Loading...

ভােরের প্রতীক্ষা (হার্ডকভার)

স্টক:

১৫০.০০ ১১২.৫০

একসাথে কেনেন

অরক্ষণীয়া অতিথি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ওপরতলায় বেশ জমকালো আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা থেকে আসা মাল্টিন্যাশনাল একটা কোম্পানির কর্পোরেট এমপ্লয়িদের আপ্যায়ন, তারপর আছে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখানে আছেন অপারেশন ম্যানেজার সৈকত আমিন। আছেন মার্চেন্ডাইজিং ম্যানেজার প্রিয়া অনুপম। আরও আছেন চারজন মার্চেন্ডাইজার। একটা প্রডাক্ট প্রমোশনের কাজে তাঁরা মোট তিন দিন থাকবেন। এরই মধ্যে এসে গেল সৈকতের জন্মদিন। হোটেলের মালিক আসিফ ইকবাল এ উপলক্ষে বেশ বড় একটা কেক রাখতেই সবাই হতবাক। আসিফকে দেখে সবচেয়ে বেশি অবাক হলেন প্রিয়া অনুপম। জন্মদিনের গানে কেক কাটা শেষে প্লেটে করে সবাই কেক খাচ্ছে। এ সময় প্রিয়া আসিফের কাছে এসে আস্তে করে বলেন-- আপনি কি আমায় চিনতে পারছেন? অবশ্যই চিনতে পারছি। একটু কথা বলতে চাই। সুযোগ হবে কি? আসিফ আনমনা কী যেন ভেবে বলেন-- আমার সাথে কী কথা? বলুন, এখনই বলুন। না, এখানে বলা যাবে না। পকেট থেকে বের করে প্রিয়ার হাতে একটা বিজনেস কার্ড দিয়ে আসিফ বলেন-- রাত্র একটার পর থেকে কয়েক ঘণ্টা মাত্র ঘুমের এই সময়টাতেই কেবল ব্যস্ত থাকি না। এ ছাড়া সকাল ছয়টা থেকে সারাক্ষণই ব্যস্ত। তবে আপনার যখন সুযোগ হবে ফোন দিয়েন। চেষ্টা করব। হোটেলের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে দুজন বসে। তখন সকাল দশটা। খোলা জানালায় রেস্টুরেন্টের গা ঘেঁষে বেশ মনোরম একটি পার্ক দেখা যায়। এই পার্কটা কি আপনারই? জি, একটু সুযোগ পেলেই পার্কে গিয়ে বসি। বড় অনুষ্ঠানগুলোয় পার্কটাও ব্যবহার করা হয়। বিজনেস বিনোদন এই আর কি। আপনার পরিকল্পনা খুব সুন্দর। না রে ভাই। ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও সুন্দর পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি না। সর্বত্রই দূষণ খুব বেড়ে চলেছে। ইউরোপের কোনো একটা দেশে সেটেল করব আশা করছি। প্রিয়া পার্কের দিকে চেয়েই আছেন। সহজ সাধারণ আসিফ। আজও তেমনই আছেন। তাঁর জীবন এক সরল রেখায় গতিময়। আসিফকে তিনি কিছু বলতে চান। অথচ কোথায় যেন বারবার আটকে যাচ্ছেন। আপনার মনে কি কোনো কষ্ট নেই? নাহ, বেঁচে আছি। সুস্থ আছি। এই তো ঢের। কষ্ট থাকবে কেন? আমিই তো আপনাকে কষ্ট দিয়েছি। অসংখ্য স্মৃতির মাঝে কিছু স্মৃতি মানুষ খুব সাবধানে আজীবন ঢেকে রাখে। ওই স্মৃতিগুলো ঢেকে রাখাতেই সুখ। কেন এভাবে বলছেন? আমি কষ্ট পেয়েছি এমন কোনো আভাস কোথাও দিয়েছি বলে মনে পড়ে না। ছোট্ট একটা ভুল করেছিলাম, আপনি শুধরে দিয়েছেন। এই সুযোগে আমি জীবনটাকেই শুধরে নিয়েছি। আপনার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ও সম্মান দুটোই থাকবে। আসিফের কথাগুলোর মাঝে অভিমানের সুর স্পষ্ট। হয়তো-বা এমন কিছুই নয়। প্রিয়া ভুল ভাবছেন। আট বছর পর দেখা। যদি ক্ষমা চাই, আপনি কি ক্ষমা করবেন আমাকে? আসিফ জানালায় বাইরের দিকে তাকিয়ে একটা উষ্ণ নিঃশ্বাস ফেলে নীরবেই বসে আছেন। মুখে তাঁর মৃতপ্রায় নক্ষত্রের মতো একঝলক হাসি। প্রিয়া চেয়ে আছেন আসিফের দিকে। প্রায় দুই মিনিট আসিফকে নীরব দেখে প্রিয়া আবারও বলেন-- আপনাকে কষ্ট দিয়েছি... এসব বলেই বরং আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন। মন থেকে অতীতের ওই সব স্মৃতি মুছে ফেলেছি। আমি