রাত্রি প্রথম প্রহর গড়িয়ে দ্বিতীয় প্রহরে পড়ে। অন্ধকার গাঢ় হয়। অসীম শূন্যে লুকিয়ে থাকা রহস্যময় নিস্তব্ধতা ঝুপ করে নেমে আসে। আকাশে ছায়াপথ, তারকাপুঞ্জ এক সুগভীর মহিমায় জেগে থাকে, যার সামনে নিজেকে তুচ্ছ ভাবতে বড় ভালাে লাগে। ন্যায়, অন্যায়, পাপ, পূণ্য সব কিছুকেই বড় অর্থহীন মনে হয়। অনন্ত, অসীম মহাবিশ্বে নিজের ক্ষুদ্রতা এক অলৌকিক বিশ্বাসের জন্ম দেয়। যেন আমি কখনও ছিলাম না, নেই এবং থাকবাে না। রাতের প্রার্থনা সেরে নিশাত সামনের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছেন। বিপন্ন চাঁদের ম্লান এক টুকরাে আলাে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাছপালার ফাঁক গলে এসে পড়েছে এক কোণে। রােযার মাস, ঘুমন্ত শহর। রাস্তার হাল্কা আলাে আঁধারের খেলায় অকস্মাত দু'একখানা রিশার টুং টাং শব্দে হঠাৎ করেই ভেঙ্গে যাচ্ছে নিস্তব্ধতা। আর কদিন পরেই ঈদ। হয়তাে রাত নিশুতি করে বেচা-কেনা হচ্ছে যাদের, তারাই ঘরে ফিরছে রাত করে। আর কিছুক্ষণ পরেই সেহরী শুরু হবে। নিশাত দরজা বন্ধ করে ঘরে এলেন। ঠিক বিছানায় যাবার আগে একবার টেলিভিশন খুলে সর্বশেষ খবর দেখে নেয়া তার একটা অভ্যাস। আজ ঘরের আলাে না জ্বেলেই টেলিভিশনের সুইচ অন করলেন। ব্রেকিং নিউজ পড়তে গিয়ে কিছু বুঝে উঠলেন আলােটা জ্বালালেন। উজ্জ্বল আলােয় ভালাে করে পড়লেন। একজন সাংবাদিকের ধারাভাষ্য শােনা যাচ্ছে, কান পাতলেন। অনেক লােকের জটলা। নিশাত দ্রুত চলে গেলেন তাদের শােবার ঘরে। মশারী তুলে ঘুমন্ত মহসিনের গায়ে হাত রেখে সজোরে ধাক্কা দিয়ে বললেন, 'এই ওঠোতাে, এসােনা।'