসার জন্যই দিদির প্রতি তার অনেক মায়া জন্মে ৷ একদিন হরিহর আর সর্বজয়ার সংসারে ভেসে আসে নির্বাণ কালো স্রোত ৷ দুর্গা অসুখের সাথে লড়ে হরিহর লড়েন সংসারের জন্য ৷ সর্বজয়া সর্বশান্ত হয়ে ভাবেন ৷ একদিন নিশ্চিন্দিপুরে কালো স্রোত নামে ৷ যে স্রোত অপুকে করে একাকী ৷ যে জীবনের হিসেব মিলে না, তবুও ভঙ্গুর পথ মাড়াতে হয় ৷ জীবনতো মায়ায় আটকে থাকে না ৷ জীবনের বৈচিত্র এই—এখানে মায়া থাকতে নেই ৷ বিষাদের ভাঁটফুল মাড়িয়ে সামনে যেতে হয় ৷ অপু, সর্বজয়া, হরিহর— তারা মেনে নিয়েছেন সেই বাস্তবতা, যা না চাইলেও মানুষকে মেনে নিতে হয় ৷ লেখক জীবনের একটা সমীকরণ অঙ্কন করেছেন উপন্যাসটিতে ৷ যা বাস্তবতার আলেখ্য হয়ে ফুটে উঠে "পথের পাঁচালী" শিরোনামে ৷ 🔹️বইয়ের নামকরণ: বইয়ের নামকরণ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৷ বিশেষ করে প্রায় বেশির ভাগ পাঠকই বইয়ের নাম দেখে বই কিনে থাকেন ৷ যদিও আমি এই কথার সাথে একমত নই ৷ তবে একটি সুন্দর নাম অবশ্যই বইয়ের সুন্দরতা বর্ধিত করে ৷ এজন্য বইয়ের নাম দেওয়ার ক্ষেত্রে লেখককে সূক্ষ্ম জ্ঞানের পরিচয় দিতে হয় ৷ পাঠক এই উপন্যাসে মানুষের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা প্রেম, ভালোবাসা উপলদ্ধি করতে পারবে! ঘটনাংশের সাথে মিল রেখে বইয়ের নামকরণ করা হয়েছে ৷ যার মাধ্যমে বইয়ের মূল ঘটনা ঠাহর করা যায় ৷ বইটি আমার খুব ভালো লেগেছে ৷ আশা করি বইটি অন্য পাঠকদেরও ভালো লাগবে! 🔹️ভালো লাগা কিছু লাইন: "মুনির চিন্তা চিন্তামণি নাই অন্য আশা নিষ্কর্মা লোকের চিন্তা তাস আর পাশা ৷ ধনীর চিন্তা ধন আর নিরেনব্বইএর ধাক্কা, যোগীর চিন্তা জগন্নাথ, ফকিরের চিন্তা মক্কা, গৃহস্থের চিন্তা বজায় রাখতে চারি চালের ঠাট্টা ৷ শিশুর চিন্তা সদাই মাকে, পশুর চিন্তা পেট্টা ৷" 🔹️উল্লেখযোগ্য উক্তি: 🔸️"লাথি ঝাঁটা পায়ের তল, ভাত পাথরটা বুকের বল ৷" 🔸️"যে জন খড় পেতে খেজুর চেটায় ঘুমিয়ে কাল কাটে, তাকে খাট-পালঙ্ক খাসা মশারি খাটিয়ে দিলে কি খাটে?" 🔸️"লীলার গলার সুর কি মিষ্টি, এমন সুর সে কোন মেয়ের এপর্যন্ত শুনে নাই ৷" 🔸️"চল আজ এইগুলা নিয়ে যাই, নাইবার বেলায় মাকে সঙ্গে আনবো ৷" 🔹️উপন্যাসের চরিত্র: চরিত্র হলো উপন্যাসের প্রাণ ৷ চরিত্রের মাধ্যমে সামনের দিকে উপন্যাসের বিস্তিতি ঘটে ৷ চরিত্র যতটা স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে ফুটে উঠে একজন বইপ্রেমি উপন্যাসকে ততটা সহজে গ্রহণ করে ৷ "পথের পাঁচালী" উপন্যাসের সক্রিয় কয়েকটি চরিত্র আলোচনা করছি:- 🔸️ইন্দির ঠাকরুন: নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের বাসিন্দা ৷ অপু আর দুর্গার পিসিমা ৷ উপন্যাসের শুরুতে এই চরিত্রটি ফুটে উঠেছে ৷ মাঝে তার মৃত্যু হলেও শেষ অব্দি তার রেশ রয়ে গেছে ৷ 🔸️সর্বজয়া: হরিহর রায়ের স্ত্রী ৷ বাংলা সহজ সরল গ্রাম্য বধু ৷ তিনি অপু এবং দুর্গার মা ৷ উপন্যাসের শুরুতে তাকে সহজ সরল উপস্থাপন করা হলেও