ভালো আছি। ভালো যে আছেন, দেখতেই তো পাচ্ছি। আরও ভালো থাকতে দেশটাই ছেড়ে দিচ্ছেন। অতীত কি মানুষ ইচ্ছে করলেই মন থেকে মুছতে পারে? জানি না, তবে এটুকু জানি যে জীবনে আমার খুব বড় একটা ভুল হয়েছিল। ওই ভুলটা আপনি ভেঙে দিয়েছেন। ভুল হয়েছিল! আপনার? কীভাবে? ঢাকা শহরের ওই লেভেলের চাকরিগুলো আসলে আপনার মতো মেয়েদের জন্য। আমার কথা ভিন্ন। আত্মসম্মানটুকুই আমার একমাত্র সম্পদ। ওইটুকুই যখন হারিয়ে যেতে বসেছিল, তখনই সব ছেড়ে চলে আসি। আর ক্ষমা চাইতে চাচ্ছেন? না। বিষয়টাকে আমি ওভাবে দেখছি না। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আপনার ওই অসহায়ত্বের কথা আর কাউকে না বলে বলেছিলেন আমাকে। সেদিন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে এই প্রিয়াকে নিজের দায় বোধে তাড়িত হয়ে আমার অফিসে চাকরি দিয়েছিলাম। কারণ আমি দেখেছি, এ শহরে পড়ালেখার খরচ মেটাতে, কখনো নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গিয়ে বহু মেয়ে নষ্টদের অধিকারে চলে যায়। আমি আপনার সম্মান রক্ষা করেছি। তবে আপনি নিজেকে শেষ পর্যন্ত কতটুকু সম্মান করেছেন, সেটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার। প্রিয়ার শরীরটা যেন পাথর হয়ে যাচ্ছে। অনেক দিন আগে মানুষটা খুব কাছে ছিলেন। এই দীর্ঘ বিরতির পর আজ তাঁর সাথে দেখা। এ যেন এক অন্য আবেদন। প্রিয়া তখনও বলছেন না কিছুই। আসিফ বলেন-- এ দেশে নারী-পুরুষের সহজাত সম্পর্কের মাঝে প্রথা, নিয়মরীতি আর বিধিনিষেধের কঠিন দেয়াল নির্মাণ করে রেখেছেন আমাদের মুরব্বিরা। আপনারা সুযোগ পেলেই ওই দেয়ালে আমাদের মাথা আছড়ে ভেঙে দেন। যদিও আমি আর আপনি একই পোস্টে চাকরি করতাম। অপারেশন ম্যানেজারের সাথে সখ্য গড়ে খুব দ্রুত আপনি হয়ে গেলেন মার্চেন্ডাইজিং ম্যানেজার। প্রেজেন্টেশন, অডিট রিপোর্ট, স্টেটমেন্ট, এ সব রাতের পর রাত জেগে আপনার কাজগুলো করে দিতাম আমি; আর সুযোগ-সুবিধা নিতেন আপনি। সেবার অপারেশন ম্যানেজারের কক্ষ থেকে ফোন করে আমার ওপর বেশ কিছু কাজ চাপিয়ে দেন। প্রতিউত্তরে আমি বলেছিলাম, তুমি এসব কী শুরু করেছ? ঠিক তখনই আপনি ম্যানেজারের রুম থেকে বেরিয়ে এসে সবার সামনে আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলেন। ভেবে দেখুন, ফোনে আপনাকে যে ‘তুমি’ বলেছি তা শুধু আপনিই শুনেছেন। আর আমাকে যে থাপ্পড় মেরেছিলেন, তা উপস্থিত সবাই দেখেছে। যারা অফিসে তখন ছিল না, তারা শুনেছে। আপনার এমন কঠিন আচরণে সবাই ধরে নিয়েছিল হয়তো জঘন্য কিছু হয়েছে। ওখানে আমার উইন করার কিছু নেই। আপনি আজও উইন করেই আছেন। আর আমি? আপনাকে প্রথম দিন থেকেই যেভাবে সম্মান করেছি, আজীবন সেভাবেই করতে চাই। জগতের কেউ না জানলেও আপনি তো জানেন। এটাই যে আমার অনেক বড় পাওয়া। প্রিয়ার বুকের ভেতরটা তোলপাড় করে হঠাৎ মনে হলো, ঈশাণ কোণে হয়তো আকাশ ভারী হয়ে আসছে হিম কালো মেঘে। একটু পরই হয়তো শুরু হবে ঠান্ডা বাতাস; বুকজুড়ানো বৃষ্টি। আজ তিনি আসিফের সামনে বসে মর্মে মর্মে বুঝতে পারছেন, এই দেহের ভেতর একটা মন আছে। ওই মন বৃষ্টির আশা করে। বৃষ্টির জলেই কেবল তাঁর তৃষ্ণা মেটে। প্রেম আর প্রকৃতির মাঝে যে কোন কৃত্রিমতা মানুষকে শুধু কষ্টই দেয়। আসিফ বলেন-- আপনার অবশ্যই মনে থাকার কথা। সেদিন সকাল নয়টায় অফিসে এসেই আপনি সেই যে অপারেশন ম্যানেজার রাসেল স্যারের রুমে ঢুকলেন, বেলা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত একবারও বের