পাশের বাড়িতে কী হয়েছে জানেন, চাচি? কথাটি বলেই হাবলু হাঁপাতে লাগল। তার এই এক বদভ্যাস, কোনো উত্তেজনামূলক খবর হলে মিনিট দুয়েক হাঁপিয়ে তারপর খবরটা বলবে। হাবলুর এহেন হাঁপানি দেখে সালেহা বেগম বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে ভ্রূ কুঁচকে বললেন, না হাঁপিয়ে কী হয়েছে সেটি বল?
সালেহা বেগম হলেন হাবলুর মালকিন। ছোটোবেলায় হাবলু তার বাবা-মাকে হারানোর পর উনার কাছেই মানুষ হয়েছে। উনি মানুষটা বেশ ভালো, কারও কোনো সমস্যা হলে চুপ থাকতে পারেন না, দৌড়ে গিয়ে সাহায্য করেন। এজন্য গ্রামে বেশ নাম-ডাক আছে তার। সবাই উনাকে ‘সালু বুবাই’ বলে ডাকে।
হাবলু হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, পাশের বাড়ির মদিনা চাচি তো জ্ঞান হারাইয়া পইড়া আছে। উঠানে নাকি একটা মাইয়ারে কাফনের কাপড় পইরা ঘুরতে দেখছে এর লাইগা। এহন পর্যন্ত জ্ঞান ফিরে নাই। সবাই তো ভাবতাছে তিনি হয়তো জিন দেইখা ডরাইছেন!
হাবলুর কথা শুনে সালেহা বেগমের বিরক্তিটা আরও বেড়ে গেল। বিরক্তির সুরে বললেন, মদিনার জ্ঞান ফেরে নাই, তাইলে সবাই জানল কেমনে যে, সে একটা মাইয়ারে কাফনের কাপড় পইরা ঘুরতে দেইখা অজ্ঞান হয়েছে?
সালেহা বেগমের কথা শুনে হাবলু পুনরায় হাঁপাতে লাগল। এই হাঁপানোটা উনার বিরক্তির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিলো। এই বদভ্যাস ঠিক করার জন্য কত কিছুই না করলেন। উনার ধারণা, এ হাঁপানোটা হাবলুর একটা রোগ, তাই গ্রামের কবিরাজ থেকে শুরু করে ডাক্তার পর্যন্ত দেখিয়েছেন, কিন্তু ওর কোনো পরিবর্তন হয়নি। হাবলু আরও কিছুক্ষণ হাঁপিয়ে উত্তর দিলো, শুধু তো মদিনা চাচি দেহে নাই, আরও মানুষ দেখছে। সালেহা বেগম অবাক হয়ে দু’গালে দু’হাত দিয়ে বললেন, বলছ কী?
হাবলু চোখ বড়ো বড়ো করে বলল, হ চাচি, সত্য কইতাছি। সালেহা বেগম পানের কৌটা থেকে একটা পান নিয়ে দু’ভাগ করে একভাগ মুখে দিয়ে বললেন, চল যাই, আগে দেইখা আহি ঘটনা কী।
বলেই দু’জন রওনা দিলো মদিনার বাড়ির দিকে। সেখানে গিয়ে দেখল মদিনাকে উঠানে শীতল পাটিতে শুইয়ে রাখা হয়েছে, আর তার চারপাশে অনেক মানুষ বসে আছে। বাড়িটায় লোক সমাগমে ভরপুর। মদিনার উঠানে পা রাখতেই জানতে পারলেন, তিনি আসার ঠিক পূর্ব মুহুর্তে মদিনার জ্ঞান ফিরেছে। তাকে দেখে সবাই বলে উঠল, এই যে সালু বুবাই আইছে, এহন একটা ব্যবস্থা হইব।
সবাই জায়গা করে দিতে লাগল। উনি মদিনার কাছে গিয়ে শীতল পাটিখানায় পা দুটো ভাঁজ করে বসে বললেন, কীরে মদিনা, এহন কেমন লাগতাছে? কী হয়ছিল বল তো, হঠাৎ কইরা হুঁশ হারাইলি কেন?
সালেহা বেগমকে দেখে মদিনা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে উত্তর দিলো, জানি না সালু বুবাই, কী হইছিল আমার। রাত তহন তিনডা, আমার পেটে মোচর দিলো। আমি বাহির হইছিলাম টয়লেটে যাওনের লাইগা। টয়লেট শেষে দেহি একটা সাদা কী জানি উঠানে ঘুরতাছে। আমি একটু সামনে আগাইতেই খেয়াল করলাম, একটা মাইয়া কাফনের কাপড় পইরা ঘুরতাছে। মাইয়াডা আমার দিকে তাকাইয়া একটা হাসি দিলো। আর আমি ডরে এমনে পইড়া গেছি। এরপর কী হয়ছে কইতে পারুম না। এহন উইঠা দেহি সহাল হইয়া গেছে। রাইত থেইকা কেমনে সহাল হইলো এইডাও বুঝতাছি না!
. সালেহা বেগম উৎসুক চোখে প্রশ্ন করলেন, তাইলে তোর জ্ঞান ফেরার আগে সবাই কেমনে জানল যে, তুই সাদা কাফনের কাপড় পরা মাইয়ারে দেইখা অজ্ঞান হইছস? মদিনা দম নিতে নিতে বলল, হেইডা তো কইতে পারুম না। তয় আরও কেউ কেউ নাকি এমন দেখছে।
. পাশ থেকে মদিনার মেজো মেয়ে সালেহা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল, চাচি, আমিও মায়ের সাথে বাহির হইছিলাম। আমিও দেখছিলাম। আমিই সবাইরে কইছি, মা এমন দেইখা অজ্ঞান হয়েছে!
ওর কথা শুনে সালেহা বেগম বাকিদের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করলেন, বাকিরাও কি একই জিনিস দেখছেন নাকি?
. সেখানকার অর্ধেক লোক বলল দেখেছে আর বাকি অর্ধেক লোক বলল দেখেনি। সালেহা বেগম সবার কথা শুনে বললেন, যাহোক, আমার তো মনে হয় এটা কোনো বদ-জিনের কাণ্ড। সবাই ঘরে ঢোকার আগে বড়ই পাতা দিয়া গরম পানিতে গোসল কইরা ঢুকবেন। আর আমি মদিনারে ঝাঁড়ফুক করার জন্য মসজিদের ইমামের লগে কথা কমু। মদিনারেও এখন বড়ই পাতা দিয়া গোসল করাইয়া ঘরে ঢোকাও।
কথাগুলো বলতে বলতে সালেহা বেগম বসা থেকে উঠলেন। পানের পিক পাশে ফেলে হাবলুকে বললেন, চল হাবলু, বাড়ি যাই। আমারও গোসল করা লাগব!
. সালেহা বেগম, হাবলুকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হলেন। গ্রামের সবাই বড়ই পাতা দিয়ে গোসল করার আয়োজন করতে লাগল। যে হারে বড়ই পাতা দিয়ে গোসল করা শুরু হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে, গ্রামে বড়ই গাছই থাকবে না।
...
এর এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। by is now available in boiferry for only TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.