পৃথিবীতে দুটো সম্পদ প্রত্যেকটা শিশুকে জন্মগতভাবে আল্লাহতায়ালা দান করেন। এ সম্পদ দুটোর গভীরতার ব্যাপ্তি নিজে বাবা-মা না হওয়া পর্যন্ত অনুধাবন করা যায় । জীবনের সবটুকু উজার করে দিয়ে এক সময় বাবা-মা নামক বটবৃক্ষ কিছু কিছু সন্তানের বােঝা হয়ে পড়েন। তবুও তাদের হৃদয়গভীরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত যতটুকু সঞ্চিত ভালােবাসা ও উদ্বেগ কাজ করে সবটুকুই তার সন্তানদের জন্য।
Dorpon,Dorpon in boiferry,Dorpon buy online,Dorpon by Ismotara Ahmed Shimu,দর্পণ,দর্পণ বইফেরীতে,দর্পণ অনলাইনে কিনুন,ইসমোতারা আহমেদ শিমু এর দর্পণ,978-984-8854414-6,Dorpon Ebook,Dorpon Ebook in BD,Dorpon Ebook in Dhaka,Dorpon Ebook in Bangladesh,Dorpon Ebook in boiferry,দর্পণ ইবুক,দর্পণ ইবুক বিডি,দর্পণ ইবুক ঢাকায়,দর্পণ ইবুক বাংলাদেশে
ইসমোতারা আহমেদ শিমু এর দর্পণ এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 255.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Dorpon by Ismotara Ahmed Shimuis now available in boiferry for only 255.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন |
হার্ডকভার | ১৪৪ পাতা |
প্রথম প্রকাশ |
2021-10-18 |
প্রকাশনী |
এশিয়া পাবলিকেশন্স |
ISBN: |
978-984-8854414-6 |
ভাষা |
বাংলা |
ক্রেতার পর্যালোচনা
1-1 থেকে 1 পর্যালোচনা
-
পর্যালোচনা লিখেছেন 'আঁখি আক্তার'
রহস্যর প্রগাঢ়তা দাবার চালের মত। একেবারে শেষ পর্যায়ে এসেও বোঝা যায় না কে হারবে আর কে জিতবে।
---সূচনাকথন---
উপন্যাসটি আনন্দ বাড়ী নামে ছোট একটি আকর্ষণীয় মায়াময় বাড়ীর গল্প দিয়ে শুরু হয়েছে। যেখানে উঠে এসেছে জাহানারা বেগম ও রইসুল ইসলামের অভাব অনটকে ঘেরা মধ্যবিত্ত এক সুখী পরিবারের গল্প। তাদের ছেলে সকালের চাকরির সুত্রে একটি বৃদ্ধাশ্রমের মনমুগ্ধকর করুণ কাহিনী বর্ণিত হয়েছে উপন্যাসের সূচনা লগ্নে।
বলা চলে,সামাজিক টানাপোড়নের রহস্য ও মধ্যবিত্ত জীবনের জটিলতা অত্যন্ত নিবিড় ভাবে ফুটে উঠেছে উপন্যাসের পাতা জুড়ে।
---প্রেক্ষাপট---
দর্পণ উপন্যাসটা মূলত অনেকগুলো প্লটের মাধ্যমে সাজানো হয়েছে। বৃদ্ধাশ্রম,উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, বেকারত্ব,দারিদ্রতা,ও সমাজের অনেকগুলো অবক্ষয়ের চিত্র বেরিয়ে এসেছে এতে। ঔপন্যাসিক অনেক চিন্তা করে উপন্যাসের প্লট সাজিয়েছেন। পরপর একি ঘটনা না টেনে বরং প্রতিটা প্লট নিখুঁতভাবে ধাপে ধাপে সাজিয়েছেন।
পিতা মাতা প্রত্যেকটি সন্তানের জন্য নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দেন কিন্তু বিনিময়ে কিছুই চান না।সন্তান কখনো পিতা মাতার কাছে বোঝা হয় না বরং অনেক সন্তান শেষ বয়সে এলে পিতা মাতাকেই বোঝা মনে করেন। এজন্য তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসেন,তারা একবারও ভাবেন না যে বৃদ্ধ সবাইকেই হতে হয়। বর্তমান সময়ে এরকম ঘটনা ক্রমাগতহারে বেড়েই চলছে। ঔপন্যাসিক বইটিতে খুব সুন্দরভাবে এই বিষয়টি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়াও বইটি রহস্যপূর্ণ ঘটনায় পরিপূর্ণ।
---চরিত্রায়ন ----
রইসুল ইসলাম একজন অবসর প্রাপ্ত স্কুল মাস্টার। তার সহধর্মিণী জাহানারা বেগম সারাক্ষণ স্বামীর দুঃখ বিমোচনে ততপর। তাদের ছেলে সকাল একটু খামখেয়ালি স্বভাবের তবে স্পষ্টবাদী।
সকাল ও রাকিব চৌধুরীর কন্যা রায়া চৌধুরী উপন্যাসের মূল কেন্দ্রীয় চরিত্র। চাকরি সুত্রে তাদের আলাপ হয়। দুজনের কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে সমাজের মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত ও সামাজিক কিছু কঠিন বাস্তবতা ফুটে উঠেছে। সকালের বোন সুপ্তী ও ভগ্নিপতি জামিল উপন্যাসের বিশাল একটি অংশ জুড়ে রয়েছে। জামিল চরিত্রটিও বেশ রহস্যজনক। এছাড়াও নাজির,মজিদ শিকদার ও তার স্ত্রী রোকসানা, রকি চৌধুরীর স্ত্রী রুনা চৌধুরীর চরিত্র সৃষ্টিতে ঔপন্যাসিক উজ্জল প্রতিভার প্রমাণ রেখেছেন। রুনা চৌধুরি চরিত্রটাকে এত নিখুঁত ভাবে সাজিয়েছেন যে আমি অবাক হয়েছি বারবার। জটিল এক চরিত্র এই নারী।
এসব মূল চরিত্রের পাশাপাশি জয়া, নীলু তুলি, দিপু ছোট ছোট চরিত্রগুলা তৈরীর মাধ্যমে উপন্যাসের চাঞ্চল্য বৃদ্ধি করেছেন বহুগুণ।
---পাঠ-পর্যালোচনা---
"আনন্দ বাড়ী" নামক মধ্যবিত্ত এক পরিবারের কথা নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে বইটিতে। গল্পের মূল চরিত্র সকাল। বৃদ্ধাশ্রমে কাজের সুত্রে রায়া চৌধুরীর সাথে পরিচয় হয়। এখানে এসে সকাল বৃদ্ধদের করুণ কাহিনীর বর্ণনা শুনতে পায়। যা হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়। কাহিনী এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে।
গল্পের মোড় ঘুড়ে যায় তখন,যখন রাকিব চোধুরী নামক এক ব্যক্তি খুন হয়। তারপর খুনিকে খুঁজে বের করার প্রচেষ্টার মাধ্যমে কাহিনী আগাতে থাকে। একের পর এক খুন করার পরও খুনি যেন সাধারণ মানুষের সাথে মিশে থাকে। কেউ খুনি পর্যন্ত পোঁছাতে পারে না কিছুতেই। খুনের অন্যান্য স্বাক্ষীদের মত একসময় রায়া চৌধুরীকেও খুন হতে হয়। আর তাকে খুন করার মিথ্যা অপবাদে জেলে যেতে হয় সকালকে।
শেষ পর্যন্ত সকাল তার প্রকৃত বাবা নাজিরের মাধ্যমে জেল থেকে ছাড়া পায় এবং তারই আপন কেউ খুনের দ্বায়ে জেলে যায়। গল্পে নতুন এক টুইস্ট যুক্ত হয় এখানে। রাকিব চৌধুরীর আসল খুনি কে? কী সেই সমীকরণ যা মেলাতে গিয়ে আপন মানুষগুলোও পর হয়ে যায়?
ঔপন্যাসিক ধাপে ধাপে যে রহস্য লুকিয়ে রেখেছেন, শেষে তা আরো প্রগাঢ় হয়েছে। যা সবাইকে আকৃষ্ট করবে অনায়েসে।
---লেখনশৈলী---
লেখকের লেখনশৈলী বরাবরের মতোই মনোমুগ্ধকর। এই বইয়ের নিবিড় বর্ণনা ও চরিত্রের আলাদা ক্রিয়াকলাপ সব মিলিয়ে লেখাটা মন ছুয়ে যাবার মতো। অসাধারণ লেখনশৈলীর মাধ্যমে প্রত্যেকটি চরিত্র জীবন্ত মনে হয়েছে।
---লেখক সম্পর্কে কিছু কথা---
আহমেদ শিমু ১১ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার, ঘিওর থানার শ্রীবাড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাগত জীবনে স্নাতকত্তোর অর্জন করেন। তার প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে,স্পর্শিত অনুভূতি,শেষ পৃষ্ঠা,অদৃশ্য দেয়াল ও দর্পণ। দর্পণ লেখকের ৪র্থ বই এবং তৃতীয় উপন্যাস।
----পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখার ক্ষমতা---
লেখকের গল্প বলার ধরনটা বেশ ভালো ছিল। একজন পাঠককে গল্পের শেষ অবধি চৌম্বকীয় শক্তিতে টেনে নেওয়া নিঃসন্দেহে লেখকের সিদ্ধ হস্তের বহিঃপ্রকাশ। বইটিতে রহস্যের ছোঁয়া রয়েছে সেই সাথে রয়েছে বাবা মায়ের প্রতি আমাদের করণীয়গুলো বুঝে উঠার এক অনন্য প্রকাশ।
