Loading...

ফেরদৌসীর শাহনামা-১ম খন্ড (হার্ডকভার)

লেখক: ফেরদৌসী

অনুবাদক: মনিরউদ্দীন ইউসুফ

স্টক:

৪৫০.০০ ৪০৫.০০

একসাথে কেনেন

ইরানের জাতীয় মহাকাব্য – তাঁদের ভাষায়, শাহনামে আমরা বলি শাহনামা। নাম থেকেই বােঝা যায় এটি রাজাবাদশাহদের কাহিনি। এই সৌধপ্রতিম মহাকাব্যটি রচনা করেন ইরানের মহাকবি ফেরদৌসী, আনুমানিক ৯৭৭ থেকে ১০১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। কোনাে কোনাে গবেষক অবশ্য আরও সুস্পষ্ট দিন-তারিখ নির্ধারণ করে বলেছেন, ফেরদৌসী এই অবিস্মরণীয় মহাকাব্য রচনা শুরু করেন ৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে এবং শেষ করেন ৮ই মার্চ ১০১০ খ্রিস্টাব্দে। শাহনামা ষাট হাজার পঙক্তির বিশাল ও অমূল্য রত্নপ্রতিম গ্রন্থ। ২০১০ সালে এ গ্রন্থের সহস্রবর্ষ পূর্ণ হলেও সারাবিশ্বে এর আবেদন এখনাে একটুও কমেনি। শাহনামাকে বলা যায়, মহৎ কবিতা এবং জাতীয় ইতিহাস পুনর্নির্মাণচর্চার একটি তুলনারহিত সৃজন। কারণ, এতে ইরানের প্রাচীন ইতিহাসের একটি অনুপুঙ্খ কাব্যিক পুনর্নির্মাণই ছিল কবির অভীষ্ট লক্ষ্য। এ ধরনের কাজে পূর্বসূরিদের প্রয়াসকে গ্রহণ-বর্জনের মাধ্যমে নবরূপ দিতে হয়।
ফেরদৌসী ইতিহাসের দিকে চোখ রেখে সৃজনপটু দক্ষতায় সে কাজ সম্পন্ন করেছেন। এই কাব্যগ্রন্থের একটি অংশ ফেরদৌসীর স্বকীয় সৃজন-উৎস থেকে উদ্ভাবিত। অন্যদিকে, সমকালীন গদ্য লেখকদের, বিশেষ করে আবু মনসুর দাকিকির (Abu Mansur Daqiqi) রচনাকে তিনি বেছে নেন বীজসূত্র হিসাবে, বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করেন। শাহনামার ইতিহাস পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে শুরু করে সপ্তম শতাব্দীতে পারস্যে ইসলামের বিজয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত। শাহনামা প্রধানত ইরানের পৌরাণিক, বীরত্বব্যঞ্জক এবং ঐতিহাসিক যুগসমূহের কীর্তিগাথাকে সমন্বিত করে বিশাল প্রেক্ষাপটে মানবিক আবেদন এবং শাশ্বত মূল্যচেতনাঋদ্ধ মহৎ সাহিত্যিক মাস্টার পিস। শাহনামা ইরানের জাতিতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয় এবং ইতিহাসের কালক্রমিক অভিযাত্রায় তুর্কমুঘলসহ সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জাতি-পরিচয়কেও ধারণ করেছে। এ বিবেচনায় এটি বহুসংস্কৃতিকে আত্মস্থ করা এক বিশ্ব-মহাকাব্যেরই অন্তর্ভুক্ত। শাহনামার কাহিনিসূত্র শুরু হয়েছে মধ্যযুগের উপান্তকালের ফারসি বা পাহলভি ভাষায় রচিত x'at aynam ak (Book of Kings) থেকে। এটি মূলত পারস্যের কিংবদন্তিকালের কাহিনি থেকে শুরু হয়ে দ্বিতীয় Khosrau'র (590-628) রাজত্বকাল পর্যন্ত বিস্তৃত।
