ভূমিকা
তখন আমেরিকার ফার্গো শহরে থাকি।জানুয়ারি মাস, হাড় কাঁপানো শীত। থার্মোমিটারে পারা নেমে গেছে শূন্যেরও কুড়ি ডিগ্রি নিচে। সকাল থেকেই তুষারপাত হচ্ছে। দৃশ্য খুবই সুন্দর তবে বাইরে বের দেখার দৃশ্য না। ঘরে বসে জানালা দিয়ে দেখার দৃশ্য।
এমন দুর্যোগের দিনেও বিকেল থেকেই আমার বাসায় অতিথিরা আসতে শুরু করল। নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশী ছাত্র। কারণ আজ আমার বাসায় ইলিশ মাছ রান্না হচ্ছে। ইলিশ মাছ এসেছে বাংলাদেশ থেকে। সিল করা টিনে ইলিশ। যতদূর মনে পড়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরির পাইলট প্রকল্পের জিনিস। যে প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত কাজ করে নি।
কৌটা খুলে দেখা গেল হলূদ রঙের আলূ ভর্তা জাতীয় পর্দাথ। সেই জিনিস তেলে ভাজা হল। সবাই চায়ের চামচের ছ, চামচ করে পেল। সবার মুখ আনন্দে উদ্ভাসিত। যেন অমৃত চাখা হচ্ছ।
খাওয়াদাওয়ার পর রাতভর শুধুই ইলিশের গল্প। পদ্মার ইলিশের স্বাদ বেশি না যমুনার ইলিশের? সুরমা নদীতে যে ইলিশ ধরা পড়ে তার স্বাদ গভীর সমুদ্রের ইলিশের মতো।তার কী কারণ? এই নিয়ে গভেষণামূলক আলোচনা।একজন আবার শুনালেন হার্ডিঞ্জ ব্রিজের স্প্যানে ধাক্কা খাওয়ার ইলিশের গল্প। স্প্যানে ধাক্কা খেয়ে ইলিশ মাছের নাক থেঁথো হয়ে যায়। সেই সব নাম ভাঙা ইলিশই আসল পদ্মার ইলিশ।
এরপর শুরু হল ইলিশ রান্নার গল্প। দেখা গেল সবাই ইলিশ রান্নার কোনো-না-কোনো পদ্ধতি জানে।ভাপে ইলিশ, চটকানো ইলিশ, শুধু লবণ আর কাঁচা মরিচ দিয়ে সিদ্ধ ইলিশ। গভীর রাত পর্যন্ত গল্প চলতেই লাগল।
পঁচিশ বছর আগের আমেরিকার এক দুর্যোগের রাতের সঙ্গে এখনকার অবস্থা মিলানো যাবে না। এখন আমি ঢাকা শহরে বাস করি। ইলিশ মাছ কোনো ব্যাপার না । প্রায় রোজই রান্না হয়। নতুন নতুন পদও হয়। ঐতো সেদিন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত শেফ টমি মিয়া নিজে রান্না করে ইলিশ মাছের একটা পদ খাওয়ালেন-স্মোকবিহীন “স্মোক্ড্ হিলসা।” সাহেবদের পছন্দের খাবার।
স্মোক্ড্ হিলসা খেতে খেতেই শুনলাম অবসর প্রকাশনার সংস্থার আলমগীর রহমান শতাধিক পদের ইলিশ রান্নার একটি বই কম্পোজ করে রেখেছেন। কাউকে দিয়ে ভূমিকা লেখানো যাচ্ছে না বলে বইটি প্রকাশ করা যাচ্ছে না। আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, “ভূমিকা আমি লিখে দেব।”
