মাইকেলের যুগঃ কোনাে কবিকে বুঝিতে হইলে তাহার যুগকে বুঝিতে হয়, কবি শনকেও বুঝিয়া লইতে হয়। শিক্ষিত বাঙালির প্রথম কবি মাইকেল মধুসূদনকে বুঝিতে হইলে তিনি যে যুগে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন সেই যুগের পরিচয়, বিশেষ করিয়া সেই যুগের সাহিত্যিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় অপরিহার্য। কারণ, সাহিত্যের ইতিহাসে যখনই কোনাে প্রতিভার আবির্ভাব ঘটিয়াছে, তখনই আমরা দেখিতে পাই, সেই যুগের প্রভাব তাহার উপর আসিয়া পড়িয়াছে এবং সেই যুগও তাহার দ্বারা অল্প-বিস্তর প্রভাবিত হইয়াছে। ইহাই নিয়ম। রামমােহনের মৃত্যুর দশ বৎসর পূর্বে অর্থাৎ ১৮২৪ সালে মধুসূদনের আবির্ভাব। বাঙলার ইতিহাসে তখন যুগসন্ধিক্ষণ। উনবিংশ শতাব্দীর পথম পাদের যাহারা যুগপুরুষ—দেবেন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর, রাজনারায়ণ, ভূদেব প্রভৃতি—তাঁহারা সকলেই দুই এক বৎসরের ব্যবধানে তখন জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। সাহিত্যে, সমাজে ও ধর্মে তখন বিপ্লব দেখা দিয়াছে। কলিকাতা তখন ছিল অখ্যাত অসংস্কৃত পল্লী। সেখানে বিদেশী বাণিজ্যের হাট বসিল; গ্রামের শ্যামল আবেষ্টন সরাইয়া দিয়া শহরের উদ্ধত রূপ প্রকাশ পাইতে লাগিল। ক্রমে সেই শহর আধুনিক কালকে আসন পাতিয়া দিল? বাণিজ্য এবং রাষ্ট্র-পরিচালনের পথ বাহিয়া বাংলাদেশে এক নূতন সভ্যতা আসিল এবং ইহার। প্রতিক্রিয়ায় বাঙলার চিত্তলােকে নূতন বেগ সঞ্চারিত হইল।