দুই নম্বর ওয়ার্ডের অশখ গাছটীর উপরের শাখাটীতে গােধূলির মান আলো চিকচিক্ করিতেছে। অনেকগুলি পাখী একবার এ ডালে একবার ও ডালে যাইতেছে। এক দণ্ডও বিশ্রাম নাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই তো চতুর্দিক অন্ধকারে ঢাকিয়া যাইবে। তাহার পর সারারাত নিঝঝুমের পালা;-তাই বােধহয় শেষ মুহূর্তের এই চঞ্চলতা, এত ডানা ঝটপটানি, এত আনন্দ উৎসব-যতটুকু আনন্দ সময়ের নিকট হইতে ছিনাইয়া লওয়া যায়। সত্যই কি পাখীগুলি এই জন্য সন্ধ্যার সময় এত চঞ্চল হয়? এই সেলে আসিবার আগে, দু নম্বর ওয়ার্ডে যখন ছিলাম, প্রত্যহ সন্ধ্যায় লক-আপের পূর্বে আমরাও সকলে বাহিরের খােলা হাওয়া খানিকটা খাইয়া লইতাম। সত্যিই কি দরকারের জন্য ? না। হয়ত ঘরের মধ্যে বসিয়া আছি। কোন দরকার নাই বাহিরে আসিবার। তথাপি বাহিরে একবার আসা চাই-ই। বেশীর ভাগ রাজবন্দীরই তো এই মনোবৃত্তি দেখিতাম। ওয়ার্ডাররা বিরক্ত হইত, নিজেদের মধ্যে কি সব বলাবলি করিত—ভাবটা এই যে স্বরাজীরা তাহাদের ইচ্ছা করিয়া জ্বালাতন করে। কিন্তু কেহই ওয়ার্ডারদের বিরক্ত করার জন্য এ কাজ করিত না। যতটুকু উপভােগ করিয়া লওয়া যায় তাহা কেহ ছড়িবে কেন?