সাধারনত দেখা যায় লেখদের লেখার ক্ষমতা পুরোপুরি শেষ হবার পর তারা ভূমিকা এবং সমালোচনা জাতীয় রচনা লেখা শুরু করেন। যে আগ্রহে ভূমিকা লিখতে রাজি হয়েছি তাতে মনে হয় আমার ঘন্টা বেজে গেছে। আচ্ছা বাজুক ঘন্টা-আমি ভূমিকাতেই থাকি।
শুরুগম্ভীর ভূমিকা লেখার বিশেষ কায়দা আছে। প্রথমেই নামের উৎপত্তিতে যেতে হয়। ইলিশ নামটা কীভাবে এল, কেন এল। এই প্রজাতির মাছ পৃথিবীর কোন কোন অঞ্চলে পাওয়া যায়। যেসব মাছ সমুদ্রে থাকে এবং ডিম পাড়ার জন্যে মিঠা পানিতে আসে তাদের শ্রেনীবিন্যাস। সেই বিন্যাসে ইলিশের স্থান কোথায় সে বিষয়ে আলোচনা। এরপর আসে ইলিশের ইলিশের ইতিহাস।বাংলা আদি সাহিত্যে(চর্যাপদে) ইলিশ মাছের উল্লেখ কেন নেই সে বিষয়ে গবেষণামূলক সুচিন্তিত মতামত। মোগল রসুইখানায় ইলিশের অনুপস্থিতিরি কারণ ব্যাখ্যা........ আমি এইসব কিছু জানি না। আমি শুধু জানি বাংলা বর্ণমালার শিশু শিক্ষা বইয়ে ‘অ’-তে হয় অজগর।‘আ’-তে আম..... ‘ই’-তে ইলিশ.....এই তথ্যই কি ইলিশ রান্না বিষয়ক একটি বইয়ের ভূমিকার জন্যে যথেষ্ট নয়?
হুমায়ূন আহমেদ
দখিন হাওয়া, ধানমন্ডি
সূচীপত্র
ইলিশের ডিম
*ইলিশ মাছের ডিম জমানো
*ইলিশ মাছের ডিমের ঝুরা ১
*ইলিশ মাছের ডিমের ঝুরা ২
*ইলিশ ডিমের সরিষা বাটা ঝাল
*ইলিশ মাছের ডিমের ঝোল
কারি-কোর্মা-ঝোল-ঝাল-স্টু
*ইলিশ কারি
*ইলিশ মাছের কোর্মা ১
*ইলিশ মাছের কোর্মা ২
*ইলিশ মাছের তেল-ঝোল
*ইলিশ মাঝের ঝোল ১
*ইলিশ মাঝের ঝোল ২
*ইলিশ মাছের সরিষা বাটা ঝোল
*ইলিশ স্টু
*ইলিশের পাঁচমিশেলি বেসন-ঝোল
*ভাজা ইলিশের ঝোল
*কাঁচা ইলিশের ঝোল
*কাঁচা ইলিশের হলুদ-ঝোল
*ডাল ইলিশ
গ্রিল্ড-বেক্ড-রোস্টেড-স্মোকড
*ইলিশ বেক্ড্ ১
*ইলিশ বেক্ড্ ২
*ইলিশ মাছ ঝলসানো
*ইলিশ মাছের রোস্ট/বেক্ড্ ইলিম
*সরিষা পেস্টে ইলিম
*ধুঁয়াদার ইলিশ
*স্মোক্ড্ হিলসা
*ইলিম কাবাব
দই ও নারকেল ইলিশ
*ইলিশ মাছের মালাইকারি
*ইলিশের মৌলি
*দই ইলিশ ১
*দুই ইলিশ ২
*দই ইলিশের দম
*নারকেল ইলিশ
*নারকেল দুধে ইলিশ
নানারকম ঘন্টা ও নানাভাবে ইলিশের মাথা ও লেজ
*ইলিশের মাছের মাথা ও লেজের কষা
*ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচুশাকের ঘন্ট
