বুড়িগঙ্গার ওপারে, স্বাধীন বাংলায় ডক্টর গোবিন্দ দেবের বাসা থেকে বেরিয়ে আমরা জগনড়বাথ হলের প্রোভোস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের জনপ্রিয় শিক্ষক ডক্টর জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরদাকে দেখতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাবার কথা ভাবছিলাম। আমি তাঁকে ব্যাক্তিগতভাবে জানতাম। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত মানবতাবাদী দার্শনিক মানবেন্দ্র রায়ের শিষ্য। আমার পিসেমশাই স্বর্গীয় যতীন্দ্র বল মানবেন্দ্র রায়ের শিষ্য ছিলেন। তাঁর রেফারেন্সেই আমি একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর কক্ষে গিয়ে তাঁর সঙ্গে পরিচিত হই। আমি যে কবিতা লিখি, তিনি জানতেন। সেদিন তিনি আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন এবং আমাকে তাঁর বাসায় যেতে বলেছিলেন। আজ যাবো কাল যাবো করে আমার আর তাঁর বাসায় যাওয়া হয়নি। ডক্টর দেব রিটায়ার করার পর তিনি জগনড়বাথ হলের প্রোভোস্ট হন। শহীদ মিনার সংলগড়ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোয়ার্টারে তিনি থাকতেন। জানতাম তাঁর পুত্র নেই, আছে একমাত্র কন্যা মেঘনা আর স্ত্রী বাসন্তী গুহঠাকুরতা। বাসন্তী দেবী মনিজা রহমান গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। ২৬ মার্চের সকালে জ্যেতির্ময়বাবু পাকসেনাদের হাতে গুলিবিদ্ধ হন। পাকসেনারা ভেবেছিল তিনি মারা গেছেন। কিন্তু তিনি তখনও মারা যাননি। ডক্টর দেবের বাসায় গিয়ে একজনের কাছে জানলাম, কোনো মে প্রাণে বেঁচে গিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেনÑ। এই খবরটি জানার পর আমার খুব ইচ্ছে হল, হাসপাতালে গিয়ে স্যারকে দেখে আসি। আমার প্রস্তাবে হেলাল ও নজরুল হাসপাতালে যেতে রাজি হয়। শেষ পর্যন্ত আমাদের সেই সিদ্ধান্তটি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।