পরবর্তী ধাপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পাঁচজন অসহায় গৃহহীন লোক খুঁজে বের করে তাদের ত্রাণ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা। ‘প্রস্তুত করা’ কথাটি শুনতে অবাক লাগলেও বিষয়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায়, এসব অজ্ঞ লোকেরা স্টেজে সাহায্য নিতে উঠে নানান অপ্রীতিকর পরিস্থিতির তৈরি করে প্রধান অতিথিকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। এখানে যেন এমন কোনো ঘটনা না ঘটে, তার জন্যই এই ব্যবস্থা।
যাদেরকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে, তারা কীভাবে হাঁটবে, চোখের দৃষ্টি কোন দিকে থাকবে, মুখে কেমন অসহায় ভাব ফুটিয়ে রাখবে, প্রধান অতিথির হাত থেকে কীভাবে অনুদান গ্রহণ করবে, কীভাবে স্টেজ থেকে নেমে যাবে, এ সবকিছু আগে থেকেই শিখিয়ে, পড়িয়ে নিতে হবে। আজগর মজুমদার চান না কমরেড মামুনের মতো এত বড়ো নেতার সাথে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক।
আর শেষ ধাপ হচ্ছে, স্টেজ তৈরি সংক্রান্ত কাজ। এর জন্য দু’জনকে দায়িত্ব দেওয়া হলো। তারা সময় মতো স্কুল মাঠ পরিষ্কার করে স্টেজ তৈরি করবে, লোকজনদের বসার ব্যবস্থা করবে।
সব কাজ পরিকল্পনা মাফিকই এগোচ্ছে। ছেলেরা খুঁজে খুঁজে পাঁচজন এমন অসহায় লোকদের ধরে এনেছে, যাদের চেহারা দেখলেই মনে হয় তারা অত্যন্ত অসহায়। তবে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। এই পাঁচজনই পুরুষ। ব্যাপারটা আজগর মজুমদারের কাছে কেমন পুরুষতান্ত্রিক পুরুষতান্ত্রিক ঠেকছে। তাই তিনি সেই পাঁচজনের তালিকা থেকে দু’জনের নাম কেটে তাদের স্ত্রীদের নাম যুক্ত করলেন, যেন নারী-পুরুষে একটা ভারসাম্য আসে।
সব কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানভাবে অংশগ্রহণ করবে, এটা তাদের দলের মূল উদ্দেশ্যেগুলোর মধ্যে একটি। তাহলে ত্রাণ নিতে কেন নয়? যদিও স্ত্রীদের পরিবর্তে স্বামীরা ত্রাণ নিলে ফলাফল একই হবে, ত্রাণ ওই একই পরিবারে যাবে; তবুও নারীদেরকে ঘর থেকে বের করে আনার মহত্ত্বটাই আলাদা। আজগর মজুমদারের বাড়িতে সেই পাঁচজন গৃহহীন লোকের ত্রাণ নেওয়ার রিহার্সালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনদিন পর্যন্ত চলবে রিহার্সাল। চতুর্থ দিন হবে আসল ত্রাণ বিতরণ।
ইতোমধ্যে অঘোষিতভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে যে, প্রত্যেক গৃহহীনকে নগত এক হাজার করে টাকা, পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, দুই কেজি আলু আর এক লিটার সয়াবিন তেল দেওয়া হবে।
এই দুর্দিনে এমন সহায়তা তাদের কাছে সোনার হরিণ সমতুল্য। তাই তারা যথাসময়ে রিহার্সালে চলে আসে। আজগর মজুমদারও তার সাঙ্গোপাঙ্গ সমেত প্রস্তুত।
যেই ছেলেটি মূল অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করবে, রিহার্সালেও তাকে উপস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আরেকজন প্রধান অতিথির চরিত্রে অভিনয় করছে। বাকিরা তার আশেপাশে আছে আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথির ভূমিকায়। আজগর মজুমদার একটু দূরে দাঁড়িয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমে একজন নারীর নাম ঘোষণা করা হলো। সে দ্রুত কদমে এগিয়ে এলো। আজগর মজুমদার বললেন, ‘এভাবে না, এভাবে না, ধীরে ধীরে আসতে হবে।’
কয়েকবার চেষ্টার পর তার হাঁটার গতি কিছুটা মন্থর হলো বটে, কিন্তু যথাযথ হলো না। আরেকজন তো ত্রাণ নিতে এসে অসভ্যতা করে বসলো। তার হাতে খাদ্যদ্রব্যের ব্যাগ তুলে দেওয়ার আগে সে নিজেই ব্যাগ তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করল! কী মুশকিল, এদেরকে সভ্যতা শেখানো বেশ কঠিন কাজ।
ইয়াছির মিশুক এর তালগাছ আমার এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 201.60 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Talgach Amar by Yeasir Mishokis now available in boiferry for only 201.60 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.