আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ করে সৃষ্ট কোনাে ঘটনা নয়। এর প্রেক্ষাপট এক কথায় বলা যায় বাঙালি জাতির অস্তিত্বের সংগ্রামের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। বাঙালি জাতির ইতিহাস মানেই যেন বিদ্রোহ, বিপ্লব কিংবা যুদ্ধের ইতিহাস। নানা সম্পদসম্পত্তিতে সমৃদ্ধ এই জাতির কখনাে ধর্ম, কখনাে সংস্কৃতি, কখনাে ভৌগােলিক অবস্থানে অসিন কিংবা হীন স্বার্থ হাসিলে লােপ মনােভাব নিয়ে বারবার কুটিল দৃষ্টি ফেলেছে বেনিয়ারা। নিষ্পেষিত হতে হতে বাঙালির রক্তে তাই উত্তরাধিকার সূত্রেই চিরকাল প্রবাহিত বিদ্রোহ আর সংগ্রামের তপ্ত বক্ত। বাঙলার সর্বশেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন ইংরেজ সেনাবাহিনীর নিকট পরাজিত হওয়ার পর সেই হৃত স্বাধীনতা উদ্ধার হওয়ার তারিখ ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত ২০০ বছরের কাছাকাছি সময়ের মধ্যে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাস বহুমুখী ঘটনায় স্বর্ণোজ্জ্বল। বাঙালির স্বাধিকার ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় অবদান রেখে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন কিছু মহান মানুষ। বাঙালি চিরকাল তঁাদের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। ইংরেজ শাসন আমলে বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত বাঞ্চালির স্বাধীনতা আদায়ের সংগ্রামগুলাের মধ্যে ফকির সন্নাসীবিদ্রোহ (১৭৬৯-৭০), কুকবিদ্রোহ (১৭৮৩৮৪), ওহাবী বিদ্রোহ (১৭৮৬-১৮৩১), ফরায়েজী আন্দোলন (১৮৩৭), তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা গড়ে যুদ্ধ ঘােষণা এবং ইংরেজদের আক্রমণে প্রাণদান (১৮৩১), সিপাহীবিদ্রোহ (১৭৫৭-৫৮), নীলবিদ্রোহ, (১৮৫৯-১৮৬২), কুকাবিদ্রোহ (১৮৭২), চট্টগ্রামের যুব বিদ্রোহ (১৯৩০-১৯৩৪), ভারত ছাড় আন্দোলন (১৯৩৯) উল্লেখযোগ্য। ১৯৪৭-এ ভারত বিভলির মধ্য দিয়ে ইংরেজ শাসন অবসানের পর একালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণের নাগপাশ থেকে বর্তমান বাংলাদেশকে উদ্ধারের লক্ষ্যে ২৩ বছরে যে সকল আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল তার মধ্যে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন অন্যতম। এরপর ১৯৬২-এর শিক্ষা কমিশন বাতিলের আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে বাঙালি স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৮-৬৯-এর ছাত্রদের ১১-দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅথন এবং সর্বশেষ ১৯৭০-এর নির্বাচনী যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।