যে ইতিহাসে গ্রন্থকার অংশবিশেষের বিবরণ স্বচক্ষে দেখিয়া বা নিজে ঘটনাবলীর সঙ্গে জড়িত থাকিয়া ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হইতে লিপিবদ্ধ করিয়াছেন, সেইসব ইতিহাস পাঠে আমরা স্বচ্ছন্দে লেখকের জীবন সম্বন্ধে অনেক তথ্য অবগত হইতে পারি। অন্ততঃপক্ষে এইটুকু জানা যায় তিনি কে ছিলেন, কোন্ যুগে জীবিত ছিলেন এবং তাঁহার শেষ পরিণতি কী হইয়াছিল। ফিরিশতা সম্বন্ধে জানিবার এইরূপ সুবিধা থাকিলে তাহা অত্যন্ত সুখের বিষয় হত। কিন্তু লেখক অতিরিক্ত বিনয়ী হওয়ার জন্য আমাদের সে পথ রুদ্ধ। সেই জন্য তাঁহার ইতিহাস পাঠে আমাদের তাঁহার সম্বন্ধে যাহা জানিবার ইচ্ছা হয় তাহার অর্ধেকও জানিতে পারি না। ইহা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, এই মহান ঐতিহাসিকের শেষ পরিণতি সম্বন্ধে কোন খবর নাই বা জার্নিবার উপায় নাই। তাঁহার বিবরণ সুস্পষ্ট করিবার জন্য তিনি মাঝে মাঝে নিজের কথা উল্লেখ করিয়াছেন এবং উহা হইতে তাঁহার সম্বন্ধে যাহা জানা গিয়াছে তাহা এইরূপ : মুহাম্মদ কাসিম ফিরিশতা (পারিবারিক পদবী) কাশপিয়ান সাগরের তীরে আস্ট্রাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতা গােলাম আলী হিন্দু শাহ একজন বিদ্বান ব্যক্তি ছিলেন। গােলাম আলী জন্মভূমি ত্যাগ করিয়া ভাগ্যান্বেষণে ভারতে আগমন। করেন এবং অনেক স্থান ঘুরিয়া শেষপর্যন্ত দাক্ষিণাত্যে আহমদ নগরে আসিয়া উপস্থিত হন। তখন আহমদ নগরের সুলতান ছিলেন মুর্তুজা নিজাম শাহ্। ফিরিশতা তাহার জন্মের সঠিক তারিখ সম্বন্ধে আমাদিগকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখিয়াছেন। বার বৎসর বয়সে তিনি পিতার সঙ্গে আহমদ নগরে পৌঁছেন এবং বালক শাহজাদা মীরন হুসেন নিজাম শাহের সহপাঠী ছিলেন। মীরন ১৫৮৭ খ্রীস্টাব্দে ষােল বৎসর বয়সে পিতাকে সিংহাসনচ্যুত করেন। যেহেতু আমাদের গ্রন্থকার শাহজাদা অপেক্ষা বয়সে সামান্য বড় ছিলেন, এই বিবরণ হইতে আমরা ধরিয়া লইতে পারি যে, ফিরিশতা ১৫৭০ খ্রীস্টাব্দে বা তাহার কাছাকাছি সময়ে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। ফিরিশতার পিতা গােলাম আলী হিন্দু শাহের পাণ্ডিত্যের পরিচয় পাইয়া সুলতান তাঁহাকে শাহজাদা মীরন হুসেন শাহের ফারসী ভাষার শিক্ষক নিযুক্ত করেন।