- ভালো করে চিরোও তুমি চিবিয়ে চিবিয়ে খাও, গুর ডিম
7940
ভাত, মাছ, মাংস, সবটা চিবিয়ে নাও।
কী? পড়েই বেশ মজা লাগছে? যদি বলি এটি একটি স্কুলের গান? যে স্কুলে সব বাচ্চারা টিফিন শুরুর আগে এই গানটি গায়, এরপর একসাথে খাবার খায়। বেশ অবাক করা ব্যাপার তাই না?
আসলেই এমনই এক অবাক করা মজার স্কুল 'তোমোই-গাকুয়েন। আমাদের মিষ্টি মেয়ে তোত্তো-চান এই স্কুলেরই প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। আমাদের এই তোত্তো-চান কখনো হতে চায় গোয়েন্দা, কখনো বা সে হবে স্টেশন মাস্টার। আবার কখনো তার সাধ জাগে বাজনাওয়ালাদের সাথে রাস্তায় বাজনা বাজাতে।
এমনই স্বপ্নালু, চঞ্চল, আবেগী আমাদের তোত্তো-চান। সে প্রচুর কথা বলতে ভালোবাসে, ভালোবাসে নতুন নতুন বন্ধু পাতাতে। ওহ হ্যাঁ, আমাদের তোত্তো-চানের আসল নাম কিন্তু আবার তোত্তো-চান না। তার ভালো নাম তেৎসুকো। কিন্তু তোত্তো নামের শেষে 'চান'-টাও সে ভাবত তার নামের অংশ। সেই থেকে সে সবাইকে তার নাম বলে বেড়াত 'তোত্তো-চান'।
আমাদের তোত্তো-চান কিন্তু অনেক কৌতূহলদীপ্ত। তার ছোট্ট মাথায় সারাক্ষণ জগতের নানা প্রশ্ন ঘুরপাক করতে থাকে। সবকিছুতে তার আগ্রহ, নতুন কিছু জানার, নতুন কিছু শেখার প্রবল আগ্রহ তার। আর এমন এক বাচ্চাকে নাকি তার এই স্বভাবের কারণে তার প্রথম স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়। ভাবা যায়? একজন প্রথম শ্রেণির বাচ্চা তাকে নাকি স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। T
এরপর তার মা তাকে নতুন স্কুলে ভর্তি করার খোঁজে নেমে পড়েন। এবং তোত্তো-চান ভর্তি হয় তার নতুন স্কুল তোমোই পাকুয়েন'। ভারি মজার এক অদ্ভুত ভুল। এই স্কুলের ক্লাসরুমগুলো হচ্ছে রেলগাড়ির এক একটি কামরা। এই রেলগাড়ি ভুল দেখেই তো তোত্তো-চানের এক নিমিষে স্কুলটি পছন্দ হয়ে যায়। এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস শুরু করে যার যেই সাবজেক্ট পছন্দ ওটা দিয়ে। কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
সবচেয়ে মজার মানুষ হচ্ছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক কোবায়েশি। যার সাথে
প্রথম দিনই ভাব হয়ে যায় আমাদের তোত্তো-চানের। কোবায়েশি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন পড়াশুনা হতে হবে আনন্দের সাথে, বাচ্চাদের উপর কোনো চাপ থাকবে না। তারা তাদের পছন্দের বিষয়গুলো খেলার ছলে শিখে যাবে। এই স্কুলেই তোত্তো-চান খুঁজে পায় তার স্বপ্নপুরী। খুব আনন্দে দিন কাটতে থাকে তোত্তো-চানের। বইয়ের বেশিরভাগটাই জুড়ে 'তোমো গাকুয়েন' স্কুলের কথা থাকলেও তোত্তো-চানের বাড়ির গল্প আছে, মা-বাবার সঙ্গে মেলায় গিয়ে মুরগির ছানা কেনার গল্প আছে, বাড়িতে খেলার সঙ্গী কুকুর রকির গল্প আছে।
আর আছে ঘনিয়ে আসা যুদ্ধের কথা।
শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা। বড় বড় শহরগুলোতে বোমা নিক্ষেপ, খাদ্যের জন্য হাহাকার, শুরু হয় সংগ্রামের দিন। আমাদের তোত্তো- চানও তার প্রিয় অনেক কিছু হারাতে থাকে। যখন সে তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুকে হারায়, ছোট্ট বাচ্চার সহজ-সরল মনের কষ্টটা গল্পে এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চোখের পানি ধরে রাখা তখন কষ্টের হয়ে পড়ে।
তোত্তো-চান যখন ইয়াসুয়াকি-এর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে *আমাদের আবার দেখা হবে', তখন মনে হয় দৃশ্যটা চোখের সামনেই আমি দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সবচেয়ে করুণ ছিল স্কুলের পরিণতি, ভীষণভাবে মোচড় দিয়ে উঠবে। পাঠকদের হৃদয় গল্পের শেষের পর হচ্ছে আসল চমক। বইটি পড়তে গিয়ে মনে হবে কি অসাধারণ এক গল্প, কি অসাধারণ এক স্কুল, পড়তে পড়তে পাঠক তার শৈশবে ফিরে যাবে। কিন্তু এবার যদি বলি এটি আসলে গল্প নয়, স্মৃতিকথা? যদি বলি লেখক নিজেই আমাদের তোত্তো-চান?
লেখক তেৎসুকো কুরোয়ানাগি যদি বইয়ের শেষে স্বীকারোক্তিতে বলে না।
দিতেন যে আসলে তিনিই তোত্তো-চান তবে হয়ত বোঝার কোনোই উপায় থাকত না যে এটা একটা সত্যিকারের ঘটনা, সত্যিই এমন এক স্কুল আছে।
নিজ শৈশব বর্ণনা করে পাঠককে নিজের শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই যেন লেখকের স্বার্থকতা। পুরো বইটা একটা বাচ্চামোতে ভরা। এক মুহূর্তের জন্যও মনে হবে না বড় বয়সের কোনো লেখক এটা বাচ্চাদের জন্য লিখেছেন। বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বারবার মনে হবে ছোট্ট একটা বাচ্চা চোখের সামনে এসে মনের খুশিতে আপন মনে বক বক করে তার সব কাহিনি বলে যাচ্ছে।
অসাধারণ এক বই এটি, বই পড়েই এত মুগ্ধতা আসলটা না জানি কতটা সুন্দর। জাপানসহ অন্য অনেক দেশে এটা পাঠ্যপুস্তক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশের স্কুলগুলোতেও করা উচিত, শুধু বাচ্চারাই নয় তাদের শিক্ষক বাবা-মা সবার জন্যই এটা অবশ্য পাঠ্য। প্রতিটা পাতায়-পাতায় শৈশবের ঘ্রাণ জড়িয়ে থাকা বইটি পাঠককে হাসাবে, কাদাবে, নির্মল আনন্দে মন ভরিয়ে দেবে। আর বারবার মনে পড়বে স্কুলের দিনগুলোর কথা, সুন্দর শৈশবের কথা।
তেৎসুকো কুরোয়ানাগি এর তোওো-চান এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 240.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Totto-Chan by Tetsuko Kuroyanagiis now available in boiferry for only 240.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.