বুদু লাড়া দেশ ছেড়ে চলে যাবার প্রায় বাইশ বছর পর, অগ্রহায়ণের এক পূর্বাহে, বুদু লাকড়ার নাভিগাড়াল জায়গা মিঠাপুকুর থানার বলদিপুকুরের এক মেটেরাস্তায় ঘাসের ওপর পা ছড়িয়ে বসবে অনীক রেজা, আঁটো জিনের ট্রাউজার পায়ের পেশি টেনে ধরবে এই তরুণ ভাস্কর্যশিল্পীর; সিক্ত ঘাস-মাটি ধীরে ধীরে ভিজিয়ে দেবে তার পরনের কাপড়, একদঙ্গল লালচে কালাে পিপড়া চলার পথে বাধা পেয়ে সার বেঁধে উঠে পড়বে তার বাঁ পায়ের কেডসের ওপর, একটু দূরে একটা গাছের নিচে মারা হয়ে থাকবে একটা কিশশি বা শূকর; তার রক্ত জমাট বাঁধবে কি বাঁধবে না ঘাস-মাটি-শুকনাে। পাতায়, স্বল্পবাস কালাে কালাে ওরাও বালকেরা বৃত্ত রচনা করবে ওই শূকরশরীরের তৃণশয্যাটিকে ঘিরে, দু'পাশে ধানের ক্ষেত পড়ে রইবে শূন্য রিক্ত, ধানকাটা হয়ে গিয়ে থাকবে আগেই, পতিত ধানের লােভে ক্ষেতে চরবে। মেঠো ইঁদুর, ইদুরের লােভে আকাশে বেশ নিচু দিয়ে উড়বে বাজপাখি; একদল খালিগা-লুঙ্গিপরা ওরাও কিষান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসা থাকবে অনীকের আশপাশেই, তাদের কালাে মুখের মধ্যে ঝিলিক দেবে অমলিন দাঁতের সারি; লােকগুলাের পাশেই হাতে খুরপি কি ডালি হাতে শরীর বেঁকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে কতগুলাে ওরাও-কিষানী; এই ভদ্রপােশাক পরা বাবু লােকটা তাদের পুরুষগুলাের সঙ্গে কী কথা বলছে, তারা কান উচিয়ে শােনার চেষ্টা করবে, আকাশ নীল, ঘন, তীব্র, উজ্জ্বল; মেঘগুলাে সাদা সাদা, স্থির, ভাসন্ত (জিলেট শেভিং ফোমের মতাে-অনীক ভাববে), রােদ পড়বে তেরছা হয়ে-পাতায় পাতায় পিছলে যাবে রশিগুলাে; এদিকে-ওদিকে ওরাওদের বাড়িঘর-ওই তাে একটা বাড়ির পেছনে কলাগাছ জংলি গাছগুলাের আধেক আড়ালে টিউবওয়েলের পাড়ে স্নান করতে আসছে। একটা ওরাও রমণী-অনীক একবার দৃষ্টি ফেলে ফিরিয়ে নেবে; খানিক দূরে বাঁশ-বাবলা-বরই-তেঁতুল-মান্দার-শেওড়াগাছের কালাে-সবুজ জঙ্গলে ডেকে উঠবে একটা ঘুঘু; অনীক রেজা ওরাও-বসতিগুলাের দিকে আবছা দৃষ্টি বুলিয়ে বােঝার চেষ্টা করবে ঠিক কোন জায়গাটায় ছিল বুদু ওরাওয়ের ঘর,