স্টেশনের সামনে রিকশা থামতেই অবাক হলাম। ভেতরে গিজগিজ করছে মানুষ। রেল স্টেশনে মানুষ গিজগিজ করবে এটা এমন কোন অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় কিন্তু আমাকে বলা হয়েছে এই সময়ের ট্রেনে ভিড় একদম হয় না এবং শুয়ে বসেই | আরামের সাথে রাজবাড়ি পৌঁছে যাওয়া যাবে। এখন মনে হচ্ছে আরাম তাে দূরের কথা, সুস্থ দেহে রাজবাড়ি পর্যন্ত যেতে পারলে বুঝতে হবে এ বছর আমার ভাগ্যরেখা খুবই জ্বলে।। আমি অবাক চোখে স্টেশনের দিকে তাকিয়ে আছি, এই সময় রিকশাঅলা বলল, এইটাই স্যার কুষ্টিয়া কোট স্টেশন। নাইমা জলদি টিকেট লন। নইলে কিন্তুক সিট পাইবেন না। আইজ খুব ভিড়। রিকশা ছাড়ব কিনা সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। স্টেশনের গেটের কাছেই যে জনসমুদ্র দৃষ্ট হচ্ছে তাতে আমার পক্ষে এই ট্রেনে চেপে রাজবাড়ি পৌছানাে সম্ভব নয়। পৃথিবীতে যে জিনিসটা আমি সব সময় এড়িয়ে চলি তা হচ্ছে ভিড়। লােকজনের গাদাগাদি আমার একদম সহ্য হয় না। ভিড় এড়িয়ে চলার প্রবণতাটা আমার মধ্যে জন্ম নিয়েছে আরাে কয়েক বছর আগে। তখন আমি ফরিদপুরে থাকি। রাজেন্দ্র কলেজের আই. এ. প্রথম বর্ষের ছাত্র। কলেজের বাসে ভয়াবহ রকমের ভিড় হওয়ায় আমি খুব একটা বাসের দিকে এগােতাম না। একদিন বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে এগােতে হল।ওরা যার যার মত ভেতরে চলে গেল বীরবিক্রমে ঠেলাঠেলি করে। কিন্তু তৎকালীন বলহীন শুকননা শরীরে আমার পক্ষে কাউকে ঠেলে নড়ানাে সম্ভব ছিল না বলেই গেটে বাদুড়ের মত ঝুলে থাকতে হল। একটা মাত্র হাতে সমস্ত শরীরের ভার রাখা আমার কাছে খুব কষ্টকর হলেও প্রাণপণ চেষ্টা করছি। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে হাত ছিড়ে যাচ্ছে। তার উপর গেটে যারা ঝুলছিল তাদের বহির্মুখী চাপ যেন ক্রমেই বাড়ছে। হঠাৎ একটা রিকশার ধাক্কা খেয়ে ছিটকে যেতে হল আমাকে। সেই মুহূর্তে আমার কি হয়েছিল টের পাইনি, পরে জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হাসপাতালে। আমার শরীরের উপর দিয়ে বাসের একটা চাকা চলে যাবার কথা ছিল, কিন্তু যায়নি। আমি ছিটকে পড়ার