আবদুল মান্নান তালিব ছিলেন একজন খ্যাতনামা চিন্তাবিদ, গবেষক ও লেখক । বিভিন্ন বিষয়ে তিনি গ্রন্থ রচনা করেছেন । ইসলাম ছিল তাঁর চিন্তা-চেতনার মূল কেন্দ্র । তাঁর রচিত সাহিত্যকে মোট তিন ভাগে ভাগ করা যায় । প্রথমত মৌলিক রচনা, দ্বিতীয়ত অনুবাদ সাহিত্য ও তৃতীয়ত শিশু-কিশোর সাহিত্য ।
তাঁর মৌলিক রচনাবলীর প্রধান বিষয় হলো ইসলাম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ইত্যাদি । এসব বিষয়ে তিনি অনেক গবেষণা ও নতুন নতুন তথ্য ও যুক্তির অবতারণা করে অনেক প্রবন্ধ- নিবন্ধ ও গ্রন্থ রচনা করেছেন । এর দ্বারা বাংলাভাষী পাঠকের জ্ঞান ও মনন বিপুলভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে।
তাঁর অনুবাদ সাহিত্যের কলেবর যেমন বিপুল তেমনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । আল-কুরআন, আল-হাদীস, ফিকহ্ ও বিশ্ববরেণ্য বিভিন্ন ইসলামী চিন্তাবিদদের খ্যাতনামা গ্রন্থাদির অনুবাদ এর অন্তর্ভুক্ত। এর দ্বারা বাংলা অনুবাদ সাহিত্য যেমন সমৃদ্ধ হয়েছে, তেমনি কুরআন- হাদীস ও বিশ্ববিখ্যাত জ্ঞানী ব্যক্তিদের চিন্তাধারার সাথেও বাংলাভাষী পাঠক সুপরিচিত হয়ে উঠেছেন । আবদুল মান্নান তালিবের শিশুতোষ রচনার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সহজ সরল ভাষায় তিনি শিশু-কিশোরদের মন-মানসিকতার উপযোগী অসংখ্য শিক্ষামূলক চমৎকার গ্রন্থ রচনা করেছেন । তাঁর শিশুতোষ রচনাবলী বাংলা শিশু সাহিত্যকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি শিশু-কিশোরদেরকে ভবিষ্যত আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এগুলো অনুপ্রেরণা যোগাবে ।
সর্বোপরি, আবদুল মান্নান তালিব ছিলেন ইসলামী ভাবধারার সাহিত্যের অন্যতম রূপকার । ইসলামী সাহিত্যের ধরন-ধারণ, উপাদান-উপজীব্য ও এর রূপরেখা সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের ভিত্তিতে গবেষণা করে তিনি এক্ষেত্রে মূল্যবান দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সাহিত্য সংগঠন করে, সভা-সমিতি, কর্মশালা ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি নবীন-প্রবীণ সকল সৃজনশীল ব্যক্তি, বিশেষত তরুণদেরকে তিনি এ ব্যাপারে যথার্থ পথ-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন । তিনি ছিলেন একজন চিন্তাশীল পথিকৃৎ ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী একজন গতিশীল সংগঠক । যুগপৎ লেখালেখি, চিন্তা-চেতনা ও সংগঠনের মাধ্যমে তিনি ইসলামী সাহিত্যের রূপরেখা সকলের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। এ যুগের তরুণ কবি-সাহিত্যিক-লেখক অনেকেই তাঁর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলামী ভাবধারার সাহিত্য সৃষ্টিতে মূল্যবান অবদান রেখে চলেছেন । সংগঠক হিসাবে আবদুল মান্নান তালিবের মূল্যবান অবদান রয়েছে । 'বাংলা সাহিত্য পরিষদ'-এর তিনি অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং আমৃত্যু পরিচালকের পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন । বলতে গেলে, তিনি ছিলেন এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রাণ-পুরুষ । এছাড়া পাক সাহিত্য সাথে, শাহীন ফৌজসহ আরো অনেক সংগঠনের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। গঠনমূলক কাজ ও চিন্তা-চেতনায় উদ্ভাসিত এ ত্যাগী ব্যক্তি সর্বদা ব্যাপৃত থাকতেন সমাজ ও মানুষের কল্যাণ চিন্তায়। সাংবাদিক