দ্রোহী কথাসাহিত্যিক আব্দুর রউফ চৌধুরীর ‘আরব জাতির ইতিহাস’ গ্রন্থটি শুরু হয়েছে প্রাক্-ইসলাম-যুগের ইতিহাস ‘পথনির্দেশ’ দিয়ে। তারপর অনন্যসাধারণ মহামানব এবং তাঁর জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহ অতিরঞ্জিত বিষয়সমূহ ব্যতীত যুক্তিসিদ্ধ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে আলোচিত হয়েছে ‘বিশ্বনবী (সা.) ও আরবীয়করণ’-এ। ‘বিশ্বনবী (সা.)-উত্তর আরবীয়করণ’-এ মহামানবের চিরতরে অন্তর্হিত হওয়ার পর, তাঁর স্থলাভিষিক্ত হওয়া নিয়ে যে-বিরোধ সৃষ্টি হয় তারই প্রেক্ষাপটে অযৌক্তিকভাবে সিংহাসনে আরোহণ করেন আবু বকর (রা.)। তারপর উমর (রা.)। অতঃপর স্বজনপ্রিয় উসমান (রা.)। তারপর আলি (রা.)। বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে আলি (রা.) ক্ষমতাচ্যুত এবং আততায়ীর হাতে নিহত হলে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র হাসান (রা.) সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে মুয়াবিয়া ইবন-আবু-সুফিয়ানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রবৃত্ত হন। সন্ধিস্থাপনের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটলে মুয়াবিয়া ইবন-আবু-সুফিয়ান সুদৃঢ়ভাবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। শুরু হয় উমাইয়া সাম্রাজ্য। উমাইয়া সাম্রাজ্য, আব্বাসীয় সাম্রাজ্য ও অটোমান সাম্রাজ্য নিয়ে আলোকপাত করার মাধ্যমে যুক্তিসংগত ও নৈর্ব্যক্তিকভাবে ধর্ম-বর্ণ-জাতি প্রভৃতির বাইরে থেকে এক নির্দিষ্ট সময়ের আরব-জাতি ও আরব-সাম্রাজ্যের ইতিহাস এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশিত হয়েছে গোত্র- গোষ্ঠী-সমাজ-ব্যবস্থা, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক- রাজতান্ত্রিক ধারা, সাম্রাজ্যবাদের সর্বোচ্চস্তর, জয়-পরাজয়, উত্থান-পতন, ভাষা-ঐতিহ্য-কৃষ্টি, দর্শন-জ্ঞান-বিজ্ঞানের নিদর্শন ইত্যাদি। আরব-জাতি মহামানবের আগমনে নিজেদের ভাবনাচিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে জীবনধারণের ক্রিয়াপ্রক্রিয়ার বিবর্তনের অংশ হিসেবেই উন্নতিসাধন করে। সভ্যতা-সংস্কৃতি-জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। জীবনযাত্রার সহায়ক নব চিন্তাচেতনার উন্মেষ ঘটে। বিজ্ঞান ও দর্শন হাতিয়ার হিসেবে উদ্ভাবন করে। ‘আরব জাতির ইতিহাস’ গ্রন্থে দ্রোহী কথাসাহিত্যিক আব্দুর রঊফ চৌধুরী বিভিন্ন সূত্রকে একত্রিত এবং নতুন তথ্যের সংযোজন করেছেন। পাশাপাশি স্থান করে দিয়েছেন আরব-জাতির দীর্ঘসংগ্রামের বিশদ ইতিকথা, বিবিধ আন্দোলন ও সংগ্রামের অনুপুঙ্খ ইতিহাস। উপস্থাপনায় তিনি তাঁর নিজস্ব রীতি-পদ্ধতি-দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে স্বীয় ধ্যানধারণা, ভাবানুভাব, চিন্তাচেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। ‘আরব জাতির ইতিহাস’ নিঃসন্দেহে একটি অসাধারণ গ্রন্থ।