মুর্শিদাবাদের ইতিহাসের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হইল। দশ বৎসর পূর্ণ হইতে যাহার রচনা আরম্ভ করিয়াছিলাম, আজ তাহা সাধারণের নিকট উপস্থিত করিয়া কথঞ্চিৎ শান্তিলাভ করিলাম। কাশীমবাজারের উদারহৃদয় মুক্তহস্ত মাননীয় মহারা শ্রীযুক্ত মণীন্দ্র চন্দ্র নন্দী মহােদয়ের একমাত্র অনুগ্রহবলেই মুর্শিদাবাদের ইতিহাস জনসমাজে প্রচারিত হইল। তিনি স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া ইহার মুদ্রণের যাবতীয় ব্যয়ভার প্রদান করিয়া আমাকে অনুগৃহীত ও উপকৃত করিয়াছেন। তঁাহার এই অসীম ঋণ গ্রন্থকার কখনও পরিশােধ করিতে পারিবেন কিনা সন্দেহ। মুর্শিদাবাদের ইতিহাসের দ্বারা যদি সাধারণের কিছুমাত্র আনন্দ বা উপকার লাভ হয়, তাহা হইলে মহারাজমহােদয়ের নিকটে তাহাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই কৰ্ত্তব্য। বাল্যকাল হইতে মুর্শিদাবাদের সহিত গ্রন্থকার নানা বিষয়ে বিজড়িত রহিয়াছেন। পাঠ্যাবস্থায় বন্ধুগণের সহিত কাশীমবাজার ও মুর্শিদাবাদের ভগ্নাবশেষের মধ্যে অনেক সময় বালসুলভ পরিভ্রমণে অতিবাহিত হওয়ায়, মুর্শিদাবাদের পূর্ব গৌরবের ভগ্নপ্পসমূহ গ্রন্থকারকে তাহার প্রাচীন ইতিহাসালােচনায় প্রবৰ্ত করিয়াছিল। স্বর্গীয় ডাক্তার রামদাস সেনের সুবিখ্যাত পুস্তকালয় ও বহরমপুর কলেজের পুস্তকাগার সেই আলােচনা দিন দিন পরিবর্ধিত করিয়া তুলে। প্রসিদ্ধ গ্রন্থ মুতাক্ষরীণের দুষ্প্রাপ্য ইংরাজী অনুবাদ গ্রন্থকার ডাক্তার সেনের পুস্তকালয় হইতেই প্রাপ্ত হন। সেই সময়ে মুর্শিদাবাদের আনন্দচন্দ্র ঘােষ বঙ্গভাষায় ও বহরমপুরের দীনবন্ধু সান্নাল ইংরাজীতে মুর্শিদাবাদের ইতিহাসরচনার চেষ্টা করিতেছিলেন। কিন্তু নানা কারণে তাহাদের ইচ্ছা ফলবতী হয় নাই। পরিশেষে তাঁহাদের জীবনের সঙ্গে সঙ্গে উক্ত মহােদয়ঘয়ের সমস্ত আশা নিৰ্বাপিত হইয়া যায়। তাহাদের সহিত গ্রন্থকারের পরিচয় থাকায় তাহার ইতিহাস আলােচনার প্রসার অধিকতর বিস্তৃত হয়। এই ইতিহাসালােচনাই ক্রমে গ্রন্থকারের মনে ইতিহাসরচনার ইচ্ছা জাগাইয়া তুলে।