মক্কা নগরীর ব্যবসায়ী ও আগের জীবনে উষ্ট্ৰচালক আবদুল্লাহর পুত্র হযরত মােহাম্মদ (সঃ) প্রথম যখন ইতিহাসের সাক্ষ্য অনুসারে ৬১০ খ্রীস্টাব্দে, উর্ধ্বলােক হইতে ঐশী বাণী অথবা দিব্যদৃষ্টি প্রাপ্তির কথা মানুষের মাঝে ঘােষণা করেন, তখন তাহার বয়ঃক্রম ছিল চল্লিশ বৎসর। প্রথম ঐশী বাণী তাঁহাকে নির্দেশ দান করে যে, তিনি যাহা শুনিয়াছেন তাহা যেন তিনি আবৃত্তি করেন, অর্থাৎ লােকসমাজে প্রচার করেন। এই ঐশী বাণীর পর আরও ঐশী বাণী অবতীর্ণ হয়, যাহা তাঁহাকে তাঁহার শহরবাসীর পৌত্তলিকতাপূর্ণ বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠানের নিন্দা করিতে আদেশ করে এবং তাহাদের নিকট এক মহত্তর ধর্ম ও পবিত্রতর জীবন বিধানের সংবাদ দেওয়ার জন্যও তিনি আদিষ্ট হন। এই নূতন ধর্মের মর্মবাণী হইল— আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনাে উপাস্য প্রভু নাই; এই প্রভুর অস্তিত্ব আরবীয় দেব-দেবীর বিশ্বাসের অন্তর্গত ছিল, কিন্তু এখন হইতে তিনি কেবল সবার শ্রেষ্ঠ নন, তিনি অদ্বিতীয়, অতুলনীয়ও বটে। হযরত মােহাম্মদের গােড়ার দিকের কথাবার্তা হইতেও ইহা পরিস্ফুট হইয়াছে যে, তিনি নিজেকে আল্লাহর প্রতিভূ এবং শেষ নবী বলিয়া দাবি করিয়াছেন এবং আদম হইতে ঈশা, মুসা, ইব্রাহিম ও আরও অনেক নবী-রসুলদের মাধ্যমে যে নবুয়তের ধারা (সিলসিলা) জারি হইয়াছিল সেই ধারাই শেষ প্রেরিত পুরুষ তিনি। মুসলিম ধর্মমতের | সারকথা হল আল্লাহর একত্ব (তাওহিদ) ও হযরত মােহাম্মদের রেসালাত (যাহার উৎস হইল ঐশী) প্রচার এবং আজ পর্যন্ত যে ব্যক্তি এই ধর্মে বিশ্বাস করে তাহার মূলমন্ত্র হইল ইহাই। সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ্র নিকট “যে কেউ আকাশে ও পৃথিবীতে বাস করে, স্বেচ্ছায় হউক বা অনিচ্ছায় হউক আত্মসমর্পণ করে এবং সেই আত্মসমর্পণ যাহার আরবী শব্দ হইল ‘ইসলাম, মহানবীর ধর্মমতের মর্মকথা। যে ব্যক্তি এইভাবে আত্মসমর্পণ করে সে-ই মুসলিম নামে অভিহিত হয়।