ভাটিয়ালি সারিগানের মত নদী-নৌকা-মাঝিকেন্দ্রিক গান। উভয় গানের বিষয়বস্তু লৌকিক ও আধ্যাত্মিক প্রেম, রাধাকৃষ্ণের লীলা ইত্যাদি। কিন্তু এ মিল একেবারে | বাইরের, অভ্যন্তরে উভয় গানের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে। সারিগান নৌকার মাঝি মাল্লার শ্রমসঙ্গীত; ভাটিয়ালি নৌকার মাঝির শ্রমহীন অবসর কালের সঙ্গীত । মাঝিরা দাড় টানার সাথে সাথে সমবেত কণ্ঠে সারিগান গায়; নদীর মন্থর স্রোতের টানে নৌকা ভাসিয়ে দিয়ে মাঝি একক কণ্ঠে ভাটিয়ালি গায়। ছইয়ের উপর বসে কেবল নৌকার হাল আলতােভাবে ধরে থাকা ছাড়া মাঝির আর অন্য কাজ থাকে না। দাঁড় টানার তালের সাথে সারিগানের তালের সম্পর্ক থাকায় গানের সুর ও লয় হয় দ্রুত; গানের মুখ্য উদ্দেশ্য শ্রমে উৎসাহ ও প্রেরণা সঞ্চার। ভাটিয়ালি মাঝির অবসরে অলস মুহূর্তের গান বলে এর সুর ও লয় হয় বিলম্বিত। ভাওয়াইয়া গানের মত এতে দীর্ঘ টান আছে; তবে ভাওয়াইয়া গানের প্রলম্বিত টানে ভাজ আছে, ভাটিয়ালির দীর্ঘ টানে কোন ভাঁজ নেই। ভাটিয়ালির টানা সুর চড়া গলায় শুরু হয় এবং অনেকক্ষণ পর শমে এসে শেষ হয় । শান্ত নদীর স্রোতের টানের সাথে এ গানের টানা সুরের মিল আছে। এর সাথে দুপুর অথবা অপরাহ্নের অলস মন্থর সময়ের নির্জনতা, মাঝির একাকিত্ব এবং দিগন্তছোঁয়া আকাশের বিস্তৃতি যুক্ত হয়ে গানের টানা সুরকে অবাধ স্বাধীনতা দেয়। সারিগানে হালকা লঘু ভাবের প্রাধান্য আছে; ভাটিয়ালির সব ভাবই গুরু-গম্ভীর, বেদনার্ত, অতলাশ্রয়ী। সুর মুখ্যত করুণ, উদাসীন ও বিবাগী।