পরবের দিন জন্ম হয়েছিল রাধার। সেটা ছিল হােলির পরবের দিন। ফাগুয়ার রঙ খেলার দিন। পরবের দিন জন্ম বলে তার নাম রাখা হয়েছিল রাধুয়া। আজ আবার সেই হােলির পরব। রাধার জীবনের পঞ্চ দশ হােলি উৎসবের দিন। প্রতিটি উৎসবে চোখে পড়ার মতােই অংশ গ্রহণ তার। উৎসবের দিনে জন্ম বলেই কিনা উৎসবের প্রতি টানটাও যেন বেশি। একখানা পাছা পেড়ে হলুদ শাড়ি পরেছে রাধা। চূড়াে করে বাঁধা খোঁপায় খুঁজে নিয়েছে কটি কৃষ্ণ চূড়ার ফুল। তাতেই অপূর্ব লাগছে! দফায় দফায় হােলির রং ছিটিয়ে কিশােরী আর। যুবতীগুলাে শুরু করেছে না। বুড়ির নাচছে তাল ছন্দ ছাড়াই। হেড়ে গলায় গান ধরেছে রঘু নন্দন। সেই সাথে দক্ষ-য নাশ করা শিবের নাচ নাচছে সে। তাকে হাত নেড়ে নেড়ে উৎসাহ যােগাচ্ছে আজওহরীলাল আর লখিয়া। বনমালী বুড়াে বার কয়েক চক্কর দিয়ে বসে পড়ল। তার আবার হাঁপের ব্যারাম। “আর আমি পারবেক লাইপাে” বলে বসে পড়ল কিশােরীলাল। মাধী বুড়ির মাথায় জরির কাজ করা একটি কুলাে। তাতে ধনি-দুব্বো ছাড়াও আছে খানিকটা আবির। কুলো মাথায় নিয়ে নাচছে বুড়ি। “আওরে, নন্দলালরে"- ঐ একটি পদই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে গাইহে বুড়ি। বুড়ির গলার স্বর যেমন দ্রুত ওঠা-নামা করছে, তেমনি তা জড়িয়েও যাচ্ছে। বেশ বােঝা যায় মনে চুড় হয়ে আছে সে। রঘুনন্দনের নিতম্বে একটুখানি গুতাে দিয়ে মাধী বুড়ি বলে, আরে জমাদার, মেনেজার বাবুকে বােল না, হ্যা, পরবের মিঠাই দিবেকলাই গাে বাবু? রঘুনন্দন নাচ থামাল। কথাটা সে ভুলেই গিয়েছিল। বুড়িকে আশ্বস্ত করে, হ্যা, হা মিঠাই দিবে না কেনে, দিবে। মেনেজোর বাবু বুলিছে। তােবে তু যানা কেনে! জমাদারকে তাড়া দেয় বুড়ি। মায়ের এভাবে মাতলামী। করা পছন্দ নয় জওহরীলালের। কিন্তু আজ পরবের দিন বলাই বা যায় কি! ফলে নিজেই সে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করে। বুড়ি আবার মাতলামী শুরু করলে বিরক্ত হয় জওহরীলাল। মাকে সে থামিয়ে দিয়ে বলে, মিঠাই হােবে, তু এখন যা। বনমালী খুড়াের কাছে যা না কেনে। ছেলের কথা শুনে ক্ষেপে ওঠে বুড়ি। যারা খােল করতাল বাজিয়ে গান গাইছিল তারা বেসুরাে বাজাচ্ছে। বাদ্যযন্ত্রগুলাের সঙ্গত কিছুতেই যেন ঠিক মত হচ্ছে না। এ বুঝি রীতিমত