১/ রাজকুমাররা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে, তিনটি পথে তিন রঙের চিহ্ন আঁকা। সেই চিহ্নের মধ্যে কিছু লিখে রাখা আছে। কৌতূহলী হয়ে তারা পথগুলোয় লেখা নির্দেশনা পড়ে। সবচেয়ে চওড়া পথের চিহ্নে লেখা আছে, “চলে যাও এই পথটি ধরে, নিরাপদে আসবে ফিরে।” মাঝের পথে লেখা আছে, “যেতে যদি চাও এই পথে, আসতে পারো ফিরে আবার নাও পারো ফিরতে।” সবচেয়ে সরু ও দুর্গম পথে লেখা, “এই পথ ধরে যাবে যে, ফিরবে না আর কভু সে।”..
২/ ...টাংরির বাড়িতে অস্থির চিত্তে মারফার মৃত্যুসংবাদ শোনার প্রতীক্ষায় উদগ্রীব ডোরিয়া। মারফার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার উৎসব উপলক্ষ্যে সে প্রচুর পরিমাণে যবের রুটি তৈরি করতে থাকে। অধৈর্য হয়ে ডোরিয়া কর্কশভাবে চেঁচিয়ে ফ্র্যাঙ্ককে হুকুম করে, "ওহে বুড়ো ষাঁড়, এগিয়ে গিয়ে তোমার মেয়ের লাশ এনে সৎকারের ব্যবস্থা করো।" তখনই তাদের পোষা কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করে বলে ওঠে, "তার কন্যাটি দ্যুতি ছড়িয়ে আসছে ফিরে, ডোরিয়ার কন্যা জমবে নিকষ অন্ধকারে।" চেঁচিয়ে ঝামটা দেয় ডোরিয়া, "ধুর! ধুর! হতভাগা। এই নে তোর ভাগের রুটি। খেয়ে বল, তাইরে নাইরে নাইরে না, লিজি হবে মহারাণী, আনবে বিপুল খাজানা। ফ্র্যাঙ্কের মেয়ে প্রাণটি নিয়ে আর ফিরবে না, আর ফিরবে না।” কুকুরটি তৃপ্তি সহকারে সবগুলো রুটি খেয়ে আবারো ঘেউ ঘেউ করে গান ধরে, "তাইরে নাইরে নাইরে না। আসছে মারফা মুকুট মাথায় রাণীর বেশে, বাজাও ঢোলক বাজাও বাজনা। তাইরে নাইরে নাইরে না..."
৩/ ...অনেক হয়েছে! এবার আমি যা বলবো সেটা তোমাকে মানতে হবে। আগামীকাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রথমেই যে পুরুষ ভিখিরি সিংহদ্বারে আসবে, সে হবে তোমার পতি। অবশ্যই তুমি তাকে বিয়ে করতে হবে। আমার হুকুমের বিন্দুমাত্র নড়চড় হবে না। হয় হুকুম মানবে, নয় জনহীন দ্বীপান্তরে হবে চির নির্বাসন।
রাজকন্যা জীবনে কখনো তার পিতাকে এতো রাগতে দেখেনি। আর একমাত্র সন্তানের বেলায় কখনো রাগের ছিটেফোঁটাও প্রকাশ করার তো প্রশ্নই আসে না! কান্নায় ভেঙে পড়ে পিতার পায়ে লুটিয়ে এহেন কঠিন সিদ্ধান্ত উঠিয়ে নিতে মিনতি করতে থাকে রাজকন্যা তিয়ানা। কিন্তু জেদ চেপে গেছে মহারাজার। সাফ জানিয়ে দিলেন, কিছুতেই হুকুমের নড়চড় হবে না।..
৪/ ....একপর্যায়ে অগ্নিকুণ্ডলী ঘিরে ফেলে লিয়ামকে। উপায় না দেখে লিয়াম নিজেকে একটি চিলে রূপান্তরিত করে গনগনে অগ্নিশিখার উপর দিয়ে উড়তে থাকে। ঝাঁজালো অগ্নির তীব্র ত্যাজে অসহ্য গরম হয়ে ওঠেছে উপরের বায়ুমণ্ডল। বহু উপর থেকে সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির মাধ্যমে লিয়াম ভূপৃষ্ঠের একটি স্থানে জলে ভরা হ্রদ দেখতে পায়। আগুনের আঁচ থেকে রক্ষা পেতে সেই হ্রদে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুহূর্তেই সে টের পায়, হ্রদের পানিও টগবগ টগবগ করে ফুটছে। বিলম্ব না করে আবার সে ওড়াল দিলো বহু উপরে। সেখান থেকে সে লক্ষ্য করে, দৃষ্টিসীমার যতদূর নজর যায় ততোদূর পর্যন্ত কেবল আগুন আর আগুন। আগুনের ভয়ঙ্কর তাপে তেঁতে ওঠে টগবগিয়ে ফুটছে সমুদ্রের জলরাশি। কীভাবে তার মা-ভাইদেরসহ সকল জাতিগোষ্ঠীকে রক্ষা করবে, তা কিছুতেই বুঝতে পারছে না লিয়াম। নিজের জীবনও তখন বিপন্নপ্রায়। আগুনের প্রবল তাপে ফুরিয়ে আসছে লিয়ামের দম। তক্ষুনি রাঙির কথা মনে পড়ায় সে বৃষ্টির জন্য রাঙির উদ্দেশ্যে আর্তনাদ করতে থাকে..