ফেরদৌসী এই কালের সঙ্গে মধ্যযুগের সপ্তম শতাব্দী অর্থাৎ আরবের ইরান বিজয় পর্যন্ত যুক্ত করে দিয়েছেন। ফেরদৌসী সমকালীন গদ্য লেখকদের বিশেষ করে আবু মনসুর দাকিকির রচনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তবে দাকিকি মাত্র হাজার পঙক্তি লেখার পরেই মৃত্যুবরণ করেন। ফেরদৌসী দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে এই বিপুল আয়তনের কাব্যে যে অসামান্য কাব্যকীর্তি নির্মাণ করেন। তা যেকোনাে সুপণ্ডিত পাঠককেও অভিভূত করে। দাকিকি Zoroaster-এর উত্থান পর্যন্ত ঘটনাপ্রবাহ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ফেরদৌসী দাকিকির কাছে ঋণ স্বীকার করেন। নিজ রচনায় অন্তর্ভুক্ত করেন ৬২টি আখ্যান, ৯৯০টি অধ্যায় এবং ৬০০০০ পঙক্তি। এ এক বিস্ময়কর শক্তির পরিচায়ক। প্রাচীন ইতিহাসনির্ভর মহাকাব্যে মৌখিক এবং লিখিত সাহিত্যের যে পরস্পর প্রবিষ্ট সাহিত্যশৈলী লক্ষ করা যায়। শাহনামায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শাহনামা প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশধারা সংক্রান্ত এক অতুলনীয় আকর গ্রন্থ। প্রাক-ইতিহাস, ইরান ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলের সভ্যতা বিকাশের নানা উপাদান। যেমন- আগুনের ব্যবহার, রান্নাবান্না, আইনকানুন ও সামাজিক বিধিবিধানসহ বহু বিষয় এতে যুক্ত হয়েছে।
এ গ্রন্থে মােটামুটিভাবে কালক্ৰমিক ইতিহাস এবং মানব সমাজের ইতিহাসের ধারায় পথচলার নানা মূল্যবান বিবরণ পাওয়া যায়। এই গ্রন্থের কোনাে কোনাে চরিত্রের জীবক্তাল হাজার বছরের সময়কালে পরিব্যাপ্ত। এঁদের অনেকেই আবার একেবারেই সাধারণ মানুষ। ইতিহাস এবং কিংবদন্তির পরস্পর প্রবিষ্টতা এর ঘটনাপ্রবাহকে কৌতূহলােদ্দীপক ও আকর্ষণীয় করেছে এবং অনন্যতা দিয়েছে। ফেরদৌসীর চরিত্রসমূহ জটিল; তবে প্রাণবন্ত। কোনাে চরিত্রই আদিকল্প (Archetypal) বা পুতুলপ্রতিম নয়। এর শ্রেষ্ঠ এবং সর্বগুণে গুণান্বিত চরিত্রেও বিচ্যুতি আছে, আবার কুখ্যাত চরিত্রেও আছে মানবতার ছোঁয়া। এখানেই এই বইয়ের বিশ্বমানবিক আবেদন। তুর্কি ও আরবদের কাছে পারস্য সাম্রাজ্যের পতনে ফেরদৌসী বেদনার্ত হয়েছেন। তাঁর সেই গভীর বেদনা থেকেই পারস্যের স্বর্ণযুগের ইতিহাসকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌছে দিয়ে ফেরদৌসী একটি উন্নত পৃথিবী নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। ফেরদৌসী ইতিহাসনিষ্ঠ কাব্যনির্মাতা। পাঠকেরা তাঁর বইয়ে ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের বর্ণনা উদ্দেশ্যহীনভাবে পড়ে যাবেন এমনটি তিনি চাননি। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর পাঠকেরা তাঁর বইয়ের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ জটিল ও বহুমুখী ধারাপ্রবাহ সতর্কতার সঙ্গে অনুধাবন করবেন এবং রাজা-রাজবংশ-ব্যক্তি বা কোনাে রাষ্ট্রের কেন পতন ঘটে তা-ও তাঁর এই মহৎ গ্রন্থ থেকে বুঝে নেবেন এবং এর মধ্য দিয়ে বিশ্বসভ্যতার উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে একটি নতুন পৃথিবী নির্মাণে প্রয়াসী হবেন।