সর্বোপরি একজন মানুষের মানসিক বিকাশ ঘটানোর জন্য বইটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
---শিক্ষণীয় বার্তা---
★শেষ বয়সে যাতে কোন বাবা মাকে এমন বৃদ্ধশ্রমে মৃত্যুবরণ করতে না হয়, তার যে মেসেজ লেখক সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন, তা মানুষকে অনুপ্রানিত করবে।
★ভোগ বিলাসিতা অর্থ সম্পদ জীবনের মানদন্ডে একটি প্রয়োজনীয় দিক। তবে এর অতিরিক্ত চাহিদা ও প্রতিযোগিতা মানুষকে অসুস্থ করে তোলে।
★বিশুদ্ধ ভালোলাগা ও প্রাপ্তিগুলো ভোগে নয় ত্যাগের মধ্যেই নিহিত আছে।
★অপেক্ষা,ধৈর্য ও মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করেই মানুষ তার প্রাপ্যটুকু অর্জন করে।
★নিজের সৎ চেষ্টায় মানুষ যতোটুকু পায় তাতেই মূলত কল্যান নিহিত।
----পছন্দের লাইনসমূহ---
★যদিও পছন্দ অপছন্দ দিয়ে জীবন চলে না। চলার পথে ব্যতিক্রম মানুষগুলা ভাঁজে ভাঁজে সাজানো থাকে। যাদের কারনেই আমরা ভালো মন্দর কমপিয়ার করতে পারি।
★জীবন থেকে নিজে নিজে যে শিক্ষা নেওয়া যায় তাই মূলত জীবনের ধনাত্মক পরিবর্তন ঘটায়।
★অতি ধনবান ব্যক্তিকেও দিন শেষে চরম অসুখী হতে দেখা যায়। আবার আভিজাত্যে মোড়ানো মানুষটাও দিনের পর দিন মানসিক যাতনায় ভোগে। আবার কখনও কখনও ফুটপাত ধরে ফেরীকরে বেড়ানো ছেলেটাকে দেখা যায় একবেলা খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে গাছের নিচে দিব্বি ঘুমাচ্ছে।
★খুব অভিমান কিংবা হৃদয়ের ভাংচুর শব্দগুলো যখন ভেতরে অবরুদ্ধ রক্তক্ষরণ করে তখন তাদের ভেতরের দুর্বোধ্য শিলালিপি দেখার মতো কোনো মানুষ থাকে না।
★ঝাপসা চোখের নোনা পানি মোছার জন্য হলেও মাথার ওপরে একটা ভরসার হাত সবার জীবনেই দরকার।
★জীবনের সমীকরণ জটিল ও রহস্যময়। যা সময়ের সাথে সাথে আরো বেশি প্রগাড় হয়।
★পৃথিবী অনেক জটিল জায়গা। যেখানে রহস্যের ভেতরেও থাকে রহিস্য। মুখোশের অন্তরালে ঢাকা পড়ে থাকে আসল দেশদ্রোহীরা।
---পাঠ-প্রতিক্রিয়া---
"দর্পণ " নিঃসন্দেহে শিক্ষণীয় মানসম্মত একটা বই। উপন্যাসটি পড়ে আমি এতটাই মুগ্ধ যে কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এক নিঃশ্বাসে শেষ করার মত একটি উপন্যাস এটি।
প্রতিটা বাক্যে, প্রতিটা শব্দে, প্রতিটা লাইনে লাইনে মুগ্ধতা। প্রতিটা কথায় বাস্তবতা। এতোটা সুন্দর! এতোটা গুছানো! এতোটা পরিপাটি করে লিখা। সত্যিই আমি মুগ্ধ। স্তম্ভিত। বইটি অসম্ভব ভালো লেগেছে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এছাড়া বৃদ্ধশ্রমের কাসেম উদ্দিন ও আমেনা খাতুনের দুঃখীময় করুণ বর্ণনা আমার হৃদয়ে আচড় কেটে গেছে প্রতিমূহুর্তে।
উপন্যাসের রোমাঞ্চ আর চাঞ্চলতা আমাকে এতটাই আকড়ে ধরেছে যে, পড়ার সময় বুকের ভেতর মৃধুকম্পন অনুভূত হয়েছে।
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটা অদৃশ্য টান কাজ করেছে। যার কারনে একটা পৃষ্ঠার পর আরেকটা পৃষ্ঠায় যাবার জন্য উদ্বেগ কাজ করেছে এবং সফলভাবে শেষ পৃষ্ঠায় টেনে নিতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বপরি বইটা আমার কাছে অসম্ভব ভালো লেগেছে। দর্পণের প্লটটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
পার্সোনাল রেটিং ৯.৫/১০
July 08, 2022
লেখকের জীবনী
ইসমোতারা আহমেদ শিমু (Ismotara Ahmed Shimu)
ইসমোতারা আহমেদ শিমু