"দৃষ্টিপাত" বইয়ের ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
দৃষ্টিপাত বইটির ঐতিহাসিক গুরুত্বও রয়েছে। ইতিহাসের এক যুগসন্ধিক্ষণের আভাস পাওয়া যায় এই বইয়ে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে যখন ব্রিটেনের একের পর এক সামরিক পরাজয় ঘটছিল ও কলােনিগুলাে হস্তচ্যুত হচ্ছিল ক্রমান্বয়ে, সে-সময় ভারতবর্ষের স্বাধিকার আন্দোলন আন্তর্জাতিক নেতৃবর্গের সহানুভূতি ও সমর্থন লাভ করে। একপর্যায়ে প্রায় বাধ্য হয়ে স্বাধীনতাকামী ভারতবর্ষের প্রতি কঠোর প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ব্রিটেন ও ভারতবর্ষের বিরােধ নিরসন এবং ভারতবর্ষের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সমস্যা সম্পর্কে একটি ন্যায়সঙ্গত ও চূড়ান্ত মীমাংসা করার লক্ষ্যে ভারতীয় নেতাদের সম্মতি সংগ্রহের জন্য মন্ত্রিসভার একটি প্রস্তাব ভারতে পাঠান। আলােচনায় মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তিটি ছিলেন ওয়ার ক্যাবিনেটের সদস্য, ভারতবর্ষের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস। দৃষ্টিপাত-এর সংকলয়িতার নিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি এ বই-এর লেখক বিলেতে ব্যারিস্টারিতে অধ্যয়নরত একজন বাঙালি ছাত্র। ক্রিপসের আলােচনার প্রাক্কালে বিলেতের একটি প্রাদেশিক পত্রিকার নিজস্ব সংবাদদাতা হিসেবে তিনি দিল্লিতে আসেন। কাজেই দৃষ্টিপাত বইটির প্রধান পটভূমি হচ্ছে এই ক্রিপস-এর মিশন। এর পাশাপাশি অন্যান্য শাখা-কাহিনী, মন্তব্য, বিশ্লেষণ, ভ্রমণবৃত্তান্ত নিয়েই পুরাে বইটি লিখিত হয়েছে।
যে কুশলতার সাথে তিনি তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ব্রিটিশ স্বাধিকার নিয়ে ভারতীয়দের প্রত্যাশা ও দুশ্চিন্তা, কূটনীতি ও সমসাময়িক ঘটনা-পরম্পরা বর্ণনা প্রকোষ্ঠটি রহস্যময়। এটি এমন অবচেতন দোষ কিংবা গুণ ধারণ করে— যার সম্বন্ধে ওই ব্যক্তি বা অন্যদের ন্যূনতম ধারণা নেই।
হয়তাে আধারকারের চরিত্রে এমন কোনাে ব্যর্থতা ছিল— যা সুনন্দাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল কিন্তু যা ছিল স্বয়ং আধারকারের বুদ্ধির অগম্য। সুনন্দা প্রসঙ্গে এসে আমাদের সংযত লেখক স্বয়ং ক্ষিপ্ত হয়ে নারীজাতির হৃদয়হীনতা সম্পর্কে চোখাচোখা মন্তব্য করেছেন, যা বেশ পাঠকপ্রিয়তা বা পুরুষপ্রিয়তা লাভ করেছিল। কিন্তু এ আসলে ব্যক্তির হৃদয়হীনতা কিংবা দুজনের সম্পর্কের রহস্যময়তা— যার জন্য কোনাে জাতিকে দায়ী করা ঠিক নয়।
একটি ইউরােপীয় রূপকথাতে বর্ণিত হয়েছিল এক অত্যাশ্চর্য রূপক কাহিনী। এক রাজা মৃগয়াতে বের হবার পর পথে খুব সাধারণ এক তরুণীর দেখা পান এবং রাজা তার প্রেমে পড়েন। তিনি তাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন রাজপ্রাসাদে, বিয়ে করবেন বলে। তরুণী রাজপ্রাসাদে এসে সম্ভবত ভয়ে ও মানসিক আতঙ্কে মারা যায়। কিন্তু কী আশ্চর্য, রাজা সংকল্পচ্যুত হন না। বিয়ে করে বসেন ওই মৃত মেয়েটিকেই। সারা রাজ্য ঘৃণা ও ধিক্কারধ্বনিতে ভরে ওঠে।
শবদেহের হাতে ছিল একটি আংটি। সেই আংটি হস্তগত করেন রাজার এক সভাসদ। এর পরপরই হঠাৎ করেই রাজা ঘৃণাভরে মৃতদেহের কাছ থেকে দূরে সরে আসেন এবং সেটি সৎকার করার নির্দেশ দেন। তারপর অনুসরণ করেন আংটি-পরিহিত ওই সভাসদকে। সভাসদটি মান ও প্রাণভয়ে রাজপ্রাসাদ থেকে পালায়। পালিয়ে এসে পৌছয় এক দিঘির কাছে। রাজাও তার পিছু নিয়ে পৌছান দিঘির পারে। সভাসদের আংটিটি অসাবধানে দিঘির পানিতে পড়ে যায়। রাজা সভাসদকে উপেক্ষা করে ওই দিঘির পানিতে নেমে পড়েন— পদ্মফুলের অনিন্দ্য ঝাড় ছিল সেখানে। কলুষিত রাজা শেষপর্যন্ত সৌন্দর্যের পায়ের কাছে এসে সুন্দরের প্রেমে শুদ্ধ হয়ে আত্মাহুতি দেন।
এখন প্রেম যদি হয় সেই আংটি, তার ধারক বা বাহক এখানে হতে পারে অতি তুচ্ছ, বা অতি উচ্চ— এতে সেই আংটির মূল্যে হেরফের হয় না। কিন্তু আধারকার শুধু আংটির ধারককে নয়, আংটিটিকেও ঘৃণা করতে শুরু করেন— যার পরিণতিতে তিনি চির-একাকিত্ব বেছে নেন।
যার বর্তমান আছে, অতীত বা ভবিষ্যৎ নাই—তিনি সাম্প্রতিক। যার অতীত আছে, কিন্তু বর্তমানকে যিনি ধারণ করতে পারেন না, তিনি সেকেলে। যিনি অতীত বর্তমান দুটোকেই মূল্য দেন তিনি আধুনিক। যিনি ভবিষ্যৎকালেও আধুনিক তিনি চিরায়ত।
“দৃষ্টিপাতে” চিরায়ত কালের কণ্ঠস্বর শােনা যায়।
যাযাবর এর দৃষ্টিপাত এখন পাচ্ছেন বইফেরীতে মাত্র 191.25 টাকায়। এছাড়া বইটির ইবুক ভার্শন পড়তে পারবেন বইফেরীতে। Dristipat by Zazaboris now available in boiferry for only 191.25 TK. You can also read the e-book version of this book in boiferry.