তিনি যে জায়গাটায় জোর দিয়েছিলেন তা হলাে এই পৃথিবী চলমান এবং এই পৃথিবীতে মানুষ ইতিহাসের পথে যুগযুগান্তের পথপরিক্রমায় আসে আর যায়। সেজন্যই তাদের বিজ্ঞতার সঙ্গে নিষ্ঠুরতা, মিথ্যাচার এবং সমস্ত অশুভ কল্পনা বর্জন করে সুবিচার, সত্য, ন্যায়, শৃঙ্খলা এবং অন্যান্য গুণ অর্জন করে বিশ্বসভ্যতায় তার ছাপ রেখে যাবে। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে শাহনামার একটি পাণ্ডিত্যপূর্ণ সংকলন প্রকাশিত হয় ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে। এটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন টি. ম্যাকান। সতেরটি পাণ্ডুলিপির তুলনামূলক যৌগিক সম্পাদনার মাধ্যমে এটি প্রস্তুত করা হয়। ফ্রান্স, রাশিয়া ইত্যাদি অঞ্চলে শাহনামার বেশ কটি গুরুত্বপূর্ণ সংকলন প্রকাশিত হলেও ভারতবর্ষের অন্য কোনাে অঞ্চলে এর পূর্ণাঙ্গ, সুসম্পাদিত সংকলনের খবর আমরা পাইনি। তবে মুঘল সম্রাটরা এ বইটি গুরুত্বের সঙ্গে পড়তেন তার প্রমাণ আছে বাবর, আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান প্রমুখের শাহনামার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে। প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর শাহনামা থেকে কিছু পঙক্তি উদ্ধৃত করেছিলেন। বাংলার নবাব আলীবর্দী খাঁও শাহনামা পাঠ করে উদ্দীপ্ত হয়েছিলেন এমন সংবাদ জানা যায়।
Ferdowsir Shahnama 1st Part,Ferdowsir Shahnama 1st Part in boiferry,Ferdowsir Shahnama 1st Part buy online,Ferdowsir Shahnama 1st Part by Ferdowsi,ফেরদৌসীর শাহনামা-১ম,ফেরদৌসীর শাহনামা-১ম বইফেরীতে,ফেরদৌসীর শাহনামা-১ম অনলাইনে কিনুন,ফেরদৌসী এর ফেরদৌসীর শাহনামা-১ম,984-07-5026-7,Ferdowsir Shahnama 1st Part Ebook,Ferdowsir Shahnama 1st Part Ebook in BD,Ferdowsir Shahnama 1st Part Ebook in Dhaka,Ferdowsir Shahnama 1st Part Ebook in Bangladesh,Ferdowsir Shahnama 1st Part Ebook in boiferry,ফেরদৌসীর শাহনামা-১ম ইবুক,ফেরদৌসীর শাহনামা-১ম ইবুক বিডি,ফেরদৌসীর শাহনামা-১ম ইবুক ঢাকায়,ফেরদৌসীর শাহনামা-১ম ইবুক বাংলাদেশে
ফেরদৌসী এর ফেরদৌসীর শাহনামা-১ম এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 427.50 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Ferdowsir Shahnama 1st Part by Ferdowsiis now available in boiferry for only 427.50 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.
ধরন হার্ডকভার | ৬৮২ পাতা
প্রথম প্রকাশ 1991-02-01
প্রকাশনী বাংলা একাডেমি
ISBN: 984-07-5026-7
ভাষা বাংলা

