বিকেল চারটায় স্কুল ছুটি হয় আমার। একদিন ক্লাস শেষে বাসায় এসে দেখি মায়ের মুখ বাংলার পাঁচ। বাবা শুয়ে আছে, মুখ দেখে সুবিধাজনক মনে হলো না। আপুকে জিজ্ঞেস করলাম, ঘটনা কী, সেও জানে না। তবে সন্ধ্যায় তার মুখে শুনলাম, আমার নামে বাসায় চিঠি এসেছে! বাবা-মা খুব অবাক সে চিঠি দেখে। আমিও হতভম্ব। আল্লাহই জানেন কী লেখা সেই চিঠিতে । রাতে খাবার পর মা রুমে এসে খুব চিল্লিয়ে গেল, ‘কাল থেকে স্কুলে যাওয়ার সময় মাথায় কাপড় দিয়ে যাবি, মাথা নিচু করে থাকবি, রাস্তায় কেউ কিছু দিলে নিবি না, কেউ ডাকলে শুনবি না।’ আমরা একেবারে হতভম্ব, আমি আর আপু শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। সব কথা মাথার উপর দিয়েই গেল! আপু ও আমি বুঝলাম, ঝামেলা যা কিছু ওই চিঠি। তাই চিঠি আমাদের পড়তেই হবে। কিন্তু কীভাবে? রাতে বাবা-মা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর বারান্দায় হ্যাংগারে ঝুলানো বাবার শার্টের বুক পকেট থেকে চিঠিটি বের করে নিলাম। নীল রঙের কাগজে কালো কালি দিয়ে খুব সুন্দর গোছানো লেখা। আমি কাঁপছি, রীতিমতো ঘামছি। কেউ আমায় প্রেম নিবেদন করেছে! চিঠির ভাষায় নিজের বর্ণনায় মুগ্ধ হলাম। মনে হলো একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখি। আমার স্কুলে যাওয়ার সময় যে বয়েজ স্কুলটা, সে নাকি সেটাতেই পড়ে। আর আমার স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় সে তার স্কুল গেটে দাঁড়িয়ে থাকে আমাকে দেখার জন্য, ইত্যাদি, ইত্যাদি। চিঠির সাথে সাদাকালো পাসপোর্ট সাইজের ঝাপসা একটা ছবিও দিয়েছে! বাবা সকালে নাস্তা খাবার সময় জানালো, আজ থানায় জিডি করবে। আর আক্কাস চাচাকে কাল থেকে আমাদের স্কুলে আনা-নেওয়ার জন্য দায়িত্ব দেবে। আক্কাস চাচা, বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করেন। খুব বিশ্বস্ত ও সাহসী মানুষ। স্কুলে আমার ডেস্কে শিউলি এসে আমার হাত ধরে আমতা আমতা করছে কিছু বলার জন্য। কিন্তু সে না বলে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর সে আবার এলো, বলল, ‘মেঘলা, তুই কোনো চিঠি পেয়েছিস?’ আমি নির্বিকারে বললাম, ‘আমি পাইনি, বাবা পেয়েছে! থানায় জিডি করবে বলেছে, আর আক্কাস চাচা আজ থেকে আমাদের আনা-নেওয়া করবেন। কেউ বিরক্ত করলে হাত পা ভেঙে দেবেন!’ বলেই আমি হেসে কুটি কুটি হলাম! আমার বাবা স্বভাবতই ভীষণ ঠান্ডা ও ভালো মানুষ। কিন্তু আমাদের দু’বোনের কোনো সমস্যাই মেনে নিতে পারে না। এমনকি আমরা বাড়ির কোনো কাজ করি- সেটাও তার পছন্দ নয়। বাবার কাছে আমরা দু’বোন তার সকল সুখের উৎস। মা-ও খুব ভালোবাসে আমাদের, কিন্তু বাবার ভালোবাসার কোনো তুলনা নেই। ছোটো বেলায় আমার হাত কেটে গিয়েছিল, সেজন্য বাবা সারাদিন আমার হাত ধরে বসেছিল। সে আমাদের দু’বোনের বেলায় একটু বেশি চিন্তা করে, আর তাই চিঠিটা নিয়ে এত বেশি রেগে গেছে। বেশ কয়েকদিন পর বড়ো আপু জানালো- আমার নামে নাকি আরেকটা চিঠি এসেছে, তবে...
সিরাজুম মনিরা এর মেঘের আবর্তে মেঘলা কুটির এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 218.40 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Megher Aborte Meghla Kutir by Sirajum Monirais now available in boiferry for only 218.40 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.