দিনের প্রথমাংশ ভালই ছিল। সকালে কুয়াশা ভেদ করে শীতের সূর্য দেখা দিতে ক্ষানিক দেরী হলেও সূর্যের মুখ দেখে সবার জড়তা কেটে গেলে কর্ম চঞ্চল হল পৃথিবী। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের এ সময়টা খুবই মনােরম। রাতেও বেশী কুয়াশা পরায় শীত কিছুটা কম অনুভূতি হল। ঘন কুয়াশায় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামকে দেখলে মনে হয় প্রেতপুরী। জোসনা রাত আর ঘন কুয়াশার মাঝে ঝােপ ঝাড়ের আড়ালে থাকা শৃগালদের হুক্কাহুয়া ডাকের সাথে গৃহস্থ বাড়ির পােষা কুকুরদের ঘেউ ঘেউ চিঙ্কার যেন একটা ভয়ার্ত সময়। এমন রাতে বাহিরে দাড়ালে গা ছম ছম করে। বাদূরের পাখায় ভর করে যে সন্ধ্যা নামলাে তা যেন শিশিরের টুপটাপ শব্দ বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার মত কোথায় হারিয়ে গেল। বেলা বাড়লে আকাশে ধীরে ধীরে মেঘ জমা হলে চললাে আলােছায়ার খেলা। প্রকৃতির এ অবস্থা মানুষের মনেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে দিল। দুপুর নাগাদ আর গাঢ় মেঘ জমা হলে দেখতে না দেখতে . সন্ধ্যা নেমে এলাে। এ সময়টাতে গৃহস্থের বাড়িতে উঠানে থাকে ধান। এখানে সেখানে খড়। পাকের ঘর, গােয়াল ঘরে তখনও অনেকের ছাউনি দেয়া হয় না। তাই হঠাৎ মেঘ দেখলে সবারই নাভীশ্বাস শুরু হয়। গৃহস্থের লােকজন ঘরের সকল কাজ ফেলে বাহিরে ছুটাছুটি করে বাহিরে পরে থাকা জিনিসপত্র গােছগাছ করার জন্য। | দুপুরের পর হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টি হলাে। কেটে গেল মেঘ। একটু পরে সূর্য উঠলাে। ঘরের চালা গাছের পাতায় জমে থাকা ধুলাবালি ধুয়ে প্রকৃতি যেন নতুন রূপে সাজলাে। প্রকৃতির ছন্দ-তালের খেলায় মানুষ কতই না অসহায়।