"শুভ্র" বইয়ের ভূমিকাঃ
শুদ্ধতম মানুষ কেমন হবে ? অনেক প্রশ্নের মতাে এই প্রশ্নটা আমার মনে প্রায়ই আসে। আমি আমার চারপাশের মানুষজন খুব মন দিয়ে দেখি। এক ধরনের গােপন অনুসন্ধান চলতে থাকে—যদি কোনাে শুদ্ধ মানুষের দেখা পেয়ে যাই। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েতাে আমি শুদ্ধতম মানুষ খুঁজে বের করতে পারব না। আমাকে খুঁজতে হবে আমার পরিচিতজনদের মধ্যে । দীর্ঘ দিনের অনুসন্ধানে কোনাে লাভ হয় নি। শুদ্ধ মানুষ আমাকে সৃষ্টি করতে হয়েছে কল্পনায়।
শুভ্র সে রকম একজন। বেচারার চোখ খুব খারাপ। চোখ থেকে চশমা খুলে ফেললে সে প্রায় অন্ধ। তার ক্লাসের বন্ধুরা তাকে ডাকে কানাবাবা! শুদ্ধ মানুষের চোখ খারাপ হতে হবে এমন কোনাে কথা নেই। তাকে চোখ খারাপ দেখানাের পেছনের প্রধান যুক্তি সম্ভবত আমি, আমার নিজের চোখও ভয়ঙ্কর খারাপ (পাঠকরা দয়া করে ভাববেন না যে আমি নিজেকে খুব সূক্ষ্মভাবে শুদ্ধতম মানুষ বলার চেষ্টা করছি। কোনাে শুদ্ধ মানুষের একশ' গজের ভেতর যাবার যােগ্যতা আমার নেই)। যাই হােক, শুভ্র চরিত্রটি তৈরি হলাে। বেশ কিছু উপন্যাস লিখলাম | শুভ্রকে নিয়ে, যেমন রূপালী রাত্রি, দারুচিনি দ্বীপ। তারপর হঠাৎ করেই শুভ্রকে নিয়ে লেখা বন্ধ করে দিলাম । আমার কাছে মনে হলাে আমি ভুল করছি, শুদ্ধতম, মানুষ বলে কিছু নেই। শুভ্র চরিত্রটি নতুন করে লিখতে হবে।
বর্তমান উপন্যাসটি ‘শুভ্র' নামে পাক্ষিক ‘অন্যদিন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। খুবই অনিয়মিতভাবে লিখেছি। এক সংখ্যায় লিখলাম, পরের দু’সংখ্যায় লিখলাম না—এ রকম। শেষের দিকে এসে কোনাে রকম ঘােষণা ছাড়াই লেখা বন্ধ করে দিলাম। অন্যদিন’-এর পাঠক-পাঠিকা এবং বিশেষ করে পত্রিকা সম্পাদকের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। মানুষ মাত্রই ক্ষমা করতে পছন্দ করে। তারা আমাকে ক্ষমা করবেন বা ইতিমধ্যেই ক্ষমা করে দিয়েছেন, এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
হুমায়ূন আহমেদ ধানমণ্ডি, ঢাকা।
Shuvro,Shuvro in boiferry,Shuvro buy online,Shuvro by Humayun Ahmed,শুভ্র,শুভ্র বইফেরীতে,শুভ্র অনলাইনে কিনুন,হুমায়ূন আহমেদ এর শুভ্র,9789845027045,Shuvro Ebook,Shuvro Ebook in BD,Shuvro Ebook in Dhaka,Shuvro Ebook in Bangladesh,Shuvro Ebook in boiferry,শুভ্র ইবুক,শুভ্র ইবুক বিডি,শুভ্র ইবুক ঢাকায়,শুভ্র ইবুক বাংলাদেশে
হুমায়ূন আহমেদ এর শুভ্র এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 382.50 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Shuvro by Humayun Ahmedis now available in boiferry for only 382.50 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন |
হার্ডকভার | ২৪০ পাতা |
প্রথম প্রকাশ |
2000-02-01 |
প্রকাশনী |
অন্যপ্রকাশ |
ISBN: |
9789845027045 |
ভাষা |
বাংলা |
ক্রেতার পর্যালোচনা
1-1 থেকে 1 পর্যালোচনা
-
পর্যালোচনা লিখেছেন 'Siraajam Binte Kamal'
হুমায়ূন আহমেদ ভাবতেন একজন শুদ্ধতম মানুষ কেমন হবে। তিনি তার চারপাশের মানুষজনকে মন দিয়ে দেখতেন, তাদের মধ্যে শুদ্ধতা খুঁজতেন। কিন্তু মানুষ তো ফেরেশতা না, যে তার ভুলত্রুটি হবে না, সে শুদ্ধ হবে। অবশেষে তিনি তার কল্পনায় ❝শুভ্র❞ নামের একটি চরিত্র বেছে নিয়ে তাকে শুদ্ধতম মানুষ হিসেবে বেছে নেন।
কিন্তু পাঠক বইটি পড়লে আসলেই দ্বিধান্বিত হবে, শুভ্র কি আসলেই শুদ্ধ মানুষ!?