ক্রেতার পর্যালোচনা

ফেরদৌসী
লেখকের জীবনী
ফেরদৌসী (Ferdowsi)

তাঁর নাম মোহাম্মদ আবুল কাশেম। তিনি ইরানের তুস নগরের ‘বাঝ’ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তুস নগরে এক সুন্দর বাগান ছিল। সেখানে কত রকমের গোলাপ ফুটতো তার কোন লেখা জোখা নেই। বাগানটি ছিল আবার সেদেশের রাজার। এই বাগানের দেখাশুনা করতেন মোহাম্মদ ইসহাক ইবন শরফ শাহ। তাঁরই পুত্র ছিলেন আবুল কাশেম। ছোট বেলায় আবুল কাশেম পিতার সাথে বাগানে ঘুরে বেড়াতেন। সুন্দর সুন্দর ফুল দেখতে যেমন ভাল লঅগে আবার সেগুলোর কি মনোমুগ্ধকর সুগন্ধী। তিনি প্রাণভরে ফুলের সুবাস নিতেন। গোলাপের বাগানে বেড়াতে বেরিয়ে আবুল কাশেম মুগ্ধ হয়ে যেতেন। উপরে চারপাশে নীল আকাশ। সবুজ গাছপালা। আর তার মাঝে ফুটে আছে ছোট বড় হরেক রকম গোলাপ। বাল্যকাল তিনি পিতার কাছে পড়ালেখা করেন। পরে তিনি স্থানীয় একজন পন্ডিতের কাছে জ্ঞান অর্জন করেন। পিতা রাজার বাগানের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তাই তার কোনো অভাব ছিল না রাজার কাছ থেকে তিনি ‘তনখা’ হিসেবে যা কিছু পেতেন তাতে ভালভাবেই তার সংসার চলে যেত। ছোট বেলায় বাগানে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে তার মন কবিতা লেখার কথা মনে আসে। বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে যায় একটা ছোট নদী। কোথা থেকে এত পানি আসে আবার কোথায় চলে যায়। এগুলেঅ তার মনে রেখাপাত করে। নদীর ধারে কত পাথর পড়ে আছে। তিনি তারই একটার উপর বসেন আর প্রাকৃতিক এসব সৌন্দর্য্য উপভোগ করেন। এখানে বসে আবুল কাশেম কবিতা লেখেন। পিতার অবস্থা ভাল ছিল। তিনি ইন্তেকালের সময় অনেক জমি জায়গা রেখে যান। কাজেই আবুল কাশেমের জীবন কাটানোর মত প্রয়োজনীয় অর্থের কোন অভাব ছিল না। তিনি প্রতি বছর এসব জায়গা জমি থেকে প্রচুর আয় করতেন। কিন্তু ধন সম্পদের দিকে তার কোন নজর ছিল না। কোন রকমে খেয়ে পরে চলাটাই ছিল তার লক্ষ্য। তাঁর সাধনা ছিল ভাল ভাল কবিতা রচনার মাধ্যমে মানুষকে ভাল এবং কল্যাণের দিকে উদ্বুদ্ধু করা। সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করাই ছিল তার জীবনের মিশন। পিতা-মাতা শখ করে অল্প বয়সেই তার বিয়ে দেন। তার ঘরে মাত্র এক মেয়ে। মেয়েটিকে তিনি নিজের কাছে রেখে লেখাপড়া শেখান। সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্টের উপশম করতে চাইতেন। এসব খবর সে দেশের রাজার কানে গেল। তখনকার দিনে রাজার গোয়েন্দা বিভাগের লোকেরা এসব খবর রাখত। তারা কোন লোককে জনপ্রিয় হতে দেখলে রাজাকে জানিয়ে দিত। এর ফলে রাজা সেই লোককে সহ্য করতে পারতেন না। হয় তাকে সেদেশ ছেড়ে চলে যেতে হতে নয়তো রাজার সাথে মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হত। আবুল কাশেমকোন ঝক্কি ঝামেলা পছন্দ করতেন না। তিনি ভুবুক কবি। রাজা হওয়া তার লক্ষ্য নয়। বরং কবিতা লেখা আর দুঃখী মানুষের দুঃখ দূর করাই ছিল তার একমাত্র কাজ। রাজার কাছে তার বিরুদ্ধে অনেক রকম মিথ্যা অভিযোগ আনা হল। ফলে রাজা তাকে গ্রেফতার করার পরিকল্পনা করেন। আবুল কাশেম সে খবর পেলেন। রাজ দরবারেও অনেক সভাসদ তাকে ভালবাসতেন। তারা সময় মত তাকে রাজার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দিলেন। কাজেই আবুল কাশেম মেয়েকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন নিরাপদ আশ্রয়েল সন্ধানে। তিনি গজনীতে গেলেন। সেখানকার সুলতান খুব ভাল লোক। তার নাম মাহমুদ। দেশ বিদেশের জ্ঞানী গুণী লোকজনকে মাহমুদ খুব সম্মান ও শ্রদ্ধা করতেন। জ্ঞানী ও পন্ডিত লোকেরাও মাহমুদের কথা শুনে তার কাছে ছুটে আসতেন। রাজদরবারে বসতো কবিতা আবৃত্তির আসর। আবুল কাশেম কবিতা রচনা করতেন। কাজেই তিনি ভাবলেন সুলতানের সাথে দেখা করতে পারলে তিনি যথাযথ কদর পাবেন। এজন্যেই তিনি গজনীতে আসেন কিন্তু সুলতানের সাথে দেখা করাতো আর চাট্টিখানি কথা নয়। মনে চাইলেই তো আর তার সাথে দেখা করা যায় না। এজন্য অনেক নিয়ম-কানুন রয়েছে। অনেক রকম কাঠ খড় পুড়াতে হয়। সুলাতনের দরবারে যারা কবি রয়েছেন। তারা সহজেই অন্য কবিকে তাদের মাঝে স্থান দিতে চান না। কাজেই রাজদরবারে প্রবেশের সুযোগ আর মেলে না। আবুল কাশেম সুলতানের দরবারে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। কিন্তু সৎ লোকের সহায় থাকেন আল্লাহ। আল্লাহর ই্ছা সুলতানের উজির মোহেক বাহাদুর তাঁর প্রতি সদয় হলেন। মোহেই আবুল কাশেমকে রাজদরবারে নিয়ে গেলেন। সুলতানের সাথে আবুল কাশেমের প্রথম পরিচয় হল কবিতা পাঠের মাধ্যমে। সুলতান আবুল কাশেমের কবিতা শুনে মুগ্ধ হলেন। কবিতার ভাব, চিত্র কল্প, শব্দ চয়ন এত উচ্চস্তরের যে সুলতান বুঝলেন ইনি অনেক বড় মাপের কবি। তিনি এ রকম একজন কবির জন্যই এতকাল অপেক্ষায় ছিলেন। তার বহুকালের প্রত্যাশা যেন আজ পূরণ হতে চলেছে। মাহমুদ মহাখুশী। তিনি নিজেও কবি ছিলেন। আবুল কাশেমের কবিতা শুনে তিনি তাকে ‘ফেরদৌসি’ উপাধি দিলেন। বেহেশতের মধ্যে সবচেয়ে সেরা হচ্ছে এই জান্নাতুল ফেরদৌস। এই কবিও সকল কবর সেরা। তাই তাকে যথার্থই ফেরদৌসি বলা যায়। সুলতান আবেগ ভরে আবুল কাশেমকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন। আয় ফেরদৌসি তু দরবার মে ফেরদৌস কারদী। এর মানে হল, হে ফেরদৌসি তুমি সত্যিই আমার রাজদরবারকে সেরা বেহেশতে পরিণত করে দিয়েছো। তখন থেকেই আবুল কাশেম ফেরদৌসি হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত হলেন। আবুল কাশেম নাম চাপা পড়ে গেল ফেরদৌসি নামের সামনে। সুলতান কবির জন্য আলাদা থাকার স্থান দিলেন। থাকা খাওয়ার ভাল ব্যবস্থা করে দিলেন। আর তাকেই রাজ কবি মনোনীত করলেন। আস্তে আস্তে ফেরদৌসীর সাথে সুলতানের ঘনিষ্টতা হল। দু’জনে প্রিয় বন্ধু হলে গেলেন। কবির জ্ঞান বুদ্ধিতে সুলতান খুবই মুগ্ধ হন। কিন্তু তাদের এই বন্ধুত্ব স্থায়ী হলনা। ফেরদৌসীর প্রতি সুলতানের এত ভালবাসা ও তার প্রতি এত সম্মান দেখে অন্যান্য কবি ও উজির নাজিররা ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন। তারা কবিকে রাজদরবার থেকে বের করে দেবার জন্য গভীর য়ড়যন্ত্রে লিপ্ত হলেন। সুলতানের প্রধানমন্ত্রী খাজা ময়মন্দিও কবির বিরুদ্ধে গেলেন। তিনি গোপনে তার ক্ষতি করার চেষ্টা করতে লাগলেন। এদিকে সুলতান