মানুষ প্রকৃতির সাথে প্রকৃতির বিকাশের মধ্য দিয়ে যুগ-যুগান্তরের কাল প্রবাহের ধর্মকে তার জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রাম ও সাধনায় আত্মমগ্ন। মানুষের এ সংগ্রাম ও সাধনা কেবল তার শক্তির বিকাশে সীমাবদ্ধ ও মর্তকৃত নয়। বরং তার আত্মার অমােঘ উদবােধনে উদ্ভাসিত। অমর্ত্য, ধ্রুব ও শাশ্বত। অনন্তের ঐশ্বর্যে ভাস্বর। মানুষের জীবনের প্রথম কুঁড়ি ও পত্রালি অঙ্কুরিত হওয়ার সাথে সাথে যে চেতনাস্রোত বয়ে যেতে থাকে-সেই ক্ৰম-প্রবহমান অন্তঃসলিলায় আত্মসচেতনা জেগে ওঠার মধ্য দিয়ে মানুষের মানবিক যাত্রার সূচনা হয়। এই শুভযাত্রাই পথ ও গন্তব্যের সীমানা রেখায়িত করে। জীবনের এই রেখায়ন নানা রসায়নে স্বতঃসিক্ত। জীবনের সমস্ত বিকাশ প্রকর্ষ এবং প্রগতির ভেতরেই মানুষের বেঁচে থাকার সার্থকতা। মানুষকে ক্রমাগত হেঁটে যেতে হয় সামনে, সুদূরের পথের প্রান্তরে। পায়ে চলার পথের প্রবহমানতা থেকে মানুষের ফেরার কোনাে পথ নেই। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “যে পারে সে পারে / ফুল ফোটাতে।' কুঁড়ি অঙ্কুরিত হলে, পত্রালি পল্লবিত হলে, পুষ্প প্রস্ফুটিত হলে একটি বৃক্ষ সুশােভিত, পরিপূর্ণ হয়, নিজের প্রাণজ আঙ্গিকে। মানুষও তার জীবনকে একটি বৃক্ষের মতােই বৃন্ত থেকে পত্র-পল্লবে মেলে দিতে পারে দিগন্তের দিকে-আলাের উদ্ভাসে। যে-মানুষ প্রকৃতির মধ্য দিয়ে প্রকৃতির মতাে বেড়ে ওঠে, প্রকৃতির প্রাণজ সম্ভাবনাও প্রতিনিয়ত তার ভেতরে অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে থাকে। প্রকৃতির প্রবাহ ও প্রাণচাঞ্চল্য তাকে নাব্য ও স্রোতােময় করে তােলে। প্রকৃতির প্রাণধর্ম মানব প্রকৃতির ধর্মে রূপান্তরিত হয়। নিঃস্রোতা জীবনকে খরস্রোতা করে। সমুদ্রের শব্দ গাহনে হয় সুন্নাত, প্লাবিত। Sophocles বলেছেন, 'The world is full of rmarvels and the greatest marvel is man' এ পৃথিবী তাে বিস্ময় নিচয়ের আকর আর মানুষই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ বিস্ময়।