হননি। প্রায় প্রতিদিনই এত দীর্ঘ সময় ধরে ওই রুমের ভেতর আপনি কী করেন আমরা জানতাম। আমারা কয়েকজন মার্চেন্ডাইজারের বেশ কিছু কাজ আটকে আছে। স্যারের সই দরকার। কারও-বা অ্যাডভাইজ দরকার। আপনি ভেতরে আছেন, তাই আমরা কেউ নক করতে সাহস পাচ্ছিলাম না। কেউ ফোন দেয়ার সাহসও পাচ্ছিল না। সবাই বিরক্ত হচ্ছিল। কারণ, আপনি ভেতরে। ঠিক তখনই ফোন দিয়ে আপনার একগাদা কাজ চাপিয়ে দিলেন আমার ওপর। আমার বিরক্তি তখন চরমে। তাই অশোভন একটা কথা বলে ফেলি ‘তুমি এসব কী শুরু করেছ’। আপনি আমাদের ম্যানেজার। আপনাকে ‘তুমি’ বলার স্পর্ধা দেখিয়েছি। তাই আমাকে সৌজন্য শিখিয়েছেন। আমার পক্ষ থেকে বরং আপনাকে অসংখ্যা ধন্যবাদ। ক্ষমা চেয়ে কেন আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন। প্রিয়া মুখ নিচু করে বসে আছেন। হয়তো চোখে তাঁর দুফোঁটা জল। নিজেকে স্বাভাবিক করে প্রিয়া বলেন-- এভাবে কলিগদের সামনে অপদস্থ হয়ে একেবারে বিনা প্রতিবাদে ঢাকা শহরই ছেড়ে দিলেন! দেখতেই তো পাচ্ছেন। এভাবেই কেউ ছাড়ে ঢাকা কেউ ছাড়ে দেশ। বলার আর প্রয়োজন আছে কি? বিয়ে কি হয়ে গেছে? স্নিগ্ধ হাসিতে আসিফ বলেন-- ওই সময়-সুযোগ হলো না যে এখনও। এবার আসিফের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রিয়া বলেন-- আপনার প্রতি আমার ভালোবাসা আছে কি না জানি না, তবে আজ আর বলতে দ্বিধা করব না। আপনার ওই সরল মনটাকে খুব মিস করি। তারপর তিনজন অপারেশন ম্যানেজার বদলি হয়। আমি তেমনই আছি। আপনি তো জানেন সব। তাদের মনোরঞ্জনে অতিষ্ঠ মনটা তাদেরই বলে বলীয়ান হয়ে কৌশলে তাড়িয়ে দেয়া ওই আসিফটাকে খোঁজে। অবিরাম প্লাষ্টিকের বোতলের পানি খেয়ে তৃষ্ণা কি আর মিটে। দিনে দিনে অতৃপ্তিই বাড়ে কেবল। যদি কোনো দিন ক্ষমা করতে পারেন, অনুরোধ রইল দয়া করে একটা ফোন দিয়েন। বলেই প্রিয়া একটা ভিজিটিং কার্ড টেবিলের ওপর রাখলেন। আসিফ কার্ডটির প্রতি ফিরেও তাকালেন না। উঠে দাঁড়িয়ে হাসতে হাসতে বলেন-- আমার মনের আনন্দ অন্য রকম। কোনো রঞ্জক পদার্থের দরকার হয় না। আপনার ম্যাচিউরিটি লেভেল দেখে হাসি পাচ্ছে। বেশ বড় একটা পোস্টে চাকরি করেন। কবে কাকে সৌজন্য ভঙ্গের অপরাধে শাস্তি দিয়েছিলেন ওই কাহিনি এখনও মনে গেঁথে রাখলে কি হবে? এই বলে কী একটা ঘটনা মনে পড়ে প্রাণপণে হাসি আড়াল করে আসিফ বের হয়ে গেলেন। প্রিয়া সেভাবেই বসে আছেন। ভিজিটিং কার্ডটা পড়ে রইল টেবিলের ওপর।
Vorar Protikkha,Vorar Protikkha in boiferry,Vorar Protikkha buy online,Vorar Protikkha by Ishaq Hafiz,ভােরের প্রতীক্ষা,ভােরের প্রতীক্ষা বইফেরীতে,ভােরের প্রতীক্ষা অনলাইনে কিনুন,ইসহাক হাফিজ এর ভােরের প্রতীক্ষা,9847012007280,Vorar Protikkha Ebook,Vorar Protikkha Ebook in BD,Vorar Protikkha Ebook in Dhaka,Vorar Protikkha Ebook in Bangladesh,Vorar Protikkha Ebook in boiferry,ভােরের প্রতীক্ষা ইবুক,ভােরের প্রতীক্ষা ইবুক বিডি,ভােরের প্রতীক্ষা ইবুক ঢাকায়,ভােরের প্রতীক্ষা ইবুক বাংলাদেশে
ইসহাক হাফিজ এর ভােরের প্রতীক্ষা এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 120.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Vorar Protikkha by Ishaq Hafizis now available in boiferry for only 120.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন হার্ডকভার | ৯৫ পাতা
প্রথম প্রকাশ 2018-02-10
প্রকাশনী কথাপ্রকাশ
ISBN: 9847012007280
ভাষা বাংলা