শুভ্র বড়লোক বাবার, সুপার ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। কিন্তু সে প্রায় অন্ধ। চশমা খুলে ফেললে সে কিছুই দেখে না। তার মা জাহানারা, তাকে অসম্ভব আদর করেন। শুভ্রর বাবা মোতাহার সাহেবও ছেলের কোন শখ অপূর্ণ রাখেন না।
শুভ্রদের বাড়িতে দূর সম্পর্কের আত্মীয়া বিনু ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে। শুভ্র আর বিনু হয়তো একে অন্যকে পছন্দ করে, আসলেই কি তারা একে অন্যকে পছন্দ করে, এই প্রশ্নটা শুভ্রর মা জাহানারাকে উলট পালট করে দেয়। তিনি ছেলের পাশে বা ছেলের মুখে বিনুর কথা একসমই সহ্য করতে পারেন না।
অন্যদিকে শুভ্রর ক্লাসমেট মীরা শুভ্রকে অসম্ভব পছন্দ করে। কিন্তু শুভ্র কিছুই বুঝে না, আবার মীরাও বুঝাতে চায় না। মীরা, শুভ্রর জীবনের সব ঝামেলার দিনে তার পাশে থাকতে চায়। মীরা চায়, শুভ্র অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঝামেলায় যেনো না জড়ায়।
এছাড়াও আরও অনেক চরিত্র রয়েছে বইটিতে। যেমন: বিনুর বাবা, মীরার বাবা, শুভ্রদের ম্যানেজার, তাদের বাড়ির পাহারাদার, আসমানী এরা মোটামুটি কেন্দ্রীয় চরিত্র যাদের নাম বারবার উঠে এসেছে। এছাড়াও রয়েছে আরও অনেক চরিত্র।
উপন্যাসটি পড়তে পড়তে আমরা একসময় দেখতে পাবো, শুভ্রর বাবা মারা যায়। তিনি মারা যাওয়ার পর শুভ্রর জীবনের এক ভয়ংকর সত্য বেরিয়ে আসে। আর সে ক্রমশই তাতে জড়িয়ে পড়ে। আর এই কাহিনী নিয়েই বইয়ের বাকি অংশের বর্ণনাপ্রবাহ চলতে থাকতে। চলে আসে আরও নতুন চরিত্র। কিন্তু বইয়ের শেষদিকে শুভ্র নিজেকে শুদ্ধ ও পবিত্র মানুষ হিসেবে মনে করে। সে একটা আশ্রম দিতে চায়, যেখানে দুঃখী মেয়েরা থাকবে, যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আর এই কাজে সে বিনু মেয়েটির সাহায্য চায়।
আমরা আরও দেখতে পাবো, শেষের দিকে শুভ্র বিনুকে বলে সে চোখে কিছুই দেখে না। কিন্তু এই কথা শুনলে তার মা কষ্ট পাবে বলেই সে এটা গোপন করে রাখে। বইয়ে, একজন মায়ের প্রতি একজন ছেলের ভালোবাসা, সকল পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং কোন কিছুকেই তেমন কেয়ার না করার একটা ছবি আমরা শুভ্রর মধ্যে দেখতে পাবো। শুভ্রর মধ্যে আরও দেখতে পাবো, সকল সত্যকে সানন্দে মেনে নেওয়া এবং সেই অবস্থান থেকেই ভালো কিছু করার চেষ্টা।
শুভ্রর জীবনে দুইজন নারীকেই আমরা দেখতে পাবো। যারা শুভ্রর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তারা হলো তার মা জাহানারা এবং তার প্রেয়সী বিনু। বইয়ের শেষ পাতায় দেখতে পাই শুভ্র বিনুকে মনে মনে বলে,❝মা'র ভালোবাসায় আমি এতদূর এসেছি। এখন নিজেকে সমপর্ণ করলাম তোমার কাছে। তোমার ভালোবাসা দিয়ে আমাকে পবিত্র কর। আমি শুদ্ধতম মানুষ হতে চাই।❞
▫️যা ভালো লেগেছে:
বিনু চরিত্রটা খুবই ভালো লেগেছে, মীরা চরিত্রটাও ভালো। শুভ্রর মায়ের ক্যারেক্টার খুব ফানি। কারণ, তিনি সারাক্ষণ সন্দেহে থাকেন। কোন মেয়ে তার ছেলের পাশে থাকলেই তিনি তা সহ্য করতে পারেন না। সাধারণত বাঙালি মায়েরা এমনই হন হয়তো। আসমানী মেয়েটার হুট করে বলে দেওয়া কথায়ও সমাজের অনেক সত্যরূপ প্রকাশিত হয়েছে।
▫️ভালো লাগেনি যা:
