মানব জাতির পথপরিক্রমা ও অগ্রযাত্রার ইতিহাস বড়ই বৈচিত্র্যময়, বড়ই বিস্ময়কর। অজানাকে জানার জন্য মানুষের রয়েছে এক দুর্বার স্পৃহা এবং সেই থেকে জন্মলাভ করেছে অনুসন্ধিৎসা। চেতনার লগ্ন থেকেই মানুষ যুগে যুগে এ অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে আসছে। কৌতুহলী মানব মনে রয়েছে কতকগুলাে সার্বজনীন প্রশ্ন, কতকগুলাে সার্বজনীন জিজ্ঞাসা ; কে আমি? কোথায় থেকে এলাম? কোথায় আমার গন্তব্য? জগৎ কি কি তার স্বরূপ? কে এ জগৎ সৃষ্টি করেছেন। তাঁর প্রকৃতিই বা কি? জগতের সাথে সৃষ্টিকর্তার সম্পর্ক কি? জগৎ পরিকল্পনায় মানুষের স্থান, দায়িত্ব ও কর্তব্য কি? কৌতুহলী মনের এ জ্ঞানপিপাসা মেটাতে গিয়ে মানুষ সন্ধান করেছে সত্যের এবং এর থেকে উদ্ভব ঘটেছে জীবন ও জগৎদর্শন। সত্যের স্বরূপ উদ্ঘাটন করা এবং সত্য সম্বন্ধে পরিপূর্ণ জ্ঞানলাভের প্রয়াসই হচ্ছে দর্শন। | মানব জাতির বিভিন্ন গােষ্ঠীর ও জাতীয় জীবনে এ সার্বজনীন জীবন-জিজ্ঞাসা ও চেতনাবােধ আবর্তিত হয়েছে বার বার। প্রতিটি গােষ্ঠী ও জাতীয় বৈশিষ্ট্য অনুসারে এসব ব্যাখ্যায়িত হয়েছে। ফলে উদ্ভব ঘটেছে গােষ্ঠীয় ও জাতীয় চিন্তাধারা। | মুসলিম দর্শন হলাে মুসলিম জাতির চিন্তা ও চেতনার ধারা। মুসলিম দর্শন হচ্ছে সামগ্রিকভাবে জগৎ ও জীবনকে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস। মুসলমানগণ আদি থেকে শুরু কৱে আজ পর্যন্ত তাদের চিন্তাধারার এক অব্যাহত স্রোত রক্ষা করে চলেছেন। প্রাচীন ও আধুনিক চিন্তাধারার মধ্যে সমন্বয় ও যােগসূত্র স্থাপন করে তারা বিশ্ব ইতিহাসে এক গৌরবােজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। মুসলমানদের রয়েছে তাদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য, রয়েছে স্বকীয় চিন্তা ও চেতনার অনুভূতি—রয়েছে নিজস্ব শিক্ষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি।