| ‘কিশোর বাংলা' আমাদের দিন-যাপনের বাস্থবতায় এক আকস্মিক বিক্ষেরণ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশ তখন নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। স্বপ্নগুলাে দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছিল একটার পর একটা। মানুষের তৈরি নানা দুর্বিপাকের সঙ্গে যােগ হচ্ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কত রজের কত কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত দেশটার কথা ভাবিবার মতে যেন কে নেই। ঝরা হয়ে যাচ্ছিল তার বুক। মানুষের মধ্যে তীব্র হয়ে উঠছিল আত্মসর্বতা। ক্ষত-বিক্ষত স্বদেশে দাড়িয়ে কে ভাববে দেশের ভবিষ্যতের কথা, দেশের সম্ভাব্য সোনালি দিনের কথা। ১৯৭৬ সনে ছােটদের জন্য সাপ্তাহিক হিসেবে কিশোর বাংলার আপ্রকাশ তাই এক ব্যতিক্রমী আয়ােজন, তা তাে বলাই যায়। এ জেনেও স্বস্তি হয়, এর প্রকাশের পেছনে আছে সুস্থ চিন্তা ও সুর্দীর্ঘ পরিকল্পনা। অর্থাৎ দেশ যখন চরম বিপর্যয়ে, তখনই তার। হয়েছিল, এমন এক সম্ভাবনার কথা। নুরুল ইসলাম পাটোয়ারীর সম্পাদনায় দৈনিক বাংলা থেকে কিশাের বাংলায় প্রকাশ দেশ জুড়ে শিশু-কিশােরদের। মনে এক আনন্দের ঝরনাধারা বইয়ে দিয়েছিল, তা বেশ মনে আছে। এমন নয় যে, দুখন দেশে ছােটদের কাগজ ছিল না। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা থেকে বের হত নবারুণ', বাংলাদেশ বেতার থেকে 'শাপলা-শালুক', গাংলা একাডেমী থেকে ধান শালিকের দেশ'। এমনকি ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে সবুজ পাতা'। সেসব ছিল মাসিক। মান অবশ্য ভালােই ছিল, প্রচার ছিল যৎসামান্য। | ফলে সেগুলাের সঙ্গে দেশের মানুষের তেমন যােগ সাধিত হতে পারেনি। কিন্তু ছােটদের সাপ্তাহিক হিসেবে কিশোর বাংলা মধ্যবিত্ত সংসারের অনুষঙ্গী হয়ে উঠেছিল। এর একটা কারণ হতে পারে এর সুলভ। দৈনিক পত্রিকার হকারের হাতে হাতে সহজেই পেীছে যেতে পেরেছে মানুষের ঘরে ঘরে। অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে এর উদ্দীপনা অনেক আলােড়ন তুলতে পেরেছিল। বয়স-নির্বিশেষে পৱিবারের সবাইকে এ পত্রিকা নিয়ে মাতামাতি করতে আমি দেখেছি।