*লাউশাক দিয়ে ইলিশ ঘন্ট
*ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কলমি শাকের ঘন্ট
*ইলিশ মাছের মুড়িঘন্ট
*ইলিশের মাথা দিয়ে কচুমাক
*কচুশাক দিয়ে ইলিশ মাছের মাথার ঘন্ট
*চালকুমড়া দিয়ে ইলিশ মাছের মাথা
নোনা ইলিশ
*নোনা ইলিশ ভুনা
*বার মাসেই নোনা ইলিশ
*নোনা ইলিশের ডিম ভাজা
*নোনা ইলিশের ভর্তা
পোলাও-খিচুড়ি-বিরিয়ানিতে ইতিশ
*ইলিশ পাতুড়িতে ঝাল-খিচুড়ি
*ইলিশ পোলাও ১
*ইলিশ পোলাও ২
*ইশিল মাছের কমলা বিরিয়ানি
*ইলিশ মাছের বিরিয়ানি
*ভুনাখিচুড়িতে ইলিশ
*আখনি ইলিশ খিচুড়ি
ফল ও শাকসবজি দিয়ে ইলিশ
*আনারসি ইলিশ ১
*আনারসি ইলিশ ২
*আনারসি ইলিশ ৩
*আমের আচার দিয়ে ইলিশ মাছ
*লাউপাতা দিয়ে ইলিশ ভর্তা
*ইলিশামৃত
*ইলিশের চালকুলড়া
*ইলিশের চৌ চৌ
*কমলা ইলিশ
*পুঁইশাক দিয়ে ইলিশ মাছের মাথা ও লেজের ঘন্ট
*বেগুন ইলিশ
*লেবুপাতায় করমচা ইলিশ
*শসা দিয়ে ইলিশ মাছ
*শিমের বিচি দিয়ে ইলিম মাছ
*কাঁকরোল দিয়ে ইলিশ
*পটল ও সরিষা দিয়ে ইলিশ
*পটল ও আলূ দিয়ে ইলিশ
*ডাঁটা ও আলু দিয়ে ইলিশ মাছ
*আলু ও ঝিঙা দিয়ে ইলিশ মাছ
*কচু দিয়ে ইলিশ মাছ
*কাঁচকলা দিয়ে ইলিশের ঝোল
*ফুলকপি ও আলূ দিয়ে ইলিশ
ফ্রই ও ভাজা ইলিশ
*ইলিশ মাছের তেলে ইলিশ মাছ ভাজা
*ইলিশ ফ্রাই
*ইলিশ মাছের ফ্রাই
*ইলিশের দো-পেঁয়াজি
ভাপা ইলিশ
*ভাপে সরিষা ইশিল
*ইলিশ ভাপি
*ভাতের বাপে ইলিশ পাতুড়ি
*ভাত দিয়ে ভাপা ইলিশ
*ভাপা ইলিশ
*ভাপারি
হরেকরকম ইলিশ
*ইলিশ দমপোক্ত
*ইলিশ মাখানি
*ইলিশ পোড়া
*ইলিশ মাছ মশলাদার
*ইলিশ মাছের চাটনি
*ইলিশ চুমরা
*ইলিশ মাছের মাথা ও লেজের ঝুরি
*ইলিশ মাছের দোলন
*ইলিশ মাছের মোলু
*ইলিশের রসা
*চানেলিশ
*জিরা ইলিশ
*টক ইলিশ
*তেল ইলিশ
*পোস্ত ইলিশ
*ইলিশ মাছের পাতুড়ি
*সরিষা ইলিশ
*ইলিশ মাছের টিকিয়া কাবাব
*ইলিশ মাছের ঝুরি
*সরিয়ার সস দিয়ে স্টিম্ড্ ইলিশ
*কাসুন্দি ইলিশ
*নিঘন্ট
অবসর সম্পাদনা বিভাগ এর ইলিশ রান্না এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 378.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Ilish Ranna by Absor Sompadona Bivagis now available in boiferry for only 378.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.