পাথরের ছামগুলাে থেকে জল নামতে শুরু করেছিল। নামা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। আশ্বিনের শেষ ভাগ থেকে। এখন জল খুব একটা বেশি নেই। যা আছে তা সপ্তাহ কাল কি পক্ষকালের মধ্যে নেমে যাবে। দিগন্ত বিস্তৃত পাথরের বুকে ইতোমধ্যে কয়েকটি ছমি জেগে উঠেছে। যেন জলে ভাসান ধরে অাহে মহি! কোপরা নয়ায় গোহালার যেখানটাতে বছর বয় স্থানের শেখের খেয়া পড়ে, গোহালার পূর্ব পাড়ে যেথন থেকে শুরু হয়েছে ফুলবাড়ি ছাম, সেখানে নৌকো ভিড়িয়েছিল কৈলাশ। লগির সাথে বাঁধা নৌকো ঢেউয়ের দোলায় মৃদু মৃদু দুলছিল। লোলা লেগেছিল কৈলাশের বুকেও। এইতাে আর কটা দিন মাত্র! তারপর শুধু কাজ আর কাজ। দিন-রাতব্যাপী ব্যস্ততা। নৌকোর গলুইয়ে বসে জল ঠেলে ওঠা ছামগুলাের দিকে অপলক চোখে তাকিয়েছিল কৈলাশ। মাছের মত পিঠ জাগিয়ে ভাসান ধরে আছে ছামগুলাে। -কি নমুদের সেই আদি-মাতা দেবীই আবার জল ঠেলে ঈঠে আসছে এখন? কুলু-কু গবে গােহালার বুকে জল নেমে যাচ্ছে। সফেন জলের ধারা। কুলুকুল রব যেন ধীর লয়ের বিলাপ! ছামগুলাে থেকে জল নেমে যাচ্ছে গােহালায়। অম্বিঢ়ের শুরুতে যে জল ফুণী বিস্তার কত্রে গ্রাস করেছিল পাথরকে এখন । নেমে, যাচ্ছে। দ্রুত নেমে যাচ্ছে। যেন কত তাড়া আছে তার। এতদিন পরে বুঝি আবার ঘরের কথা মনে হয়েছে। বুঝি কেউ তাকে হাতছানি দেয় ডাকছে। যে ডাক উপেক্ষা করার নয়। ফুলবাড়ি, ভূতের ছম, দাপুনিয়া, মানিকের টেক, ভানিকাদে সমস্ত স্থান থেকে একযোগে নেমে যাচ্ছে জলের ঢল। চারটি মাস জলের তলে ডুবেছিল পাথরের এই ছমিগুলাে। প্যাচের খাল ধরে, পদ্মমারীর নয়ন জুলি বেয়ে, ধলাইয়ের খাল বেয়ে, ছাইভাঙ্গা, কোপরার পাশ দিয়ে অনবরত ঘােলা জল ছুটে আসছে গােহালায়। বিরাম নেই, বিরতি নেই, পেছনে তাকাবার ফুসরত নেই। ঘােলা জলের আবর্ত বুকে নিয়ে গােহালা ছুটে চলেছে ভাটার দিকে। গােহালার বুকের আওর ভেঙ্গে ছিটকে ছিটকে উঠছে মাছের ঝাঁক। জলের মত তারাও এখন ছােটার আনন্দে দিশেহারা। মানুষ এমন করে ছুটতে পারে না বলেই কি-না এই আনন্দ উদ্বেল গতি তাদের সহ্য হয় না। তারা তাই এই মীন জাতির পথ আটকে দিতে চায়। আওর ভেঙ্গে ছিটকে ওঠা মাছ দেখছিল কৈলাশ। নৌকোর পাশেই আওর ভেঙ্গে এক ঝাঁক মাছ ছিটকে উঠল।