শুভ্রর বাবা মারা যাওয়ার দিন কুরআন খতম করছিলো। আর সেখানে বারবার একটি আয়াতই শুনা যাচ্ছিলো তা হলো, ❝ফাবি আইয়্যি আলায়্যি রব্বিকুমা তুকাযযিবান।❞ (সূরা আর-রহমান) কিন্তু বইয়ে আয়াতখানি লেখা হয়েছে, ❝ফাবিয়ায়ে আলা ওয়া রাব্বিকুমা তুকাযযিবান।❞ এভাবে লেখাতে আয়াতের অর্থও বদলেছে এবং হুমায়ূন আহমেদের অজ্ঞতার-ও প্রমাণ পাওয়া গেছে। যদি তিনি জানতেন তাহলে এই ভুলটা করতেন না। বা পরবর্তীতে সংস্করণের ক্ষেত্রেও কেউ ব্যাপারটি খেয়াল করেনি। লেখাটা ঠিক করে দিলে ভালো হয়। এছাড়াও জান্নাত জাহান্নাম নিয়ে বইয়ে কিছু কিছু কথা রয়েছে যেগুলো মূল হাদীসের মতো না বা মূল তথ্যের মতো না। এটাও ভালো লাগে নি। আবার কিছুটা ফানিভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে।
▫️ভালো লাগার কিছু উক্তি:
▫️সত্যবাদী মানুষ কখনো খারাপ হতে পারে না।
▫️মানুষের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের পেছনে কারণ থাকে।
▫️মানুষ গল্প চায়। মৃত মানুষের কোন গল্প থাকে না।
▫️একজন মানুষকে এই পৃথিবীতে নানান ভূমিকায় অভিনয় করতে হয়। পিতার ভূমিকায়, স্বামীর ভূমিকায়, বন্ধুর ভূমিকায়,......। সবাই সব অভিনয় ভালো পারে না।
▫️আমাদের সমস্যাগুলি পরীক্ষার মত। নিজের পরীক্ষা নিজেরই দিতে হয়।
June 20, 2022
লেখকের জীবনী
হুমায়ূন আহমেদ (Humayun Ahmed)
বাংলা সাহিত্যের এক কিংবদন্তী হুমায়ূন আহমেদ। বিংশ শতাব্দীর বাঙালি লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও নাট্যকার এ মানুষটিকে বলা হয় বাংলা সায়েন্স ফিকশনের পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। বাদ যায়নি গীতিকার কিংবা চিত্রশিল্পীর পরিচয়ও। সৃজনশীলতার প্রতিটি শাখায় তাঁর সমান বিচরণ ছিল। অর্জন করেছেন সর্বোচ্চ সফলতা এবং তুমুল জনপ্রিয়তা। স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালি জাতিকে হুমায়ুন আহমেদ উপহার দিয়েছেন তাঁর অসামান্য বই, নাটক এবং চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রের বদৌলতে মানুষকে করেছেন হলমুখী, তৈরি করে গেছেন বিশাল পাঠকশ্রেণীও। তাঁর নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ দেখতে দর্শকের ঢল নামে। এছাড়া শ্যামল ছায়া, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, ঘেটুপুত্র কমলা প্রভৃতি চলচ্চিত্র সুধীজনের প্রশংসা পেয়েছে। অনন্য কীর্তি হিসেবে আছে তাঁর নাটকগুলো। এইসব দিনরাত্র, বহুব্রীহি, আজ রবিবার, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়ো আজও নিন্দিত দর্শকমনে। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের জনক তিনি। রচনা করেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্পের মতো সব মাস্টারপিস। শিশুতোষ গ্রন্থ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মিলিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমূহ এর পাঠক সারাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে। হুমায়ূন আহমেদ এর বই সমগ্র পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৯৪), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূধন দত্ত পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদকসহ নানা সম্মাননা। হুমায়ূন আহমেদ এর বই, চলচ্চিত্র এবং অন্যান্য রচনা দেশের বাইরেও মূল্যায়িত হয়েছে৷ ১৯৪৮ সালের ১৩ই নভেম্বর, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলায় কুতুবপুরে পীরবংশে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনের বেলভ্যু হাসপাতালে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। গাজীপুরে তাঁর প্রিয় নুহাশ-পল্লীতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।