বিবর্তনবাদের জনক চার্লস ডারউইনের মতে, পশু-পাখিদের ডাক অনুকরণ করে মানস সঙ্গীতের জন্ম দিতে পেরেছে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনও এই মত সমর্থন করেছেন। দার্শনিক রুশাে এবং হার্ডার সঙ্গীতের উৎপত্তি সম্বন্ধে বলেছেন-“কথা বলার স্বরধ্বনি বাড়িয়ে-কমিয়ে সঙ্গীতের উৎপত্তি হয়েছে।” ঐতিহাসিক রােববাথামের মতে, “বেগবান ইচ্ছা শক্তির দ্বারা সঙ্গীতের উৎপত্তি হয়েছে।” | Herbert Spencer তাঁর, “The Origin of function of Music.” গ্রন্থে সঙ্গীত সম্বন্ধে যা মন্তব্য করেছেন তা হলাে-“মনের আবেগ প্রকাশিত হয় যে ভাষায় বা ধ্বনির দ্বারা তাই সঙ্গীত।" পারস্য দেশের একটি কাহিনিতে বলা হয়েছে যে, হযরত মূসা পাহাড়ে ঘুরে ঘুরে | প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পরিদর্শন করছেন-এই সময় দৈব বাণী এল, হে মূসা তুমি তােমার ঐশী দিয়ে পাথরে আঘাত কর। আদেশ অনুযায়ী হযরত মূসা পাথরে সজোরে আঘাত করলেন। তখন পাথরটি ৭টি খণ্ডে খণ্ডিত হলাে এবং প্রত্যেক খণ্ড থেকে এক একটি ঝর্ণার সৃষ্টি হলাে। এই ৭টি ঝর্ণা থেকে ৭টি স্বরের সৃষ্টি হয়েছে। প্লেটোর মতে, “মানুষ সৃষ্টির পূর্বেই সঙ্গীতের উৎপত্তি হয়েছে”। অ্যারিস্টটল বলেছেন-“শিশুর কান্না হতে সঙ্গীতের উৎপত্তি হয়েছে।” জেমস লং বলেন, “প্রথমে মানুষ কথা বলতে শেখে চলতে শেখে এবং এভাবে ক্রমশ ক্রিয়াশীল হতে হতে তার মনের মধ্যে সঙ্গীত আপনিই উদ্ভূত হয়।” ফ্রয়েড বলেন- “সঙ্গীত শিশুর মনের মতােই মনােবিজ্ঞানের বিষয়, যেমন মনের তাগিদে শিশু তার কান্না, হাসি, ক্রোধ ইত্যাদি দ্বারা হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে নিজেই শেখে তেমনিভাবেই সঙ্গীতের উৎপত্তি হয়েছে মানুষের মনােভাব প্রকাশের স্বাভাবিক প্রচেষ্টায়।” রবীন্দ্রনাথ Herbert Spencer-এর মতটিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন-“আমাদের মনােভাব গাঢ়তম তীব্রত রূপে প্রকাশ করিবার উপায় স্বরূপে সঙ্গীতের স্বাভাবিক উপত্তি।” [সঙ্গীতের উৎপত্তি ও উপযােগিতা-রবীন্দ্র রচনাবলী চতুর্দশ খণ্ড] বেদষ্টা ব্রহ্মাই সঙ্গীতের উৎপত্তির কারণ। ব্রহ্মা শিবকে এই কলাবিদ্যা প্রদান করেন। দেবী সরস্বতী তা প্রাপ্ত হন শিবের কাছ থেকে। সরস্বতীর প্রসাদে সঙ্গীত কলায় দীক্ষিত | হন নারদ। তিনি স্বর্গাস্থিত গান্ধব এবং অপ্সরাদের সঙ্গীত শিক্ষাদান করেন। তাদের কাছ থেকে ভরত, নারদ, হনুমান প্রভৃতি মর্তের ঋষিগণ সঙ্গীত বিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করে পৃথিবীতে সঙ্গীতবিদ্যা প্রচারে তৎপর হন। মর্ত্যের সঙ্গীত প্রচার করেছিলেন যে নারদ | তিনি মর্ত্যেরই ঋষি।