এ কাহিনী থেকে যে তত্ত্বজ্ঞান লাভ হয়, তার দিকে কোরানের উপরােক্ত বাণীতে ইঙ্গিত করা হয়েছে; তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য শিক্ষা নিহিত আছে; সে কাহিনী মনগড়া নয়, ভবিষ্যৎ পরিণতির সাক্ষ্য, সমস্ত বিষয়ের ব্যাখ্যা, আর বিশ্বাসী লােকদের জন্য পথের দিশারী ও পরম কৃপা'। ১৭ শতাব্দীতে কলিঙব্রোক এই কথারই প্রতিধ্বনি করে বলেছিলেন History is philosophy teaching by examples. ভুলভ্রান্তি, কর্তব্য, অকর্তব্যের দৃষ্টান্ত দেখে স্বীয় লক্ষ্যপথে সতর্কতার সাথে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা ইতিহাসের। কিন্তু লক্ষ্যটি কি? মুসলমান বলে, আল্লাহর অভিপ্রেত পরিণতিতে ব্যক্তি ও সমাজ সত্তার আত্মসমর্পণ এবং তার ফলে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ। খ্রীষ্টান বলে, পৃথিবীতে Civitas Dei-এর স্থাপন—যার দিকে আদমের স্বর্গচ্যুতি থেকে মানুষের ইতিহাস ঐশ্বরিক পরিকল্পনা মতাে পরিচালিত হচ্ছে। হিন্দু-বৌদ্ধ মতে ধর্ম (অর্থাৎ অনুমােদিত সনাতন রীতিনীতি) ক্রটিহীনভাবে পালন করে অবশেষে ‘সংসার’ বা ইতিহাস থেকে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেকের মােক্ষ বা নির্বাণ লাভ, অর্থাৎ জন্মান্তর চক্র থেকে মুক্তি। আর মানবতাবাদী গ্রীকরা মনে করত, এই পৃথিবীতেই পূর্ণতম ও শ্রেষ্ঠতম বিকাশের দিকেই মানুষের গতি, তার সর্ববিধ মুক্তিসাধন, তার অনন্ত সম্ভাবনাকে সফল করতেই মানুষ ইতিহাসের পথে যাত্রা করেছে। রেনেসাঁসের পর থেকে এই দৃষ্টিভঙ্গি সিভিলাইজেশনের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই কথাকেই ইকবাল একটু ঘুরিয়ে বলেছেন যে, আল্লাহর পরিকল্পিত সৃষ্টির পূর্ণতম প্রকাশের, তার নিরন্তর সৃষ্টি কার্যের অংশীদার হওয়ার জন্য প্রয়াসই মানুষের নিয়তি।