ভূমিকা সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আরম্ভ— যিনি অসীম দয়ালু, অতীব কৃপাবান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ-অর্থাৎ ইসলাম নামক মহাপূর্ণাঙ্গ ও পবিত্র জীবনবিধান পাঁচটি স্তম্ভের উপরে ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। ইসলাম নামক মহাজীবনবিধান এক মহামহীরুহের ন্যায়ই। বলা চলে-তার মূল শিকড় পাঁচটি। কলেমা অর্থাৎ ঈমান, নামাজ, রােজা, হজ্জ্ব ও জাকাত- এই হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ। আর এর উপরে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে ইসলামের পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এর একটাকে বাদ দিলে এর ভিত্তি যেমন একটা কমে যায়, তেমনি একটাকে বাদ দিলে তার ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে যায়। এর একটিকেও বাদ দিলে তা সম্পূর্ণ বা পূর্ণ হয় না। আর এর সবটা নিয়েই পূর্ণাঙ্গ ইসলাম। বিষয়টিকে বােঝানাের জন্য আরাে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন- মানুষের ইন্দ্রিয় পাঁচটি। চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক। বলাবাহুল্য, এর কোনােটি বাদ দিয়েই যেমন পূর্ণাঙ্গ মানুষ কল্পনা করা যায় না, তেমনি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটিকে বাদ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইসলাম কল্পনা করা যায় না। মানুষ যেমন চোখ দিয়ে দেখে, কান দিয়ে শােনে, নাক দিয়ে শোঁকে, জিহ্বা দিয়ে চাখে তেমনি তুক দিয়ে অনুভব করে। এ হল মানুষের বাহ্যিক ইন্দ্রিয় বা বাহ্যিক অনুভূতির কথা। এর আভ্যন্তরিক ইন্দ্রিয় ও আভ্যন্তরিক অনুভূতির দিকও রয়েছে। ইসলামকেও জানতে এবং বুঝতে গেলেও তেমনি মানুষের বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীক দুটি অনুভূতিকেই সজাগ রাখতে হবে এবং তাই দিয়েই বুঝতে হবে। চোখের দেখা দর্শন— এ দেখা যেমন চর্মচক্ষু দিয়ে দেখতে হবে, তেমনি অভ্যন্তরীণ দৃষ্টি বা অন্তর্চক্ষু বা জ্ঞানচক্ষু দিয়েও দেখতে হবে। কান দিয়ে শােনার ব্যাপারটাও তেমনি, এ শােনা যেমন হবে বাহ্যিক, তেমনি হবে আভ্যন্তরিক। নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বকের ব্যাপারটিও ঐরকম। ইসলামের প্রতিটি বিষয়ই যেমন বাহ্যিক চোখ ও অনুভূতি দিয়ে দেখার ও অনুভব করার তেমনি আভ্যন্তরিক ও বিশ্বাসগত-এককথায়, রক্তমাংসসহ সমস্ত অনুভূতি ও অস্থিমজ্জাগত। বিশ্বাসই হল ইসলাম ধর্মবিশ্বাসের মূল কথা। এই বিশ্বাসকেই ইসলামী পরিভাষায়। বলা হয় ঈমান'। এই ঈমান বা বিশ্বাসের মূলগত বিশ্বাসকে অবলম্বন করে যে ধারণা বা অভ্যরীণ বিশ্বাস গড়ে উঠেছে, তাই হল ‘আকীদা। অভ্যন্তরীণ অর্থাৎ রক্তমাংসসহ গভীর আন্তরিকতাপূর্ণ বিশ্বাসই হল ‘আকীদা। কিয়ামত বা মহাপ্রলয় বা শেষ বিচারের দিন হল ইসলামী আকীদা- বিশ্বাস মতে, মুসলমানদের আল্লাহর সন্নিধানেই ফিরে যেতে হবে, সেখানে তার কর্মফলের হিসাব-নিকাশ হবে,আর এই হিসাব-নিকাশের পরেই তার শেষ ঠিকানা নির্ধারণ হবে। এবংবিধ বিশ্বাসই হল মুসলমানদের পরকাল সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের শেষ পর্যায়। • মুসলমানের যাবতীয় কাজকর্ম, জীবন ও সাধনা আবর্তিত হয় তার পারলৌকিক বিশ্বাসকে অবলম্বন করেই, সুতরাং কিয়ামত ও তৎসম্পর্কিত বিষয়াদি মুসলমানের জীবন ও সাধনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।