ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা
হাজার বছর ধরে বাঙালি জাতি লড়াই সংগ্রাম করেছে, তার আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা ও শোষণ বৈষম্যের জোয়াল ছিন্ন করতে। সেই জন্য চেয়েছে স্বাধীনতা, সাম্য গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র।
মুক্তিযুদ্ধে এসব অর্জিত দর্শনগুলো দৃশ্যমান হয়েছে প্রতিনিয়ত; যার মৃত্যু নেই। সেই একত্রিত স্বপ্নগুলো বাঙালির জাতির রক্ত দিয়ে অর্জন করেছে। মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ শহীদের রক্তের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষাগুলো বাহাত্তর সনে রচিত সংবিধানের প্রতিটি বর্ণে, বাক্যে এবং অনুচ্ছেদের শব্দগুচ্ছে রোপিত হয়েছে, শিকড়ের বহমান ঐতিহ্যে শতবন্ধনে প্রথিত। রক্তে লেখা এই সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের দলিল। পথ চলার অনির্বাণ অঙ্গীকার। কিন্তু এই দলিল বিভিন্ন সময়ে কীভাবে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে, এই বইতে তা আলোচিত হয়েছে।নিরপেক্ষ দষ্টিভঙ্গিতে।
ভূমিকা
লক্ষ শহীদের রক্ত-অক্ষরে লিখিত মুক্তিযুদ্ধের দলিল, বাহাত্তরের সংবিধান। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত আদর্শ ও মূল্যবোধ এর প্রতিটি বর্ণে, শব্দে, বাক্যে, অনুচ্ছেদে অঙ্কীকার-উদ্দীপ্ত। এর তাৎপর্য সমাজ ও জীবন জড়িয়ে উন্নত রাষ্ট্র-নির্মাণ। এই নির্মাণ-কাঠামোয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিপেক্ষতা মৌল স্তম্ভ, যা এগারটি ভাগে, একশ তেপ্পান্নটি অনুচ্ছেদ এবং চারটি তফসিলে প্রথিত।
জাতীয় দলিল, রক্ত-লেখা সংবিধান রাতের আঁধারে সঙ্গীনের ডগায় বিদ্ধ হল। আক্রামণ করা হল স্বপ্নময় আদর্শগুলোকে সামরিক ফরমানে লন্ডভন্ড করা হল রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিকে।
সংবিধান শুধুমাত্র তার সীমানা-চৌহদ্দীতে আবদ্ধ নয়। এর অবৈধ পরিবর্তন, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা এবং আত্ম-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলকে ওলোট-পালট করে ফেলে, যা রাষ্ট্রকে ধাক্কা দিচ্ছে, এমনকি শেখড় উপড়ে ফেলার নিষ্ঠুর তৎপরতা ক্রমাগত প্রবল হচ্ছে।
বাংলাদেশের জম্ম-আদর্শকে ধ্বংস, বাঙালি জাতিসত্তায় আঘাত, কেউ বাঙালি, কেউ বাংলাদেশী। মুক্তিযুদ্ধের রণধ্বনি ‘জয় বাংলা’ এককজাতি গঠনের বিপরীতে দ্বিধান্বিত এখন, আরোপিত উচ্চারণ পাকিস্তানের ‘জিন্দাবাদ’-কে আমদানি করা হয়েছে। রাজনীতিতে ধর্ম-কে ব্যবহার, যা মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা পাকিস্তান আমলে ব্যবহার করেছে; তারিই জলমাতা হাতে ছলনা ও প্রতারণার দম্ভ ঘোষণায় সদা নিয়ত। এই সুযোগে আঘাত করছে রাষ্ট্রের শরীরকে এবং মর্মমূলে।দুই অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটি ধনী-লুটেরাদের, আরেকটি গরীবদের। একদিকে বঞ্চিত মানুষের আর্তনাদ অন্যদিকে অপরিমেয় ভোগ ও জৌলসের অবাঞ্ছিত উৎসব। বৈষম্যের বৃত্তে বন্দী হয়েছে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ, বিত্তবানদের জন্য শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, ‘রাজা’ তৈরির ভিন্ন পাঠ্য ও প্রজাদের জন্য প্রামীণ পাঠশালা এবং ইতিহাস ঐতিহ্য বিবর্জিত ‘আখেরাতের’ শিক্ষা। এভাবে মগজ ধোলাই হচ্ছে জন্ম থেকে, সৃষ্টি হচ্ছে পরস্পর বিরোধী বিভাজিত সমাজ। গণতন্ত্রের কথা বললেও দলীয়তন্ত্রের তাণ্ডব মেধ-মনন ও সষ্টিশীলতাকে তাড়িয়ে বেরাচ্ছে।রাষ্ট্রপিতা ও রাষ্ট্রপতি খুন হন, ‘দেশপ্রেমিক’ বাহিনীর উদভ্রান্ত একাংশের হাতে। বিচারকে করা হয় অবরুদ্ধ।জনগণের কল্যানে নিবেদিত সম্পত্তি কল-কারখানার বিক্রি হয়ে যায় বিদেশী বেনিয়াদের শর্তে, পানির দরে। কর্মস্থান নেই, বেকারত্ব ফুঁসে উঠছে। ঘুষ-দুর্নীতি যেন জাতীয়করণ হয়েছে, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তার অনুপ্রবেশ।সরকার ব্যবস্থা এককেন্দ্রিক। গণতন্ত্রের উপরি-কাঠামো জবাবদিহিহীন কর্তৃত্বের কব্জায়। তৃণমূলে চিরায়িত শোষণ-বঞ্চনা অপ্রতিহত। রাষ্ট্র দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে ‘হ্যাঁ’-এর দল, অন্যদিকে ‘না’-এর আস্ফালন
গ্রন্থটি সংরচনায় নানাজন আগ্রহ ও উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। দিলরুবার সহযোগিতা, আহৃতা অনিন্দ্য অনিম দূরে থেকে তাকিয়ে থাকা ক্লান্তি হরণের সাথী। প্রকাশক সূচীপত্রের সুজন, সাঈদ বারীর একান্ত আগ্রহ ও জুয়েলের ক্লান্তিহীন বর্ণবিন্যাস মনে রাখার মত।
