'মানুষ আশায় বাঁচে, নিরাশায় কাঁদে। এ উক্তিটি যেমনি সত্য, তেমনি মানুষের এক জীবনে স্বপ্ন দেখে কয়েকবার। কিন্তু ভাববার বিষয়, কতজন মানুষ তার স্বপ্নের চুড়ায় আরােহণ করতে পেরেছে, শিশুকাল থেকেই যে স্বপ্ন দেখা শুরু হয়। বয়স ও কালের পরিক্রমায় এ স্বপ্নেরও হয় পরিবর্তন। কেউ বা চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিচারক, আইনজীবী, শিক্ষক, ধর্মীয় পণ্ডিত, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ ইত্যাদি হতে চায়। তবে হ্যা, আমার ক্ষুদ্র জীবনে এ স্বপ্ন চূড়ায় পৌছার সফলকামী স্বপ্নবাজ মানুষ দেখার সুযােগও হয়েছে। আমার জুনিয়র ক্লাসের জাবেদ চেহারায় সবসময় দেখতাম এক রাশ স্বপ্নের চিহ্ন। সত্যি, সে নিজে যেমনি স্বপ্ন দেখত, অন্যকেও স্বপ্ন দেখাতে পারত। একজন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তার এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমার একজন সহপাঠীর ছােট ভাই শফীক তার সাথে ঢাকায় থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। একজন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে প্রথমবার মেডিক্যালে চান্স না হওয়ায় গ্রামের বাড়ি চলে যায়। কিন্তু এই স্বপ্নবাজের স্বপ্ন থেমে নেই। ২০১১ সালের ১ জুলাই ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মায়ের মৃত্যুতে বিমর্ষ ও আবেগময়ী তার চেহারা আমি দেখেছি। তবে হ্যা, সেদিন তার চোখে কোনাে অশ্রু দেখিনি। মনে হয়েছিল, বাকহীন এক প্রাণপুরুষ। তবুও সে সকলকে কিছু একটা বােঝাতে যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবতা তাকে দিচ্ছে না সে ক্ষমতাটুকু। আরাে দেখেছি তার পরিবার ও পরিজনের আকুল-আর্তনাদ ও আপনজনহারা কষ্টকর রাতের অংশটি। স্রষ্টার অফুরন্ত লীলাখেলা এই স্বপ্নবাজ দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ চান্স পেয়েছে। এই দু’জন স্বপ্নবাজ থেকে আমার জন্য রয়েছে অনেক কিছু শেখার। তারা শুধু চিকিৎসক হয়েই ক্ষান্ত নয়। যতটুকু জেনেছি, সমাজের অসহায়-দুস্থ জনগণের সেবায় কাজ করার তাদের রয়েছে অনক স্বপ্ন ও পরিকল্পনা।