৫/ ...এবারও পাত্তা না দিয়ে খুলে তৃতীয় কপাট। মহিষের হাড়গোড়ে ঠাসা সম্পূর্ণ কক্ষ। চতুর্থটিতে ছিলো গাধার হাড়গোড়। পঞ্চমটি পরিপুর্ন ঘোড়ার হাড়গোড় দ্বারা। ষষ্ঠ কপাট খুলে বিশাল কক্ষ কানায় কানায় মানুষের মাথার অজস্র খুলি দ্বারা পরিপুর্ন দেখে ভীত হয়ে আঁতকে ওঠে রেইফ। দ্রুত সেটি রুদ্ধ করে দুরুদুরু প্রাণে খুলে সপ্তম কক্ষের কপাট। কক্ষের ভেতর বেশ স্বাস্থ্যবান টগবগে অতুলনীয় সৌন্দর্যের জীবন্ত একটি ঘোড়া। ঘোরলাগা দৃষ্টিতে ঘোড়াটিকে দেখতে থাকে রেইফ। "চিহিহি, চিহিহি, ওহ হো! তুমি যে দেখছি আদম সন্তান! কোত্থেকে এখানে মরতে এলে হে?" ঘোড়াকে কথা বলতে দেখে আশ্চর্য হয়ে রেইফ জানায়, "বা রে! মরবো কোন দুঃখে? এটা আমার মহান পিতার অট্টালিকা। আমি তার ভীষণ স্নেহের একমাত্র পুত্র।" "ওহ! অবশ্যই! তোমার পিতাতো সুমহান, মহাবিদ্বান পুরুষ, তাই না? কিন্তু, তুমি কি জানো যে সে এক হিংস্র পিশাচ? সে মানুষখেকো তো বটেই, এছাড়াও হাতের নাগালে পাওয়া সকল প্রকারের জীবজন্তুই তার আহার। এই অট্টালিকায় জীবন্ত কেবল তুমি আর আমি।..."
৬/ ...ইনাপির কোমরে ঝুলন্ত খরগোশগুলোর উপর নজর পড়তেই ডাইনীর লোলুপ দৃষ্টি জ্বলে ওঠে; ঠিকরে যেনো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে কুতকুতে চোখগুলো। বিচ্ছিরিভাবে ঠোঁটের দুপাশ বেয়ে ঝরতে থাকে লোলের কষ। চট্টাস চট্টাস শব্দে মুখে জমে ওঠা লোল গিলতে গিলতে ডাইনীটি খ্যাচখ্যাচ হেসে বলতে থাকে, "আরেব্বাহ! এত্তোগুলো খরগোশ! খাবো সবই হাপুসহুপুস। রসিয়ে রসিয়ে অতঃপর খাবো বাচ্চা মানুষ। আগে তোর গুর্দা খাবো, কলিজা খাবো। এরপর খাবো তুলতুলে গাল, চওড়া সিনা, পেটের গোশত। হাত খাবো, পা খাবো। কচি হাড়ের সবটুকুই কুড়মুড় কুড়মুড় চিবিয়ে খাবো। খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক… দারুণ স্বাদের! দারুণ স্বাদের বাহ! ভাগ্যটা আজ অতি চমৎকার! বাহ রে বাহ রে বাহ!" দুষ্ট ডাইনী ধারালো নখর দ্বারা এককোপে কেটে ফেলে ইনাপির কোমরের রশিগুলো। সংগে সংগে ঝুপঝাপ খরগোশগুলো পড়ে স্তূপাকার হয়ে ওঠে। একধাক্কায় ইনাপিকে গুহার একেবারে ভেতরের কোণে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে সে ফটকের আগুনের পাশে পা ছড়িয়ে বসে...
৭/....কুঁজো বৃদ্ধা সরাসরি গিয়ে রাজা মহাশয়ের মুখোমুখি উপস্থিত হয়ে তাঁকে কুর্নিশ জানিয়ে বললো, "দীর্ঘজীবী হোন আমাদের মহামান্য মহারাজ। আপনার দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণরূপে ফিরে পেতে এই জগতে একটি মাত্র ঔষধ আছে। আর তা হলো দৈত্যরাজ্যের আশ্চর্য ঝর্ণার ঔষধি জল। সেই ঔষধি জল দিয়ে চক্ষুদ্বয় ধৌত করামাত্র আবারো ফিরে পাবেন পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি। বাড়বে দৃষ্টিশক্তির প্রখরতা, প্রসারতা।" বৃদ্ধার দৃঢ় কথাগুলোয় নড়েচড়ে বসেন মহারাজা ও মহারাণী। নড়েচড়ে ওঠে সকল সভাসদমণ্ডলী। অধীর আগ্রহচিত্তে মহারাজা জানতে চাইলেন, "সেই ঝর্ণার জল কীভাবে পাওয়া সম্ভব? দৈত্যরাজ্য কোথায় আছে সেটাই তো আমাদের কারো জানা নেই!..."
শবনম চৌধুরী এর সাত রূপ সাত কিসসা এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 224.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Shat Rup Shat Kissa by Shabnam Chowdhuryis now available in boiferry for only 224.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.