শেষের দিকে বাঙালি নারীর সংগ্রামী জীবনের অঙ্কুর ফুটে উঠেছে ৷ 🔸️হরিহর রায়: নিশ্চিন্দিপুরের বাসিন্দা ৷ সর্বজয়ার স্বামী ৷ অপু এবং দুর্গার বাবা ৷ তিনি শিক্ষিত মার্জিত সহজ সরল শ্রেণীর ৷ 🔸️দুর্গা: উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র দুর্গা ৷ তার হাত ধরে উপন্যাসটি সামনে এগোয় ৷ ম্যালেরিয়া জ্বরে তার মৃত্যু হলেও উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত তার রেশ লক্ষ্য করা যায় ৷ 🔸️অপু: উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ৷ এই চরিত্রটি বাংলা সাহিত্যে সমধিক আলোচিত ৷ বিখ্যাত চরিত্র ৷ ছোট থেকে বড় হতে থাকা এবং জীবন সংগ্রামে আঁতাত করতে করতে চরিত্রটি পাঠক প্রিয়তা পায় ৷ 🔸️লীলা: সর্বজয়া যে বাড়িতে কাজ সে বাড়ির মেয়ে ৷ অপুর সাথে তার বন্ধুত্ব বনে যায় ৷ 🔹️উপন্যাসের শিক্ষা: প্রত্যেকটা জিনিসের আলাদা আলাদা শিক্ষা থাকে ৷ বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাস "পথের পাঁচালী" ও তেমন ৷ বইটি পড়ে মানুষের জীবন, পরিবার, পরিবারের প্রতি ভালোবাসা, পারিবারিক জীবনের দুঃখ-দৈন্য সহজে বুঝা যায় ৷ বইটিতে আমাদের সমাজ বাস্তবতার চিত্র শিক্ষণীয় ৷ 🔹️ব্যক্তিগত রেটিং: রেটিয়ের মাধ্যমে বইয়ের মান যাচাই করা যায় না ৷ বই সম্পর্কে জানতে হলে বুঝতে হলে অবশ্যই বইটি পড়তে হবে ৷ কারণ, পাঠক মাত্রই ভিন্ন রুচির৷ বইটিতে আমার ব্যক্তিগত রেটিংঃ- ৫/৫ 🔹️বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সেরা বইগুলর মধ্যে পথের পাঁচালি নিজের স্থান করে নিয়েছে স্বমহিমায়। আষি মনে করি "পথের পাঁচালী" পড়ে সকল পাঠকই আমার মতো তৃপ্ত হয়েছেন । যা লেখকের অন্যতম সফলতা ৷
    June 29, 2022
  • পর্যালোচনা লিখেছেন 'Sree Rabindranath Karmaker'
    প‌থের পাঁচা‌লীর এক‌টি অংশ আমরা ম‌নে হয় সবাই প‌ড়ে‌ছি। ক্লাস ৮ এর বাংলা বই ম‌নে হয়। ''আম আ‌টি ও ভেপু" এটা নিশ্চই ম‌নে আ‌ছে। হ্যাঁ এটা কিন্তু প‌থের পাঁচা‌লীর একটা অংশ মাত্র। জীবনানন্দের নিসর্গময় কাব্যভাষার গদ্যরূপ যেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি ‘পথের পাঁচালী’। এতে কোনো কাব্যময়তা নেই, কিন্তু আছে অদ্ভূত ছন্দময়তা। যে সামাজিক প্রেক্ষাপটে গোটা উপন্যাসটি রূপায়িত, তার ব্যাপ্তি যেন কেবল প্রতি যুগের সাক্ষী শাশ্বত ঘটনাবলীতে নয়। সবচেয়ে প্রাণ সঞ্চারী খন্ড আম আঁটির ভেঁপু। এতে তিলে তিলে বড় হয় অপু। আর তার নিষ্পাপ মন ও কৌতূহলী চোখ দিয়ে পাঠক দেখে সমাজের কঠিন কিছু প্রথা, কিছু রঙিন স্বপ্নবিলাসিতা, কিছু আহ্লাদিত অভিমান – সর্বোপরি মানবশিশুর দৃষ্টিতে ধীরে ধীরে উন্মোচিত কঠিন বিশ্ব। নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের আনাচে কানাচে ছুটে ফিরে দুই ভাই বোন আর তাদের বাবা-মায়ের চলে অফুরন্ত জীবন সংগ্রাম। এরই মাঝে তারা স্বপ্ন দেখে, আশাহত হয় আবার নতুন কল্পনার বীজ রোপণ করে। মানুষের আসা যাওয়ার মাঝে প্রকৃতিই