মাহমুদ কবির শাহনামা মহাকাব্য রচনা করার অনুরোধ জানান। এর প্রতিটি শ্লোকের জন্য একটি করে স্বর্ণমুদ্রা দেবার ওয়াদা করেন। ফেরদৌসী ৩০ বছর পরিশ্রম করে শাহনামা রচনা করেন। এতে ৬০ হাজার শ্লোক আছে এবং এটি ৭টি বৃহৎ খন্ডে বিভক্ত। এই কাব্যের কোথাও কোন খারাপ কথা নেই, নেই কোন বাজে উপমা। সুলতান শাহনামার জন্য কবিকে ৬০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা দিতে চাইলেন। কিন্তু রাজদরবারের হিংসুটে কয়েকজন উজির সুলতানকে বললেন, এজন্যে কবিকে ৬০ হাজার রৌপ্যমুদ্রা দিলেই যথেষ্ট হবে। সুলতান তার সভাসদদের ভেতরের হিঙসা বুঝতে পারেননি। তারা যে ফেরদৌসীর প্রতি শত্রুতা করে তার ক্ষতি করতে চাইছে এটা তিনি ধরতে পারেননি। তাই তাদের পরামর্শ মত কবিকে ৬০ হাজার রৌপ্য মুদ্রা দেন। ফেরদৌসী সুলতানের ওয়াদাকৃত ৬০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা না পেয়ে রাগে দুঃখে ও ক্ষোভে কি করবেন ভেবে পেলেন না। তিনি অর্থ বা ধন দৌলতের লোভে একাজ করেননি। বরং এই অর্থ দিয়ে দীন দুঃখী মানুষের কল্যাণ করবেন এটাই ছিল তার আকাংখা। তিনি এটাকে তার জন্য অনেক অপমান জনক মনে করলেন। সুলতান তার ওয়াদা কবিকে ফেরৎ দেননি। বরং তিনি সুলতানের পাঠানো পত্রের এক কোনে আলিফ লাম ও মীম এ তিনটি অক্ষর লিখে দেন। সুলতান মাহমুদ এ তিনটি অক্ষরের অর্থ বুঝতে পারলেন না। তার রাজদরবারের কেউই এর মর্ম উদ্ধার করতে পারলো না। তখন তিনি রাজদরবারে ফেরদৌসীর অভাব অনুভব করলেন। তিনি বুঝতে পারলেন, আজ যদি কবি ফেরদৌসী দরবারে থাকতেন তাহলে এর অর্থ তিনি অনায়াসে বলে দিতে পারতেন। অর্থ বোঝার জন্য রাজদরবারের বাইরে যেতে হতনা। সুলতান মাহমুদ এসময় কুহেস্তানের রাজা নসরুদ্দিনের কাছ থেকে একটি পত্র পেলেন। পত্রে কবি ফেরদৌসীর খুবই প্রশংসা করা হয়েছে। সুলতান পত্র পড়ে নিজের ভুল বুঝতে পারেন। তিনি মর্মে মর্মে অনুভব করলেন, কবি তার ওয়াদামত স্বর্ণমুদ্রা না পেয়ে দুঃখ পেয়েছেন। রাজসভার অন্যান্য কবি এবং উজির নাজির ও কবির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল একথা বুঝতেও সুলতানের বাকী থাকল না। তিনি প্রধানমন্ত্রী খাজা ময়মন্দিকে রাজপদ থেকে বিতাড়িত করেন। আর কবিকে ফিরিয়ে আনার সংকল্প করেন। তিনি কবির প্রাপ্য সমুদয় স্বর্ণমুদ্রাসহ কবির জন্মভূমি তুস নগরীতে কবির বাড়ীতে দূত পাঠান। কিন্তু তখন দেরী হয়ে গেছে। অভিমানি কবি ফেরদৌসীর তখন ইন্তেকাল হয়েছে। তাঁর লাশ দাফনের জন্য লোকজন কাঁধে করে যখন তাকে তার বাড়ী থেকে বের করছিলেন সে সময় সুলতান মাহমুদের প্রেরিত দূত ৬০ হাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে কবির বাড়ীতে আসছিলেন। কবি ফেরদৌসী ৯৪১ খৃষ্টাব্দে ইরানের তুস নগরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১০২০ খৃস্টাব্দে এখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। পৃথিবীতে যে কজন হাতে গোনা মহাকবি রয়েছেন তিনি তাদের অন্যতম। বিভিন্ন ভাষায় তার মহাকাব্য শাহনামা অনুদিত হয়েছে। বিশ্বের কাব্য প্রেমিকদের কাছে তিনি চিরসবুজ চির নবীন এক মহাপুরুষ।

সংশ্লিষ্ট বই