প্রসঙ্গ : যব খেত জাগে আমি কৃষক না—হলেও কৃষকদের মধ্যে থাকার সুযোগ আমার জীবনে অনেক ঘটেছে। শৈশব আর কৈশোরটা কৃষকদের মধ্যেই কেটেছে আমার। তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে যুক্ত নানান কাজ, যেমন হাল—চালানো, জমি নিড়ানো, ধান বোনা, ফসল তোলাÑএসব তাদের কাছ থেকেই জেনেছি। খেতে—খামারে কাজ করা মানুষদের ভালোবাসতে ভারতীয় কৃষকরাই শিখিয়েছে আমাকে। প্রকৃতিকে ভালোবাসা, স্বতন্ত্র পরিবেশে থাকা এবং সেই পরিবেশে শ্বাস নেওয়ার যে—আকাঙ্ক্ষা আমার অধিকাংশ গল্পে আপনারা দেখেছেন, তা আমি এই কৃষকদের কাছ থেকেই পেয়েছি। তাদের সঙ্গে থাকার সুবাদে তাদের ওপর যে—সব অত্যাচার চলে তা নিজের চোখে দেখেছি। বর্তমান জীবনব্যবস্থা পুরনো জীবনব্যবস্থার সঙ্গে একত্রিত হয়ে পাথরের মতো চেপে বসে আছে তাদের ওপর। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমিই তাদের ওপর এই জোয়াল চাপিয়ে দিয়েছি। কারণ, গ্রামের যারা শাসকশ্রেণী, সেই শাসকশ্রেণীরই সন্তান আমি। আমার মনে হত, এই মুহূর্তে যা—কিছু ঘটে চলেছে, তার জন্যে আমার বাবাই দায়ী। দায়ী আমার বাবার বন্ধুরা আর তাঁদের বন্ধুরা। অন্যদিকে কৃষক আর তাদের ছেলেমেয়েরাই ছিল আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। তাদের বাড়িতে আমার ছিল অবারিত দ্বার। কিন্তু আমাকে থাকতে হত আমার উচ্চবর্গীয় বাবার কাছে। এভাবে কৃষকদের জীবনকে দু’—দিকের দু’টো দরজা দিয়ে দেখতে পেয়েছি আমি। পেয়েছি, কারণ আমি তাদের জীবন দেখতে চেয়েছিলাম। আর দেখতে বাধ্যও হয়েছি।
শোষণের এই ধারা শুরু হয় এক দরজা থেকে, শেষ হয় আর—এক দরজায় গিয়ে। সেই শোষণের ধারার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চোখ মেলে দেখতাম আমি। তখন যে—জিনিসটা আমি বুঝতে পারতাম না তা হচ্ছে নৈতিকতার দু'টি সাম্প্রতিক রূপ। এই দু'টি রূপের একটি সৃষ্টি করেছে অভিজাত বর্গ, অন্যটি কৃষকরা। অভিজাতদের দামি এবং উৎকৃষ্ট জামাকাপড় প্রয়োজন, কৃষকদের এসবের কোনও প্রয়োজন নেই। কারণ ভালো জামাকাপড় পরলে তারা মর্যাদাসম্পন্ন হয়ে উঠবে। আমাদের বাড়ি এবং অন্যান্য অভিজাত বাড়ির প্রত্যেকে দিনে দু—তিনবার ভরপেট খেত, কিন্তু কৃষকরা দিনে দু’—তিনবার খেলে সেটা অন্যায় বলে মনে করা হত। কারণ তাতে তাদের অভ্যেস খারাপ হয়ে যাবে এবং সেবা করার মানসিকতা থাকবে না। কেউ শ্রম দিলে সেই শ্রমের বিনিময়ে তার অবশ্যই মজুরি পাওয়া উচিত, কিন্তু আমরা তাদের বেগার খাটিয়ে নিতাম। আমাদের অভিজাত বর্গের ঘরে মা—বোনের ইজ্জত আছে। তাদের প্রচুর সম্মান করা হয়। আমাদের এলাকার তহসিলদার হিন্দু, কিন্তু হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও সে তার স্ত্রীকে পর্দানশিন করে রেখেছিল। আর কৃষকদের মা—বোন—স্ত্রীদের বেইজ্জত করাটা ছিল নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার।
কৃষণ চন্দর এর যব খেত জাগে এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 188 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Job-khet-jage by Krishon Chandrais now available in boiferry for only 188 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.