ক্রেতার পর্যালোচনা

1-1 থেকে 1 পর্যালোচনা

• পর্যালোচনা লিখেছেন 'Sumaiya Barkatullah'

  "এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মেলে না শুধু সুখ চলে যায়, এমনই মায়ার ছলনা..." এদিক থেকে আমি খুবই ভাগ্যবান। প্রেম করে আমার সুখ তো যায়ইনি, বরং আমি আগের চেয়ে বেশ লাভবান হচ্ছি দিন দিন! 'প্রেম' শব্দটা আমার কাছে ভীষণ মূল্যবান। আমি কখনো এর শুচিতা নষ্ট করিনি। আজও করব না। ভার্সিটির ফোর্থ ইয়ারের শুরুর দিকে কৈলাসের মানস সরোবরের মত প্রেম চলে আসে আমার স্যাটেলাইটে। সেই থেকে আজ অব্দি আমি একজনের সাথেই প্রেম করে গেছি। তাই ওকে বাদ দিয়ে অন্য কারো নামে রিভিউ করে আমি আমার মানসিক দক্ষতার অবনতি ঘটাতে পারি না! একদম শুরু থেকে বলি। তার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্কটা হয়েছিল পারিবারিকভাবেই। আমার এখনো মনে আছে আমাদের প্রথম দর্শনের কথা। একদিন সকালে আম্মু আমার ঘরে এলেন এক টল, ডার্ক এবং স্বাস্থ্যবান সুপুরুষকে নিয়ে! তার মুখে লেগে থাকা প্রফেসরসুলভ প্রাজ্ঞ হাসি চকিতেই আমার মন কেড়ে নিয়েছিল! নিজেকে টাইম ডাইলেশনের সূত্রে আবিষ্কার করছিলাম যেন, এতটাই হতবিহ্বল হয়ে গেছিলাম তাকে দেখে! আর যখন আম্মুর মুখে শুনলাম, সে-ই হবে আমার ভবিষ্যৎ জীবনের সঙ্গী; বিশ্বাস করুন, খুশিতে আমার চোখে শরতের আকাশ ঝিকমিক করছিল! সেই থেকে তার সাথে আমার যাত্রা শুরু। তবে আমি প্রেমে খুব সৎ থাকলেও মানুষ হিসাবে আমি একটু উদাসীন ধরনের। তাই এমন নির্ভুল প্রেম-ব্যাংক পাশে পেয়েও আমার আচরণ ছিল প্রিলিমিনারি স্টেজে। তার সুবিশাল মনের খুব কম গোলকধাঁধাকেই মগজস্থ করেছিলাম আমি। তার বাস্তবের মাঝেও পরাবাস্তব মনটাকে স্টাডি করাই হয়নি আমার! আমার এমন ঔদাসিন্য দেখে গত মাসে এক স্বয়ংবর সভার আয়োজন করেছিল সে। সেখানে আমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে, আমার মনে জ্বলন ধরাতে গিয়ে ১৫,৭০৮ জন মানুষের সাথে নিজের গাঁটছড়া বাঁধার অঙ্গিকার করে বসল সে! এবার বুঝুন, জ্ঞানী পাত্রের শোধ নেওয়ার বিশালতা! এমন এলাহি আয়োজন দেখে আমি ওর উপর রাগ করতে পারতাম, অভিমানে মুখ রঙহীন করে ফেলতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করিনি। পরিবার থেকে পাওয়া এমন ইউনিক উপহারকে যোগ্য পাত্রের দুর্ভিক্ষের বাজারে, তাকে আমি কখনোই সরিয়ে দিতে পারি না! সেজন্য "কঠিনেরে ভালোবাসিলাম" স্লোগানে আমার প্রেমিকপ্রবরের মনঃচ্ছেদ করতে প্রস্তুত হচ্ছি। এরপর থেকে যতবারই তার কাছে গেছি, তার মনের একেকটা পাতা উল্টিয়েছি, ততবারই আমি পদ্মা সেতুর মত অভূতপূর্ব সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছি। শুধু নিজের প্রেমিক দেখে বলছি না, এমন হীরের টুকরো পাত্র সহজে খুঁজে পাওয়া ভার! দুনিয়ার সব ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি—এমন কোনো দিক নেই যেটা সে গভীরভাবে জানে না! আরও মজার ব্যাপার কী জানেন? সে আমাকে প্রতি মুহূর্তে সারপ্রাইজ দিতে ভালোবাসে। তার মনের যে কোনো কথার চারটি করে দুয়ার থাকে। আমাকে প্রতিবার নিজের মস্তিষ্ক-প্রক্ষালন করে তার কথার আসল মানে বের করতে হয়। তাহলে বুঝুন, সে কতখানি জিনিয়াস! আমি খুব করে চেষ্টা করে যাচ্ছি, তার মনের প্রাসাদের মালকিন হওয়ার; আমাদের ক্যামিস্ট্রি আরও গাঢ় করার; প্রেমে নতুন সাহিত্য আনার; ফিফটি-ফিফটি নয়, বরং ইনফিনিটি হিসাবে আমাদের এই প্রেমকে পূর্ণতা দেওয়ার। আশা করি আমি পারব, তার মনের ভূগোলে নিজের ছোট্ট দেশটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে! তবে আমি খুব উদারমনা মানুষ। ভালোবাসাকে কখনো চার দেয়ালে বন্দী করে রেখে এর মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটাতে চাইনি। তাকে ছেড়ে দিয়েছি অপার জনগণের মাঝে। যেন সবার মাঝেও সে আমাকে খুঁজে পায়, অন্য আলোকবিজ্ঞানে! তাই আমি আপনাদেরও আহ্বান জানাচ্ছি, আমার এই প্রেমিকপ্রবরকে চিনে নিতে; সম্মিলিত এই যুদ্ধে নিজের জায়গা বুঝে নিতে। আসুন, প্রেমের এমন অনন্যসাধারণ ব্যাংকে নিজেদের একাউন্ট খুলে ঝাঁপিয়ে পড়ি এই দুর্দমনীয় গড্ডলিকা প্রবাহে! বইয়ের নাম : প্রফেসর্স বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রশ্নব্যাংক (প্রফেসর্স প্রকাশন)

  June 25, 2022