লেখক ও বই পরিচিতি
অপরাজেয় আশা ও অন্তহীন বেদনার ভস্ম থেকে উঠে আসা জীবনলিপি যার আঙুলের গাঢ় চুম্বনে কবিতা হয়ে যায়, তিনিই কবি আসাদ মান্নান। আসাদ মান্নান সমুদ্র-সন্তান। হাতে তার জলের সানাই। কুয়াশা উপেক্ষা করে যে-আশাবাদী মানুষগুলো স্বপ্নজয়ের প্রত্যাশা নিয়ে পথ চলে, কবি আসাদ মান্নান তাদেরই ভাষ্যকার। তার প্রকৃতি, প্রেম, সংগ্রাম ও শোকের শ্লোক এমন এক সুন্দর নির্জনতা নির্মাণ করে, যেখানে বসে দুঃশাসনের বর্বরতা ও দুর্বিনীত নাগিনির নির্মম ছোবল ভুলে থাকা যায়। প্রেমের মহিমা কীর্তনে আসাদ মান্নান ক্লান্তিহীন, বিদ্রোহের দ্রোহীপঙুক্তি-সৃজনেও অত্যন্ত তৎপর তিনি। বিনয়ী হয়েও অন্যায় ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কতখানি বিদ্রোহী হওয়া যায়—কবি আসাদ মান্নান আত্মপ্রকাশের শুভ মুহূর্ত থেকেই তা পাঠককে জানিয়ে দিয়েছেন। বিংশ শতাব্দীর আট দশকের পঙ্কিল পরিপ্রেক্ষিতে যারা বাংলাদেশের কবিতায় বাঁক বদলের চেষ্টা করে এখনো সক্রিয় আছেন—কবি আসাদ মান্নান তাঁদের মধ্যে প্রখর-পুরুষ। তাঁর প্রজ্ঞা, নন্দনতত্ত্ব, কাব্য নির্মাণকলা স্বতন্ত্র ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। অব্যক্ত আবেগকে চিত্রকল্পের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে প্রকাশ করার অপার্থিব দক্ষতা তিনি অনায়াসে প্রদর্শন করেন। ত্রিশের কবিদের মধ্যে আসাদ মান্নানের মানসভূমিতে সর্বাধিক জলসিঞ্চন করেছেন সম্ভবত জীবনানন্দ দাশ। বুদ্ধদেব বসুর মনোরঞ্জনী শব্দ-প্রয়োগ, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের বিশুদ্ধ শিল্পপ্রয়াস এবং বিষ্ণুদের মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি আসাদ মান্নানের কবিতায় অভূতপূর্ব ঐক্য নিয়ে আবির্ভূত হয়। চির অভিমানী প্রেমিকের আরক্তিম অধর কী অসামান্য বিক্ষোভ দেখাতে পারে তিনি তা দেখিয়েছেন। আসাদ মান্নান প্রকৃতপক্ষেই একজন ‘বড় কবি’। তার বড়ত্ব বুঝতে হলে দৃষ্টিসীমা দিগন্ত পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা দরকার। ক্ষুদ্র দৃষ্টি দিয়ে যেমন বৃহৎ বস্তু। পরিপূর্ণভাবে অবলোকন অসম্ভব, তেমনি আসাদ মান্নানকে বুঝতে হলেও কবিতার একনিষ্ঠ অনুরাগী হওয়া প্রয়োজন। বোধহীন, অনভিজ্ঞ পাঠকের জন্য আসাদ মান্নানকে আবিষ্কার করা সম্ভব নয়। ধৈর্য ধরে, একটু সময় নিয়ে মুখোমুখি না-হলে তাঁর কবিতা হৃদয় মেলে কথা বলে না।
‘দেশপ্রেম’ আসাদ মান্নানের কবি-স্বভাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবণতা। তাঁর দেশপ্রেমের স্বরূপ বুঝতে হলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু ও পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাস জানা দরকার । বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ নানাভাবে তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হন।
অন্ধকারাচ্ছন্ন সেই পঁচাত্তরেই যে-কজন কবির কলমে বঙ্গবন্ধুর অগ্নি-উগারী নাম উচ্চারিত হয়েছিল— আসাদ মান্নান তাদের অন্যতম। যেদিন বেশ্যার ছেলের হাতে বাংলার ইতিহাস খুন হয়, সেদিনই তিনি টুঙ্গিপাড়ায় ‘বঙ্গভবন’ নির্মাণের স্বপ্ন দেখেন। দীর্ঘকাল পরে হলেও টুঙ্গিপাড়া বাঙালির তীর্থভূমিতে পরিণত হয়েছে—এটাই বা কম কী?
এলিজি মুজিব নামে কাব্যগ্রন্থে একইসঙ্গে স্বাপ্নিক ও পিতৃহত্যার প্রতিশোধে জ্বলে ওঠা সন্তানের অপূর্ব অভিযান রচিত হয়েছে । বাংলাদেশের কবিতা এখন আকালের মধ্য দিয়ে তার যাত্রাপথ অতিক্রম করছে। নিষ্ফলা মরুভূমিতে মরূদ্যান তৈরি করতে নিঃশঙ্ক ও নিবিষ্ট মনে শব্দ বুনে চলেছেন। আত্মমগ্ন, লাজুক, নম্র আসাদ মান্নান। যতদিন আসাদ মান্নানের মতো খাটি কবি বাংলার বুকে সদর্পে বিচরণ করবেন, ততদিন বেঁচে থাকবে বাংলা কবিতা। বাংলার কবিতামুগ্ধ সহজ মানুষেরা তার হাতে হাত রেখেই বেদনার নীল উপত্যকা থেকে ফিরে যাবে কাকলিমুখর অরণ্যের মর্মরিত সবুজের অনিন্দ্র ডেরায়।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সসহ স্নাতকোত্তর কবি আসাদ মান্নানের জন্ম ১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার সাতঘরিয়া গ্রামে।
পেশাগত জীবনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য হিসেবে জনাব আবদুল মান্নান (কলমি নাম আসাদ মান্নান)। সচিব হিসেবে অবসর গ্রহণের পর বর্তমানে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবে কর্মরত।
সৈয়দ জাহিদ হাসান কবি ও সমালোচক
আসাদ মান্নান এর এলিজি মুজিব নামে এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 170.00 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Elegy Mujib Name by Asad Mannanis now available in boiferry for only 170.00 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.