হুমায়ূন আহমেদ খুবই মৌলিক প্রতিভা এবং বিস্ময়করভাবে তাঁর প্রতিভাটা সহজাত। যদিও লেখালেখির শুরুতেই তাঁর প্রস্তুতি ছিল, এটা আমরা তাঁর ছেলেবেলার গল্পতে খুঁজে পাইÑ যেসব তিনি নিজে লিখেছেন বা বলেছেন। এবং মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব যেসব স্মৃতিকথা লিখেছেন, সেসব পড়লে বোঝা যায়, তাঁদের পারিবারিক পরিবেশটাই ছিল সাহিত্যের অনুক‚ল। ছোটবেলায় তাঁরা দেয়াল পত্রিকা বের করতেন, সাহিত্যচর্চা করতেন; পারিবারিকভাবেই এই ঐতিহ্যটা ছিল। তাঁর পড়াশোনা ব্যাপক। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন আমেরিকায় ছিলেন, সেখানকার বইপুস্তক পড়েছেন। সবটা মিলিয়ে, ভেতরে ভেতরে নিশ্চয়ই তাঁর প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু তার পরও যখন তাঁর গল্প-উপন্যাস এবং অন্যান্য লেখা পড়ি, বিস্ময়কর মনে হয়Ñ যখন একটু বিশ্লেষণধর্মী চোখ দিয়ে দেখিÑ এত পরিমিত কীভাবে হয়? তাঁর সেন্স অব হিউমার খুবই ভালো। তাঁর লেখায় রসবোধের কোনো তুলনা হয় না। প্রতিটি বাক্যে এর স্বাক্ষর পাই এবং বই পড়তে গিয়ে, বই থামিয়ে হেসে উঠতে হয়। এটাকে আমি একটা বড় প্রতিভার লক্ষণ মনে করি যে, তিনি যে মাধ্যমেরই হোন না কেন, বিজ্ঞানীও হতে পারেন; বড় প্রতিভার সাধারণত সেন্স অব হিউমার খুব ভালো হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বড় লেখকের প্রধান গুণ হচ্ছে সেন্স অব হিউমার। সত্যজিৎ রায়কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনার চলচ্চিত্রগুলো বিদেশিরা এত পছন্দ করে কেন? তিনি জবাব দিয়েছিলেন, সম্ভবত আমার সেন্স অব হিউমারের জন্য। তেমনিভাবে আমরা যদি আমাদের মহৎ সাহিত্যিকদের দেখিÑ বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরÑ এঁদের একটা বড় লক্ষণ তাঁদের সেন্স অব হিউমার অত্যন্ত ভালো। শরৎচন্দ্র পড়লে মনটা আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। কৌতুক এবং হাস্যরস প্রবল। বঙ্কিমচন্দ্রেরও এটা আছে। আর রবীন্দ্রনাথে তো গভীরভাবে, তীব্রভাবে আছে। সেই গুণটা হুমায়ূন আহমেদের মধ্যে খুব স্বাভাবিক আর সμিয়। তাঁর আরেকটা গুণ হলো, খুব ছোটখাটো বিষয়কে ডিটেইল করা, একটা সামান্য জিনিসকে বিশদ করে লেখা। এবং সেটার বর্ণনাটা এমন হয়, বর্ণনাটাই ভালোলাগে। আবার তিনি অল্পপ্রয়াসেই চরিত্র তৈরি করতে পারেন। চরিত্রগুলোর হাসি-কানড়বার মধ্য দিয়ে আমাদের হৃদয় স্পর্শ করতে পারেন। তাঁর গল্প শেষ হওয়ার পরে কিছুক্ষণ ঘোরগ্রস্ত অবস্থায় থাকতে হয়। উপন্যাস পড়লে বুকের ভেতর কেমন হাহাকার লাগে