রাতের এই নির্জনতা হঠাৎ অস্বস্তিকর লাগে সুহায়লার কাছে। সন্ধ্যে হতেই মনটা কেমন অস্থির। তবুও একটানা টিভি দেখেছে। একটার পর একটা। নাটকের সিরিয়াল শেষ করেছে অমনােযােগীভাবে। রাতের খাবার শেষ করে অনিচ্ছায়। নেহাত প্রয়ােজন তাই খাওয়া। ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে পুঁইশাক, কাঁচকলা-টমেটোর ঝোল আর ঝাল ঝাল গরুর গােস্ত । আজকের খাবারের তালিকাটা সুহামলার খুবই প্রিয়। কিন্তু মন দিয়ে সেই খাবার স্বাদ যেন অনুভব করতে পারেনি। গরমের মাত্রাটাও বেড়েছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লােডশেডিং। টুপ করে বিদ্যুৎ চলে গেল। আইপিএস থাকা সত্ত্বেও বদ্ধ ঘরে বসে থাকতে মন চায় না ওর। বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। খােলা বারান্দায় কিছুক্ষণ পর পর ঠাণ্ডা বাতাস এসে পরশ দিচ্ছে ওর গায়ে। খাবার খাওয়ার পর কিছুটা সময় হাঁটায় শরীর ঘেমেছিল। ঠাণ্ডা বাতাসে তার শিহরণ অনুভব করে সুহালা। কেবল রাত এগারােটা। সােহান বাসায় ফেরে বেশ রাতে। প্রথমে এটা মেনে নিতে সুহায়লার কষ্ট হতাে। কিন্তু এখন সয়ে গেছে। এই ব্যাপারটা আর ভাবায়ও না, বরং একা থাকতে ভালােই লাগে ওর। | সুহায়লা ভাবে, যে কেউই চট করে বলে আমরা সুখী দম্পতি। কিন্তু কেন? হয়তাে আমাদের আচার-আচরণে সেটা প্রকাশ পায়। সত্যিই তাে, বিয়ের পরে আজ পর্যন্ত আমাদের মাঝে কোনো অসমঝোতা হয়নি। বন্ধুরা বলে আমি বুদ্ধিমতী। আমার মাঝে নাকি এমন কিছু গুণ আছে যে কারণে আমি সুখী। তবে সােহানও ভালো। বেশ ভালাে ছেলে, সহজ-সরল যাকে বলে। চট করে যে কেউই ওর মন জয় করতে পারে। সােহানও খুব দ্রুত যে কাউকে বিশ্বাস করে মনের গভীরে নিয়ে নেয়। এজন্য বহুবার বহু ঝামেলাও পােহাতে হয়েছে। কিন্তু স্বভাব কি বদলানাে সবে? অনেক চেষ্টা করেও পারেনি। সুহায়লা বুকের গভীরে চাপা কষ্ট অনুভব করে। বুকের মাঝে যে কষ্টগুলাে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সেগুলাে একটার পর একটা নড়েচড়ে ওঠে। কেউ একজন উপরতলা থেকে জ্বলন্ত সিগারেটের শেষাংশ ছুড়ে ফেলে রাস্তায়। সাথে সাথেই আগুনের ছােট ছােট ফুলকি ছিটকে পড়ে চারপাশে। (সংক্ষিপ্ত……)