ক্রেতার পর্যালোচনা

ইসহাক হাফিজ
লেখকের জীবনী
ইসহাক হাফিজ (Ishaq Hafiz)

ইসহাক হাফিজ। জন্ম ১৯৭৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের চান্দপুর গ্রামে। বাবা খতিব হাফিজুর রহমান। মা সৈয়দা নুরুন্নেছা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের কাছাইট আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার শ্রীপুর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৯১ সালে দাখিল পাস করেন। তারপর ভাদুঘর আলিয়া মাদ্রাসা থেকে যথাক্রমে আলিম ১৯৯৩, ফাজিল ২০০০ এবং কামিল পাস করেন ২০০২ সালে। এর পাশাপাশি ১৯৯৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। আর ১৯৯৮ সালে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে এমএ পাস করেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা ল কলেজ থেকে ১৯৯৯ সালে এলএলবি সম্পন্ন করার পর ঢাকা জজ কোর্টে প্র্যাকটিসও করেন কিছুদিন। অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি (সিডনি ক্যাম্পাস) থেকে মাস্টার্স ইন বিজনেস ল পাস করেন ২০০৫ সালে। বর্তমানে সিডনি ইউনিভার্সিটিতে ডিপ্লোমা ইন ল-এ অধ্যয়নরত। ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব লাভ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট বই