সাহিত্য ও ইতিহাস একে অন্যের সঙ্গে পরস্পর বিজড়িত। সাহিত্য ও ইতিহাসের মধ্যে রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অনেক কাল আগে থেকে তরুণ প্রজন্মকে তাদের শেকড়ের সঙ্গে পরিচিত করতে ইতিহাসের ঘটনাকে বর্ণনা করা হতাে গল্পের আশ্রয়ে। অন্যদিকে সাহিত্য অনেক সময় ইতিহাসের প্রতিফলন ঘটায়। আমাদের কালের অনেক সাহিত্যকর্ম ইতিহাসের নানা বিষয় দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে। ইতিহাস ও সাহিত্যের মধ্যে পার্থক্যের মূলে রয়েছে এদের লক্ষ্য ও উদ্দেম্য । ইতিহাসের লক্ষ্য ঘটনাকে যতটা সম্ভব যথাযথভাবে বিবৃত করা। অন্যদিকে ঐতিহাসিক বা দৈনন্দিন ঘটনাকে সাহিত্য ব্যাখ্যা করে কল্পনার আশ্রয় নিয়ে। ইতিহাসের লক্ষ্য তথ্যকে তুলে ধরা, আর সাহিত্যের লক্ষ্য শিল্পরূপ সৃষ্টি। একই সঙ্গে তথ্য উপস্থাপন ও বিনােদনমূলক শিল্পরূপ সৃষ্টি - এই দুটো ধারণার মধ্যে মেলবন্ধন ঘটে ঐতিহাসিক উপন্যাসে ও ঐতিহাসিক নাটকে। সাহিত্য ও ইতিহাসের মধ্যে দ্বিতীয় বড় পার্থক্য হচ্ছে ইতিহাসের উপাদান তথ্যউপাত্ত আর সাহিত্যের মূল ভিত্তি কল্পনা। সাহিত্য হচ্ছে মানবমনের বিচিত্র ভাবানুভূতি ও মানবজীবনের নানা ঘটনার ভাষিক শিল্পরূপ। সাহিত্যের রয়েছে নানারকম রূপবৈচিত্র্য। ব্যক্তিগত দিনলিপি থেকে শুরু করে কবিতা, উপন্যাস ও প্রবন্ধ এর আওতায় পড়ে। নানা মাধ্যমে তাকে উপস্থাপন করা চলে। এর মধ্যে পড়ে পত্রপত্রিকা, অনলাইন ম্যাগাজিন, মুদ্রিত বই, বৈদ্যুতিক বই (ই-বুক), মঞ্চনাটক, টিভি ধারাবাহিক, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। কোনাে কাজ সাহিত্যমূল্যসম্পন্ন কিনা তা বিবেচিত হয় তার শৈল্পিক উৎকর্ষ ও গুণগত মানের ওপর। কোনাে রচনা সাহিত্য হিসেবে উৎরে যাবে কিনা তা নির্ভর করে পাঠক ও মূল্যায়নকারীর দৃষ্টিভঙ্গি ও মনােগত মাপকাঠির ওপর। এক্ষেত্রে কখনাে কখনাে মতপার্থক্য ঘটা অস্বাভাবিক নয়। ইতিহাস হচ্ছে মানব সভ্যতার বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য-বিবরণী। অর্থাৎ যুগে যুগে কালে কালে মানুষ নিজেদের সম্পর্কে যে তথ্যবিবরণী লিপিবদ্ধ