বিকালে আগে থেকেই শহরবাসী ও গ্রামের লােকেরা সার্কিট হাউসের মাঠে এসে জমা হয়ে থাকে। রফিক ভূঁইয়া, প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান, ডি-সি, এসপি, পৌরসভার চেয়ারম্যান, ভি, সি ও ডাঃ এ, আর, খান সহ শহরের বহু গণ্যমান্য লােক এসে গেছেন। মাঠের মধ্যে একটি সাজানাে মঞ্চ। সেই ভােরের আলাে ফুটবার আগে থেকেই নদীর ওপার হতে মুক্তিযােদ্ধারা শহরে আসতে শুরু করেছে। মঞ্চের খুব কাছে ওদের বসানাে হয়েছে। এখনাে কাঁধ ছড়ানাে লম্বা চুল ওদের, গোঁফ-দাড়িতে বােঝাই মুখ। প্রত্যেকের গলায় ঝুলছে ফুলের মালা। একপাশে একটা ঘেরা দেয়া জায়গায় গদি আঁটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে দশ বছরের রাফি। দুহাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা। এখনাে শরীর সম্পূর্ণ সেরে ওঠে নি। তার পাশে রয়েছে আরাে কয়েকজন পঙ্গু মুক্তিযােদ্ধা। সার্কিট হাউসের মাঠটা সেদিন মানুষে গিজগিজ করছিল। দীর্ঘ ন টি মাস ধরে যে মানুষেরা নিজেদের ঘরে নিজেরাই বন্দি ছিল, তারা আজ বের হয়েছে। ওহ, মুক্তির কী আনন্দ! কী সুখ! ছেলে মেয়ে, জোয়ান বুড়াে সবাই এসে জড়াে হয়েছে মাঠে। কেউ বাদ নেই। সবাই গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই বন্ধু ও সাহায্যকারী দেশ ভারত থেকে মেজর জেনারেল অরােরা এসে যাবেন। ময়মনসিংহবাসীদের অভিনন্দন জানাবেন, মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে হাতে হাত মেলাবেন তিনি। বেশ আওয়াজ তুলে একটি হেলিকপ্টার এসে নামল মাঠে। নেতারা ও গণ্যমান্য লােকেরা তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে মালা পরালেন অরােরার গলায়। মালায় মালায় তাঁর বুক ভরে যায়। বক্তৃতা দেবার আগে আরােরা রাফি ও অন্যান্য পঙ্গুদের কাছে এলেন, পিঠে মাথায় হাত বুলালেন, নিজের গলা থেকে মালা খুলে তাদের সবার গলায় তা পরিয়ে দিলেন। রাফি সবচেয়ে ছােট বলে তাকে দিলেন দুটো মালা। একটি বকুল ফুলের, অন্যটি বেলী ফুলের। নেতাদের নির্দেশ দিলেন তাঁরা যেন অবশ্যই তাদের সম্পূর্ণ সুস্থ করে তােলার দায়িত্ব নেন।