আবু সাইয়িদ
১ ফেব্রুয়ারি, ২০১২
ঢাকা
সূচিপত্র
প্রথম অধ্যায় : মহৎ স্বপ্ন ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষার মৃত্যু নেই
রাজা যেখানে প্রজা, কালো টাকা : কালো মানুষ, কীর্তনের আসর, নতুন নাম : স্পীড মানি, জঙ্গী-দৌরাত্ম্য, কৃষকের মুক্তি আসেনি, তিন ততবেশি ‘সুনামী’, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, রাজনীতিকে ‘খাবলে’ ধরছে, নৈরাজ্য ধাবমান, কর্মী নয় কামলা, ক্রিমিনাল মানি, ঘুষ খাও, চুর কর, দল নিবন্ধন, ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত, ছোঁয়া পেতে হবে, গ্রাস কর সবকিছু, গান স্যালুট, বেহাল জনপ্রতিনিধি, ঋণ খেলাপীদের জন্য কারাগার নির্মিত হয়নি, দুই অর্থনীতি, আধা খেঁচড়া, মহৎ স্বপ্ন ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা
দ্বিতীয় অধ্যায় : লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা দলিল
জীবনের অঙ্গীকার, মাত্র সাত মাসে সংবিধান, গণপরিষদ, সংগ্রাম শুরু হল, আশু কর্তব্য একই তারিখ।সাল দুটি, স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কীয় প্রস্তাব রক্ত যেন বৃথা না যায়, রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার পরিবর্তে, হর্স ট্রেডিং, চার মূলনীতি আদর্শ ও লক্ষ্যহীন রাষ্ট্র সংবিধানের মুদ্রিত সংখ্যা কত?
তৃতীয় অধ্যায় : সংবিধান উপেক্ষা করার দায়-দায়িত্ব
জাতীয় ঐক্যের দোহাই, বিশ্ব পরিসরে বৈরিতা : বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ, চক্রান্তের নানা দিক সংবিধানের প্রথম সংশোধন, সংবিধান লন্ডভন্ডের গোড়ান কথা, সংবিধানকে আঘাত, একটি বড় মাপের ঝুঁকি ছিল
চতুর্থ অধ্যায় : প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সশন্ত্র আক্রামণ
সে রাতে ঘুম নেমেছিল, চক্রান্তের বিচিত্রজাল : জাতীয় ও আন্তজাতিক, বঙ্গবন্ধুর অনীহা, জরুরী আইনের অপরিহার্যতা
পঞ্চম অধ্যায় : সমাজ বিপ্লবের ব্লু-প্রিন্ট
বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ, নির্বাচন পদ্ধতি, রাস্ট্রপতি নির্বাচন, স্থানীয় সরকার, জাতীয় সংসদ, প্রশাসন, বিচার-ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক দিক, সামাজিক দিক
ষষ্ঠ অধ্যায় : অন্ধকারের দিনগুলো
সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে, বার্তার মর্মকথা, দলবিধির তেলেসমাতি, বঙ্গভবনে নাটক, ভোটের তামাশা, বিদেশী পত্রিকার মতামত, সংবিধান লন্ডভন্ড, মুক্তিযুদ্ধের হৃদপিণ্ডে ছুরি, কোলোবোরেটর্স আদেশ বাতিল, ‘সার্বভৌম সংসদ’-এর নমুনা, প্রেসিডেন্ট পদ্ধতি, নির্বাহী ক্ষমতা, জাতীয় সংসদের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা, সামরিক প্রধানও নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে, হত্যা-খুনের অব্যাহতি, উৎপাদনের রাজনীতি, মানি ইজ নো প্রব্লেম, জাতীয় আয় বৃদ্ধি হয়নি, জিয়ার আমলে : দ্রব্যমুল্য, ফ্রন্ট : জগা খিচুড়ি, সংবিধান তোয়াক্বা না করা, গণতন্ত্রের দফা-রফা, পার্লামেন্ট নির্বাচন, দলকে টুকরো টুকরো করো, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, পরিকল্পিত ব্লু-প্রিন্টের বিজয়, পার্লামেন্ট নির্বাচন : সশন্ত্র সদস্যদের হুমকি, অপপ্রচার, দশ হাজার অন্ত্র, প্রধান মুক্তি পেলেন, রঙিন চশমা, সন্ত্রাস, পুলিশের রিপোর্ট, প্রিন্সেস সংস্কৃতি, অপরাধ’৭৫ সনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশী, সংসদে দেশের চিত্র
সপ্তম অধ্যায় : গোঁজামিলের সংবিধান
সংবিধানের সামরিক শাসন অবৈধ, মূলনীতি, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, ধর্ম নিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পররাষ্ট্রনীতি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বহাল, দালাল আইন বলবৎ, সদস্য পদ, নির্বাচন অনুষ্ঠান, সংশোধনীর অযোগ্য, অমলিন ইতিহাস
অষ্টম অধ্যায় : সংবিধান সংশোধনের ধারাবাহিকতা : জগা-খিচুড়ি
অধ্যাপক আবু সাইয়িদ এর মুক্তিযুদ্ধের দলিল লণ্ডভণ্ড এবং অতঃপর এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 316.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Muktijudder Dolil Londobondo And Otopor by Professor Abu Sayedis now available in boiferry for only 316.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.