সাত ঘণ্টা আকাশচারণের পরে উইলিংডন এয়ারপাের্টে ভূমি স্পর্শ করা গেল। বিমানগটি আকারে বৃহৎ নয়, কিন্তু গুরুত্ব প্রধান। পূর্ব গােলার্ধে যুদ্ধ শুরু হও ইঙ্গ-মার্কিন ও চৈনিক সমর-বিশারদদের এটা আগমন ও নিষ্ক্রমণের পাদপাঠ। প্রাত্যহিক পত্রিকার সংবাদস্তম্নে এর বহুল উল্লেখ । আমাদের বাহনটি ডালা পাবল। ইঞ্জিন জাতীয় । খেচর ফুলপঞ্জীতে ফ্লাইং, ফোটেল ও লিবারেটার প্লেনের পরেই এর স্থান। নিকষ না হলেও ভঙ্গকুলীন বলা যেতে পারে। এর আকার বিশাল, গর্জন বিপুল ও গতি বিদায়। | পুরাণে পুষ্পক রথের কথা আছে। তাতে চেপে স্বর্গে যাওয়া যেত। আধুনিক বিমান রথের গন্তব্যস্থল মর্তলােক । কিন্তু সারথি নিপুণ না হলে যে-কোন মুহূর্তে রথীদের স্বর্গপ্রাপ্তি বিচিত্র নয়। বিমানটির কর্মকর্তা বাঙালি। লােক বয়সে তরুণ এবং ব্যবহারে অমায়িক। এর স্ত্রী মণিকা মিত্রের সৌন্দর্য-খ্যাতি নয়াদিল্লীর অনেক বঙ্গললনার মর্মবেদনার কারণ। | কাঠের সিড়ি বেয়ে মাটিতে নামতে হয়। বিস্ময়কর এক অনুভূতি। এই তাে সকালবেলায় ছিলেম কলকাতায়। দমদমের পথে গ্যাসের আলােগুলি সব তখনও নেভেনি। ফুটপাথে খাটিয়ার উপরে আপাদমস্তক চাদর মুড়ি দিয়ে হিন্দুস্থানী দোকানদারেরা নিদ্রামগ্ন, কর্পোরেশনের উড়ে কুলীরা জলের পাইপ থেকে গঙ্গোদকের দ্বারা রাজধানীর বহুজনমর্দিত পথগুলির ক্লেদমুক্তির আয়ােজনে ধাবমান। সাইকেলের হাতলে ভূপীকৃত খবরের কাগজ চাপিয়ে হকাররা যাচ্ছে, এ দুয়ার থেকে ও দুয়ারে। সদ্যগত রজনীর সুযুক্তির রেশ ধরণীর বুক থেকে তখনাে নিঃশেষে মুছে যায়নি। আকাশের কৃষ্ণপক্ষের খণ্ডিত চাঁদ দূরবর্তী তরুশ্রেণীর শীর্ষে রুগ্না রমনীর নিশ্ৰত মুখের মতাে দুতিইনি। মিটমিট করে জ্বলছে গুটি কয়েক মুমূধু তারা। পথের পাশে গাছের ডালে ডালে পাখিদের কাৰুলি শুরু হয়েছে ধীরে ধীরে! দমদম বিমানঘাটির দূরবর্তী পাটকলের উতুঙ্গ চিমনিটা আকাশের পটে আঁকা আবছা ছবির মতাে দেখাচ্ছে। বিমান কোম্পানির সাদা ধবধবে ইউনিফর্ম পরিহিত শ্বেতাঙ্গ কচিারীরা টিকিট পরীক্ষা ও মাল ওজন ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্তসমস্ত। দূরে বারাসতের রাস্তা দিয়ে চলেছে সারিবন্দী মন্থরগতি গরুর গাড়ি, বাতাসে ভেসে আসছে তাদের তৈলতৃষিত চাকার ক্ষীণ আর্তনাদ।