দ্বাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে চেঙ্গিস খানের নেতৃত্বে মােঙ্গলদের উত্থান পৃথিবীর ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। একটি অখ্যাত, উচ্ছল, আত্মকলহে লিপ্ত, শতধাবিভক্ত বর্বর মােঙ্গল জাতিকে একত্রিত করে তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে এক দুর্বার শক্তিতে পরিণত করেন। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক এইচ. জি. ওয়েলস্ বলেন, "From entire obscurity the Mongols came very suddenly into history towards the close of the twelefth century". বস্তুত : মঙ্গলদের উত্থানে পৃথিবীর ইতিহাসের অনেক রূপান্তর ও পরিবর্তন ঘটেছে। অনেক সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটেছে। এদের এক একটি আক্রমণ পৃথিবীর ইতিহাসে রচিত হয় এক একটি অশ্রুসজল অধ্যায়। পূর্ব ইউরােপসহ এশিয়ার একপ্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চলে এদের এ ধ্বংসাভিযান। এসব নিষ্ঠুর অভিযানের জন্য অনেক সমালােচক তাদেরকে "Terror of the World" বা “বিশ্বের ত্রাস” "Curse of God" বা “বিধাতার অভিশাপ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক P. Sykes বলেন, "No invasion in historical times can compare in its accumulated horrors or its far-reaching consequences with that of the Mongols, wich swept across the entire with of Asia annihilating Population and civilization, and from which Eastern Europe did not escaps." অর্থাৎ “মানব জাতির ইতিহাসে ভয়াবহতা অথবা সুদূরপ্রসারী ফলাফলের ক্ষেত্রে মােঙ্গল আক্রমণের সাথে অন্য কোনাে আক্রমণের তুলনা করা যায় না। দুর্ধর্ষ মােঙ্গল জাতি এশিয়ার একপ্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বহু জনপদ ও সভ্যতাকে পদদলিত করে। পূর্ব ইউরােপও তাদের (দুর্বার আক্রমণ ও উন্মত্ত ধ্বংসের) হাত থেকে রক্ষা পায়নি।" মােঙ্গলরা রাশিয়া জয় করে সাইলেসিয়া এবং মােরাভিয়া বিধ্বস্ত করে। তারা পােল্যান্ডকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে। তাদের তীব্র আক্রমণে জাপান, কোরিয়া, মিয়ানমার (বার্মা), মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ভারত প্রভৃতি দেশের উপর পড়ে। “তারিখ-ই-জাহান গুসায়” বলা হয়েছে"They came, They uprooted, they burned, they slew, they carried off, they departed." অর্থাৎ “তারা এসেছিল তারা ধূলিসাৎ করেছিল, তারা অগ্নিসংযােগ করেছিল, তারা হত্যা করেছিল এবং তারা সবকিছু বলপূর্বক লুণ্ঠন করে চলে গিয়েছিল।” মােঙ্গলরা মধ্য এশিয়া, পূর্ব ইউরােপ ও রাশিয়ার সাম্রাজ্যই স্থাপন করেনি, তারা বিশ্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে গিয়েছে।