ওয়াশিংটন ডিসি। বেছে বেছে সব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি খুন হতে লাগলেন। খুনের পদ্ধতি রীতিমতো নৃশংস। খুনি একজন না, বরং এক জোড়া - দুজন। জ্যাক অ্যান্ড জিল নামে নিজেদের পরিচয় দেয় তারা। শুধু খুন করেই ক্ষান্ত হয়নি এই জুটি, বরং প্রত্যেকটা খুনের জায়গায় ফেলে আসতে লাগলো আত্মম্ভরিতায় পরিপূর্ণ কবিতা। এ যেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জন্য রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়ার মতো। ওয়াশিংটন ডিসির সোজর্নার ট্রুথ স্কুল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ এক আতঙ্ক। ম্যানিয়াক এক খুনি কৃষ্ণাঙ্গ বাচ্চাদেরকে নৃশংসভাবে খুন করে চলেছে। নিজেকে পরিচয় দিচ্ছে 'নোবডি' হিসেবে। স্কুলের শিক্ষকরা, বাচ্চারা ও তাদের অভিভাবকদের রাতের ঘুম কেড়ে নেয়া এই জঘন্য শিশুহত্যাকারী যেন যেকোন মূল্যে নিজেকে জাহির করার চেষ্টায় আছে। সোজর্নার ট্রুথ স্কুলের আশেপাশের বাসিন্দাদের প্রত্যেকটা মুহূর্ত হয়ে পড়েছে দুশ্চিন্তাময়। আমেরিকার শহর থেকে শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক উন্মাদ ফটোসাংবাদিক। খুন হচ্ছে মানুষ। খুনের কোন সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ন আছে কিনা তাও বোঝা যাচ্ছেনা। এই দয়ামায়াহীন ফটোসাংবাদিক সবাইকে অন্ধকারে রেখেই যেন এগিয়ে যাচ্ছে নিজের অভীষ্ট পূরণের লক্ষ্যে। একের পর এক সিরিয়াল কিলারের তাণ্ডবই শেষ কথা না। ওয়াশিংটন ডিসির অধিবাসী সহ পুরো আমেরিকার জনগণের টনক নড়ে উঠলো যখন বোঝা গেলো জ্যাক অ্যান্ড জিল ধীরে ধীরে স্বয়ং মি. প্রেসিডেন্টকে তাদের টার্গেট পয়েন্টে রেখেছে। হোমিসাইড ডিটেকটিভ অ্যালেক্স ক্রস ও তার টিম স্বাভাবিকভাবেই জড়িয়ে গেলো উদ্ভূত এই পরিস্থিতির সঙ্গে। শুধুমাত্র ওয়াশিংটন ডিসিই না, বরং ক্রস সহ অন্যান্যদের তৎপরতা চলতে থাকলো নিউইয়র্কেও। জ্যাক অ্যান্ড জিল তো থাকলোই, আর সেই সাথে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো ভুঁইফোড় শিশুহত্যাকারী। অ্যালেক্স ক্রস আর এইসব দুর্বৃত্তদের মধ্যে জমে উঠলো দারুন এক শ্বাসরুদ্ধকর খেলা। যেটাকে এক কথায় ইঁদুর-বিড়াল খেলা বললেও বোধহয় ভুল হবেনা। পাঠ প্রতিক্রিয়া : জেমস প্যাটারসনের বই বরাবরই আমার খুব পছন্দের। তাঁর জনপ্রিয়তা শুধুমাত্র আমেরিকার গণ্ডিতেই আবদ্ধ নেই, বরং সারা পৃথিবীর সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার প্রেমীদের কাছে তাঁর বইগুলো ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে তাঁর সৃষ্ট অ্যালেক্স ক্রস সিরিজ, ওমেন'স মার্ডার ক্লাব সিরিজ, প্রাইভেট সিরিজ, মাইকেল বেনেট, ম্যাক্সিমাম রাইড অতি জনপ্রিয়। 'জ্যাক অ্যান্ড জিল' লেখকের অ্যালেক্স ক্রস সিরিজের তৃতীয় বই। ১৯৯৬ সালে এটা প্রকাশিত হয়। এর আগের দুটো বই 'অ্যালং কেইম এ স্পাইডার' এবং 'কিস দ্য গার্লস' পড়েছি অনেক আগেই। সেই সময় থেকেই আসলে প্যাটারসনের লেখার প্রতি মুগ্ধতার শুরু। অ্যালেক্স ক্রস বিষয়ক এই উপন্যাসটাতে লেখক আবারো একটা রোমাঞ্চকর কাহিনির অবতারণা করেছেন। এক নয়, বরং একাধিক সাইকোপ্যাথ খুনির চাতুর্যময় কার্যক্রম আর তাদেরকে থামানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া একজন হোমিসাইড ডিটেকটিভের দিন রাত এক করে ফেলাকে বেশ সুন্দরভাবে নিজের লেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। 'জ্যাক অ্যান্ড জিল'-এর সবচেয়ে যে বিষয়টা আমাকে বেশি আকৃষ্ট করেছে তা হলো অকস্মাৎ উপস্থিত হওয়া টুইস্টগুলো। একেবারে অনাকাঙ্ক্ষিত এইসব টুইস্ট আমার পাঠের আনন্দে যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা। এই থ্রিলার উপন্যাসের শেষটাতেও ছিলো আরেক রহস্যের উদিত হওয়ার সঙ্কেত। সেটার ব্যাপারে আর বিস্তারিত না-ই বা বললাম। পাঠক পড়লেই বুঝতে পারবেন। অনুবাদক সাঈদ শিহাবের এর আগের রূপান্তরকর্ম 'দ্য ইনোসেন্ট' ও 'থেরাপি' পড়া হয়েছে আমার। আগের কাজগুলোর মতো 'জ্যাক অ্যান্ড জিল'-এও ছিলো সাবলীলতার ছোঁয়া। পড়তে গিয়ে কোথাও কাঠখোট্টা লাগছে এমন মনে হয়নি। তবে একটা জিনিস সামান্য চোখে লেগেছে। বেশ অনেকগুলো স্থানে খেয়াল করেছি দুটো ভিন্ন ভিন্ন শব্দের মাঝে প্রয়োজনীয় স্পেস দেয়া নেই। যে কারণে দুটো শব্দ একই মাত্রায় হয়ে গেছে। ব্যাপারটাতে খেয়াল রাখা উচিৎ ছিলো। এসব ছাড়াও ছোটখাটো প্রিন্টিং মিসটেক তো ছিলোই। যাই হোক, পরবর্তী মুদ্রণের আগে এসব ভুলভ্রান্তি শুধরে নেয়া হবে এমনটাই আশা। সামিউল ইসলাম অনিকের করা প্রচ্ছদ ভালো লেগেছে। বাঁধাই এবং কাগজের মান নিয়েও কোন কমপ্লেইন নেই। সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার প্রেমীরা পড়ে ফেলতে পারেন 'জ্যাক অ্যান্ড জিল।
জেমস প্যাটারসন এর জ্যাক অ্যান্ড জিল এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 280.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Jack And Jill by James Pattersonis now available in boiferry for only 280.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.