অনুষঙ্গ : ২৭ মার্চ ১৯৭১ বেলাল মােহাম্মদ একাত আপেক্ষিক বিষয় এই যে, ২৬ মার্চ (১৯৭১) যদি ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম আমার আব্বানে কালুরঘাট প্রচার বনে পাহাৱা মোতায়েন করতেন, তা হলে ২৭ মার্চ বিকল্প ব্যবস্থা সাধনের জন্যে আমার পটিয়া যাওয়া হতাে না এবং মেজর জিয়ার রহমানের সঙ্গেও পরিচয় হতাে না। আর সেই সায় আমার তাৎক্ষণিক প্রস্তাবে ও প্রত্যক্ষ সহযােগিতায় একজন বেতার-ঘেষক হিসেবে মেলর জিয়ার বঙ্গবন্ধর পক্ষে স্বাধীনতার ঘােষণাপাঠের মধ্যেও সরি হতাে না। বস্তুত ২৭ মার্চ দিনটি কোনাে বিশেষ দিকসকলে চিহিত না হলেও আমার স্মৃতিচারণায় বারবারই মহিমান্বিত হয়ে এই কারণে যে, আগের দিন (২৬ মার্চ ১৯৭১) আমাদের বেতারকর্মীদের বিভিন্ন কষ্ঠে এবং এম, এ, হান্নানের কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক ঘােষণাটি (তারবার্তার বঙ্গানুবাদ- বারবার প্রচারিত হলেও, তা বৃহত্তর জনগণ-মনে অভয়সূচক হতে পারেনি। কেননা হানাদার পাকিস্তানি সামরিক দস্যুদের অতর্কিত ও নৈশ আক্রমণে তখন সারাদেশ রণক্ষেত্রে পরিণত। নিরশস্ত্র জনগণ দখলদারদের অস্ত্রের আয়ে অগণিত হারে প্রাণ হারাচ্ছে। সেই মুহূর্তে বেতারে একজন বাঙালি মেজরের কণ্ঠ যথার্থই সম্প্রচারের উদ্দেশা চরিতার্থ করেছিল, অর্থাৎ শ্রোতাদের মনােবল বৃদ্ধির (Morale boost up) সহায়ক হয়েছিল। শুক্রকবলিত দেশের মানুষ আশ্বস্ত হয়েছিল এই ভেবে যে, আমাদের ভয়ের কারণ নেই। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক দেশের স্বাধীনতা-ঘােষণা শূন্যগর্ভ নয়। কেননা তার সমর্থনে নিয়ােজিত আছে বাঙালি জোয়ানেরাও। একতরফা পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে মার খেতে হবে মা আমাদের। তাদের বাধা দেবার জন্যে প্রস্তুত রয়েছে বাঙালি সৈন্যসমান্তরাও।। বস্তুত একেবারেই কোনােপ্রকার পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের প্রচার কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিন ২৭ মার্চ সান্ধ্য-অধিবেশনে মেজর জিয়ার একজন বেতার ঘােষক হিসেবে অংশগ্রহণের শুভ ফলশ্রুতির কারণেই এই দিনটি আমাদের স্মৃতিধন্য। | তাই বলে একজন বেতার-ঘােষককে গােয়েবলসীয় পদ্ধতিতে 'স্বাধীনতার মােষক' পদবাচ্য বিভূষিত করা অবশ্যই রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার। (সংক্ষিপ্ত……)