হিসাবেও আবদুল মান্নান তালিব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দৈনিক সংগ্রাম, মাসিক পৃথিবীসহ বিভিন্ন সাময়িক পত্রিকার সম্পাদনা বিভাগে তিনি দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন। নিজে সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করার সাথে সাথে তরুণদেরকে এ জাতিগঠনমূলক পেশায় উদ্বুদ্ধ করে তাদেরকে হাতে-কলমে সাংবাদিকতা শিক্ষা দেয়ার কাজে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন।
ব্যক্তিগতভাবে আবদুল মান্নান তালিব ছিলেন অন্ত্যস্ত সচ্চরিত্রবান, সত্যবাদী, সদালাপী, সদাচারী, ভদ্র, অমায়িক ও নিরীহ প্রকৃতির শান্ত-শিষ্ট আদর্শ মানুষ। তিনি কারো মনে কখনো আঘাত দিতেন না । তাঁর আচরণে সকলে মুগ্ধ হতো। মানুষের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে তিনি নিজে সকলের আন্তরিক ভালবাসা অর্জন করেছেন । তিনি ছিলেন সকলের একান্ত প্রিয় এক মহৎ ব্যক্তিত্ব। একজন প্রকৃত মুসলিম হিসাবে তিনি ইসলামের জীবনাদর্শ নিষ্ঠার সাথে পালন করে চলতেন। আখিরী নবী ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামদের সর্বোত্তম জীবনাদর্শ তিনি সর্বোতভাবে অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করতেন। ইসলামই ছিল তাঁর চলার পথে একমাত্র দিক-দর্শন। ইসলামের বিজয় ও সার্বিক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই তিনি সারা জীবন কাজ করে গেছেন। মহান আলাহর দরবারে আমরা তাঁর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করছি। আবদুল মান্নান তালিবের জন্য ১৫ মার্চ ১৯৩৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের অর্জুনপুর গ্রামে। তিনি ২২ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে ঢাকার শান্তিবাগে নিজ বাসায় ইন্তিকাল করেন। তাঁর ইন্তিকালের পর বাংলা সাহিত্য পরিষদের পক্ষ থেকে এ স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু নানা প্রতিকূল অবস্থার প্রেক্ষিতে এ কাজে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব ঘটে। অবশেষে মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে এ স্মারক গ্রন্থ প্রকাশিত হলো। এতে লেখা দিয়ে, বিজ্ঞাপন দিয়ে ও বিভিন্নভাবে যারা সহযোগিতা করেছেন আমরা তাঁদের প্রত্যেকের নিকট কৃতজ্ঞ। বিশেষভাবে অধ্যাপক মুহম্মদ মতিউর রহমান, আজিজুল ইসলাম, অধ্যাপক খন্দকার আবদুল মোমেন, কবি সোলায়মান আহসান, শিল্পী মোমিন উদ্দীন খালেদ, মকসেদ আলী, আবদুল্লাহিল মাসুদ, খালিদ সাইফুল্লাহ- এদের একান্ত সহযোগিতা ছাড়া এই স্মারক গ্রন্থটি প্রকাশ হওয়া দুরূহ ছিল। তাদেরকে যথাযথ মাযারে খায়ের প্রদানের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি। সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এ স্মারক গ্রন্থটি হয়তো সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়নি। এতে অনেক অপূর্ণতা ও ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। আশা করি, সহৃদয় পাঠক এটাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আবুল আসাদ এর পথিকৃৎ এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 375.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Pothikit by Abul Asadis now available in boiferry for only 375.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.