কেবল নীরব নিঠুর দর্শক হয়ে সবকিছুকে জড়িয়ে রাখে। নগন্য জিনিসের মাহাত্ম্য ও উপযোগিতা ঢের বেশি বলে প্রতীয়মান হয়। দরিদ্রতার কড়াল গ্রাসে বারবার আহত হয় আত্মমর্যাদা, তবু যুদ্ধ থামে না। ভাল-মন্দ, মমতা-পাষণ্ডতায় জড়ানো এক একটি চরিত্র যেন সমাজের মূর্ত প্রতিচ্ছবি। উপন্যাসের শেষ অংশে গ্রামীণ খেলাঘর ছেড়ে বাস্তবতার পাঠ নিতে শহুরে জীবন শুরু করা অপুর পদে পদে ঠোকর খাওয়া যেন বারবার এই-ই বলে যে এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের নিত্য চক্র শ্বাপদের ন্যায় উদ্যত। প্রকৃতির এই নিষ্ঠুরতাকে আশ্রয় করেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেন নিজ কলমের খোঁচায় প্রধান পাঁচটি চরিত্রের তিনটিকেই কেড়ে নিলেন। আর অদৃষ্টের খেয়ালী রসিকতাকে মূর্ত করে তুলতেই কী লেখক সব হারানো স্ত্রীলোকটির নাম দিয়েছিলেন ‘সর্বজয়া’? করুণ মৃত্যু, অসহায়ত্ব, কুটিলতা, অকৃত্রিম সরলতা, ক্ষুদ্র হতে বৃহৎ কপটতা, সীমাহীন দরদ আবার হৃদয়হীনতা, কখনো সৃষ্টিছাড়া উল্লাস, কোথাও আবেগী সম্প্রকাশে লেখক অনাড়ম্বর গতিতে এগিয়ে নিয়ে গেছেন উপন্যাসটিকে। এটা নি‌য়ে অবশ্য সত্য‌জিত রায় "অপুর ত্রয়ী" শি‌রোনা‌মে সি‌নেমা তৈরী ক‌রে ছি‌লেন যা হয়‌তো অ‌নেকেই দে‌খে‌ছেনছন। এই চল‌চিত্র তিন‌টি যেমন সিনেমা জগৎ এ মাস্টার পিস, তেম‌নি প‌থের পাঁচালী সা‌হিত্য জগৎ এ এক‌টি মাস্টার পিস। তাই সকল পাঠক কে বই‌টি পড়ার অনু‌রোধ কর‌ছি। অ‌নেক আ‌গে বই‌টি প‌ড়ে‌ছিলাম, আবার পড়া শুরু করলাম, তাই এই বই পড়ার সঙ্গী হ‌বেন তো আপনারা।
    July 04, 2022
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখকের জীবনী
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Bivutivushon Bondopadhai)

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১২ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯৪ - ১লা নভেম্বর, ১৯৫০[১]) ছিলেন একজন জনপ্রিয় ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি মূলত উপন্যাস ও ছোটগল্প লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। পথের পাঁচালী ও অপরাজিত তাঁর সবচেয়ে বেশি পরিচিত উপন্যাস। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আরণ্যক, চাঁদের পাহাড়,আদর্শ হিন্দু হোটেল, ইছামতী ও অশনি সংকেত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসের পাশাপাশি বিভূতিভূষণ প্রায় ২০টি গল্পগ্রন্থ, কয়েকটি কিশোরপাঠ্য উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনি এবং দিনলিপিও রচনা করেন। বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালী উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত চলচ্চিত্রটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ১৯৫১ সালে ইছামতী উপন্যাসের জন্য বিভূতিভূষণ পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর) লাভ করেন।

সংশ্লিষ্ট বই